পোশাক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষনা মুনাফালোভী মালিকদের নগ্ন চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ- টিইউসি।

বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (টিইউসি) সভাপতি সহিদুল্লাহ চৌধুরী ও সাধারন সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান এক বিবৃতিতে বলেন, বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক গার্মেন্টস শিল্পে জুন মাস থেকে শ্রমিক ছাঁটাই হবে বলে প্রকাশ্যে যে ঘোষনা দিয়েছে তাতে আমাদের দেশের মুনাফালোভী মালিকগোষ্ঠীর সামন্তবাদী ও নগ্ন চরিত্রই প্রকাশ পেয়েছে।

কিছুদিন আগে গার্মেন্টস মালিকদের সাথে শ্রম প্রতিমন্ত্রীর বৈঠকে সিদ্বান্ত হয়েছিল মহামারী চলাকালীন কোন শ্রমিককে চাকুরীচ্যুত করা হবেনা। কোন কারখানা বন্ধ করা হবেনা। একই সাথে করোনার কারনে যেসব শ্রমিক অনুপস্থিত থাকবে তাদরকে ৬৫% মজুরী পরিশোধ করা হবে। শুরুতেই সরকার শ্রমিকদের এপ্রিল, মে, জুন এই তিন মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য মাত্র ২% সুদে মালিকদেরকে ৫ হাজার কোটি টাকা প্রদান করেছিল। কিন্তু অনেক মালিক সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রমিকদের মজুরী পরিশোধ করেনি এবং অনেক মালিক শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করে তাদের কারখানা বন্ধ রেখেছে। আমরা দেখেছি করোনার মধ্যেই মালিকরা তাদের ব্যবসার স্বার্থে কারখানা খুলে দিয়ে শ্রমিকদেরকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজে যোগদান করতে বাধ্য করেছে। যার কারনে প্রায় তিন শতাধিক গার্মেন্টস শ্রমিকসহ করোনা সংক্রমণ দেশব্যাপী ছড়িয়েছে।
এখন আবার চাহিদা কমার অজুহাত দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষনা দিয়েছে। মহামারীর কারনে যেখানে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ সেখানে সেখানে বিদেশী ক্রেতাদের চাহিদা কমে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষনা শুধু অমানবিক ও অবিবেচনাপ্রসূত নয়, এই সিদ্বান্ত সম্পুন্ন অযৌক্তিক এবং শ্রমিক ও দেশের স্বার্থ বিরোধী। মালিকরা তাদের হীন স্বার্থে একবার শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেছে, আবার কারখানা বন্ধ করে শ্রমিকদেরকে ফেরত পাঠিয়েছে, আবার কারখানা চালু করেছে। এরপর কারখানা লে-অফ,ছাঁটাই সহ শ্রমিকদের মজুরী নিয়েও টালবাহানা করেছে। এখন আবার তাদের বিত্ত বৈভব টিকিয়ে রাখার জন্য শ্রমিকদের চাকুরীচ্যুতির সিদ্বান্ত নিয়েছে।
এতে মালিকরা দেশে তাদের ক্ষমতার দৌরাত্ম্যও জাহির করছে বলে আমরা মনে করি। আশির দশক থেকে শুরু হাওয়া এই শিল্পের মালিকরা শ্রমিকদের রক্ত ঘামের বিনিময়ে একটি কারখানা থেকে বহু কারখানা এবং হাজার হাজর কোটি টাকার মালিক হয়ে দেশে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। আজকে শ্রমিকদের এই দুঃসময়ে তাদের হাজার কোটি টাকা লাভের অংশ থেকে শ্রমিকদের আপদকালীন মজুরী দিতেও রাজি হচ্চেনা। আমরা মালিকদের এহেন আাচরণের ধিক্কার ও নিন্দা জানাই। একইসাথে গার্মেন্টস শ্রমিকদের চাকুরী ও তাদের বেতন-ভাতা নিশ্চিৎ রাখার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছি। অন্যথায় গার্মেন্টস সেক্টরসহ দেশের শ্রম অঙ্গনে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে এর দায় দায়িত্ব সরকার ও মালিকদের নিতে হবে।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *