পটভূমি : ১৯৮৪ সাল
কাজের আশাই গ্রাম ছেড়ে রওনা দিলাম ঢাকার উদ্দ্যেশে,তেজগাঁওয়ে ফারকোজ গার্মেন্টেসে কাজোও একটা জুটে গেলো গার্মেন্টস কারখানায়।আগে থাকতেই টেলারিং এর কাজ জানা ছিলো তাই চাকরি পেতে তেমন বেগ পেতে হয়নি। কারখানার গেটে যেতেই কারখানার মালিক নিজে আমাকে ছোমেরে তুলে নিয়ে গেলেন ভিতরে।
চার শত টাকা মাসিক বেতনে অপারেটরের চাকরি, এ কেমন নিয়োম চাকরির জন্য দরখাস্ত নাই নিয়োগ পত্র নায় গেটে গেলেই চাকরি।“এখানে বলে রাখা দরকার এর আগে বি টি এম সি র রাজশাহী টেক্সটাইল মিলে তিন বৎসর শ্রমিকের চাকরি করেছি তাই কিছুটা নিয়োম কানুন জানা ছিলো”।
ধিরে ধিরে সব কিছু পরিস্কার হতে লাগলো,এতো কারখানা নয় যেনো জেল খানা কাঁটাই কাঁটাই আট্টায় ভিতরে ঠুকতে হবে লেট হলে হাজিরা কাটা, কখন বের হবো ঠিক নাই রাত দশটাও হতে আবার সারা রাত থাকতে হতে পারে,টয়লেটে যেতে পাস লাগে বিনা পাশে টয়লেট গেলে শাস্থি হতে পারে যেমন ওভারটাইম কিম্বা সারা দিনের হাজিরা কাটা কখনো কখনো গায়েও হাত তুলে।কোন রকম ছুটিছাটার বালাই নায় সে সাপ্তাহি ছুটি হোক অর সরকার ঘোষিত ছুটিই হোক অসুক হলেও ছুটি মিলতো না, এক কথাই কাজ করলে মুজুরি না করলে নাই,হ তবে শুধু দুই ঈদে ছয় দিন এই ছুটি টা দিতো।চাকরির কোন ঠিক ঠিকানা নাই সামান্য কারনে যে কোন সময় চাকরি চলে যেতে পারে সে সময় গার্মেন্টসে চাকরি পেতে যেমন সহজ ছিলো যেতেও তেমনি সহজ।দিন শেষে ছুটি করে যখন বাসাই যেতাম মনের ভিতর একটাই ভয় কাজ করতো কালকে চাকরি থাকবে তো?
কাজ শেষে বাসাই এসে এটু আরাম করবে তার উপায় নায় বসতির মধ্যে বাসা কবুতরের খোপের মত লাইন করে শাজানো বাসা, প্রায় সময় কারেন্ট থাকে না,পানির সাপ্লাই থাকেনা দিনে এক বার পানি দেয় বাড়ি ওয়ালা, রান্নার জন্য লাইন টয়লেটের জন্য লাইন।সকালে ঘুম থেকে উঠে চুলার দখরের লড়াই, দেরি করলে সেদিন আর সকালের খাওয়া হবেনা না খেয়ে অফিসে যেতে হবে।
এই ভাবে কি জিবন চলে না চলতে পারে ?এই সকল অনিয়োম দেখে মন বলে কিছু এটা করি কারো সাথে সেয়ার করবো তারো উপায় নাই।কাওকে চিনিনা জানিনা সে যদি ম্যানেজারকে বলে দেয় তো চাকরি নাই তাই চুপ করে থাকা ছাড়া উপায় দেখিনা। কিন্তু এই সকল অনিয়োম চোখে দেখে কি সহয্য করা যাই? সেই কবেই মাথার মধ্যে শ্রেনি সংগ্রাম আর মার্কবাদবাসা বাসা বেদেছে তাই তো চুপ থাকতে চাইলেই কি চুপ থাকা যাই । আমার পাসের অপারেটরকে একদিন বলেয় ফেল্লাম ভাই এ কেমন অফিস নিয়োম কানুন কিছুই নাই কেওউ কোন কথা বলেনা মুখ বুজে সবাই সয়ে চলেছে।দেখলাম সেও অগ্রহি এক শুক্রবারে ছুটির পর আমাকে নিয়ে গেলেন গুলশান১ এ ফেডারেশন অফিসে।সেটা আফলির বাংলাদেশর অফিস ছিলো অনেক আলচনা করলেন নেতারা কথা হলো চা বিস্কুট এলো অনেকের সাথেই পরিচয় হোলো তাদের মধ্যে এখন নাজমা আক্তার কেই শুধু মনে আছে।যখন উঠে আসবো তখন আমার হাতে পাঁচ টাকা ধরিয়ে দিলেন ভাড়া বাবদ।মনে মনে ভাবলাম এরা কি করে শ্রমিকের হয়ে কাজ করবে? আমরা তো ট্রেড ইউনিয়নকে চান্দা দিয়েছি আর এরা শ্রমিককে টাকা দিচ্ছে পাচ্ছে কোথায়? মনে মনে এদের দিয়ে হবে না, তার থেকে বড়ো বিষয় হলো গার্মেন্টসে৮০% হলো নারী শ্রমিক যার বেশির ভাগই হলো গ্রাম থেকে আসা সরল সহজ অশিক্ষীত অসহায় নারি।তারা অনেক আগেই সংসারের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে প্রতিবাদ করতে ভুলে গেছে।নির্জাতনের শিকার হয়ে সংসার থেকে বিতাড়িত হয়ে শহরে আসতে বাধ্য হয়েছে যদি বাসা বাড়িতে কাজ করে নিজে খেতে পাই সন্তানদের মুখে দু মুঠো খাবার তুলে দিতে পারে সেখানেও অত্যাচার নির্জাতন মেষে কাজ পেয়েছে গার্মেন্টসে।আর আছে ঐ সব নারিরা সমাজ সংসারে যাদের ঠাই হয়নি ঠেলে দিয়েছিলো অন্ধকার জগতে।সভ্য সমাজে তাদের দাড়ানোর কোন যাইগা ছিলোনা তাই বেছে নিতে হয়েছিলো অন্ধরের পথ।এটু ভালো ভাবে সন্মানের সাথে বেঁচে থাকার জন্য তারা গার্মেন্টস কারখানায় কাজ নিয়েছে। গার্মেন্ট মালিকরা কারখানাই চাকরি দিয়ে সন্মানের সাথে সমাজে বাস করার সুযোগ করে দিয়েছে তাই মালিকদের সকল অত্যাচার মুখ বুঝে সয্য করে আছে।কোন কারনে যদি চাকরি চলে যাই তা হলে আবার রাস্থায় গিয়ে দাড়াতে হবে সেই ভয়ে কেহো কোন প্রতিবাদ করেনা।
বেতন কম তাতে কি রাত দিন কাজ পুসিয়ে নেবো কারো কাছে হাত পাত্তে হবেনা। হেলপার দুই শত টাকা ওপারেটর চার শত টাকা মাসিক বেতন ওভারটাইম সহ যা পাই তাই দিয়ে নুন ভাতে চলে যাবে। মালিকরা কাজ না দিলে কি করে খেতাম? গার্মেন্ট যদি না থাকতো কি করতাম? সংসার কি করে চলতো বলতে পারেন? এর কোন জবাব ছিলোনা আমার কাছে ছিলো জীদ যে করেই হোক অনিয়োম জুলুম নির্জাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে।
এরি মধ্যে দুই বৎসর পার হয়ে গেছে চাকরিও দুই বার পরিবর্ত করে ১৯৮৭ সালে এ্যসোসিয়েট গোর্মেন্টেসে প্যাটার্ন মাষ্টার হিসাবে চাকরিতে যোগদান করি।
লেখকঃ ইদ্রীস আলী, সভাপতি, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র