যেভাবে শিশুদের স্কুলে ফেরাল ডেনমার্ক

ডেনমার্কের শিশুরা এক মাস আগেই স্কুলে ফিরে গেছে। তাদের স্কুলে ফেরার বিষয়টি এখন ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য আস্থার বিষয় হতে পারে।

ডেনমার্ক বেশির ভাগ দেশের তুলনায় আগেভাগেই লকডাউন সহজ করতে সক্ষম হয়েছিল। কারণ, সেখানে করোনায় মৃত্যুর ঘটনা অনেক কম। সেখানে ৫৬১ জনের মতো মানুষ ভাইরাসের সংক্রমণে মারা গেছে। দেশটির সরকার নিশ্চিত হতে পেরেছে যে সেখানে সংক্রমণের হার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। তাঁরা করোনার বিস্তারকে ‘নিয়ন্ত্রণে’ রাখতে পারার ঘোষণাও দিয়েছে।

মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই দেশটির মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফেরানো হয়। আইটিভি ও ডেনমার্কের দ্য লোকাল ডটডিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, কোপেনগেহেনের ৭২৫ শিক্ষার্থীর কোরসাগার স্কুলের শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে মানিয়ে নিয়েছে। এখনো কেবল একজন শিক্ষক কোভিড -১৯ এর লক্ষণ আছে বলেছিলেন এবং পরীক্ষার ফল নেগিটিভ এসেছে।

বিদ্যালয়ে সরকারের কঠোর নির্দেশিকা রয়েছে, যা প্রতি সপ্তাহে হালনাগাদ হয়। এর মধ্যে প্রতিদিন অন্তত পাঁচ বার হাত ধোয়া বাধ্যতামূলক এবং সামাজিক দূরত্বের জন্য দুটি ডেস্কের মধ্যে দুই মিটার দূরত্ব থাকতে হবে, যদিও এটি এখন কমিয়ে এক মিটার করা হয়েছে। ধীরে ধীরে শিশুদের মধ্যে সামাজিকীকরণের পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে দুপুরের খাবার অবশ্যই প্যাকেট করে বাসা থেকে আনা হবে। স্টাফ ক্যান্টিনের রান্নাঘর বন্ধ রয়েছে এবং শিক্ষকেরা তাদের নিজস্ব কফি বা পানীয় আনেন। টয়লেটে নম্বর সিস্টেম করা হয়েছে। একেক ক্লাসের শিক্ষার্থী একেক টয়লেট ব্যবহার করবে। এতে একই টয়লেট সবার ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকবে।

১৫ ই এপ্রিল স্কুলটি প্রথম যখন খোলা হয়, তখন শিক্ষার্থীদের ছয়জনের গ্রুপে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এখন ২৮ জনকে অবাধে মেশার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বা সম্পূর্ণ ক্লাস একত্রে মিশতে পারে। লেখাপড়ার কথা ভেবে অতিরিক্ত শিক্ষকও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।শ্রেণিকক্ষের আকার ছোট করে শিক্ষকরা যাতে দূরত্ব রাখতে পারেন সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জিম বা রান্নাঘরকেও ক্লাসরুম বানানো হয়েছে যাতে অতিরিক্ত ক্লাস বানানো যায়।

বাচ্চাদের সুরক্ষিত রাখা এবং পিতামাতা ও শিক্ষকদের মধ্যে আস্থা তৈরি করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে । সরকার মেনে নিয়েছে যে, এ সময়ে শিক্ষা এবং পরীক্ষার ফলাফল গৌণ।

জিসিএসই পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে এবং জরুরি শিক্ষার আইন পাস হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বদ্ধ জায়গার চেয়ে উন্মুক্ত স্থান নিরাপদ বেশি। তাই শ্রেণিকক্ষে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার চেয়ে বেশি সময় বাইরে ব্যয় করা হচ্ছে। এখন অভিভাবকেরাও দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারছেন। তারা ছেলেমেয়েদের স্কুলে ফেরাতে পেরে খুশি। শিক্ষকেরা বলছেন, তারা সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত কড়া বিধি নিষেধ মানছেন।
সরকার ও স্কুল কর্তৃপক্ষের মধ্যকার পারস্পরিক আস্থার ফলে শিক্ষার্থীদের স্কুলে প্রত্যাবর্তন সফল হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *