ঢাবিতে নির্বিচারে গাছ কেটে প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের প্রতিবাদে ছাত্র ইউনিয়নের মানববন্ধন

লকডাউনের সুযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) নির্বিচারে গাছ কেটে ক্যাম্পাসের প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন।

সোমবার (১৮ মে) বেলা ১১ টায় বাংলা একাডেমির সামনে এই মানববন্ধনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সংসদের নেতৃবৃন্দ বলেন, নির্বিচারে গাছ কেটে ক্যাম্পাসের প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করছে স্বার্থান্বেষী প্রশাসন।

মানববন্ধনে ছাত্র ইউনিয়ন ঢাবি সভাপতি সাখাওয়াত ফাহাদ বলেন, আমরা আজ থেকে পাঁচ বছর আগেও বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বুকের উপর রেললাইন বানাবেন না। আমাদেরকে বলা হয়েছে, এটা নাকী আমাদের ভালোর জন্যই। কোথায় সেই ভালো? তখন তারা বললো, মেট্রোরেলটা হতে দাও, স্টেশন আমরা করবো না। আর আজ আমরা দেখি, টিএসসিতে স্টেশন করার জন্য এই করোনার মাঝেই কি ব্যস্ততা! যাতে স্টুডেন্টরা ফিরে আসার আগেই সর্বনাশটা করে ফেলা যায়!

তিনি আরও বলেন, এই সরকার আমাদের ভালো চায় না। এই সরকার আমাদের না। আমাদের লড়াই, তাই এই সরকারের বিরুদ্ধে। অনেক জুলুম সইতে হবে, জেল হবে, ফাঁসি হবে, সরকারের তরফ থেকে অনেক নাটক সাজানো হবে। কিন্তু আমরা কোনো কিছুতেই থেমে যাবো না। কারণ, এই বিশ্ববিদ্যালয়কে, এই দেশকে, এই দেশের মানুষকে আমরা ভালোবেসেছি। এই পৃথিবীটাকে, আর স্টেশন বানানোর উদ্দেশ্যে কেটে ফেলা ওই গাছগুলোকে আমরা, ভালোবেসেছি।

মানববন্ধনে ঢাবি সংসদের সহ-সভাপতি জয় রায় বলেন, আপনারা জানেন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের এই করোনা চলাকালীন সময়েও হাজার হাজার টাকা ফি দিতে হবে, এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সেই ভাইবোনেরা আজ আন্দোলন করছে। ওই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির মালিক যেই বিজনেসম্যানরা, আমাদের সরকার চালায় যেই বড় বড় কোটিপতিরা, তারা এই আন্দোলনকে পাত্তা দিচ্ছে না কেনো জানেন? কারণ, ওই সেমিস্টার ফি তাদের এক ঘন্টার উপার্জনের সমান। তাদের কাছে আমরা হাতের ময়লা হয়ে গেছি, চাইলেই যেনো তারা ঝেড়ে ফেলে দিতে পারে। তারা নিজেরা লকডাউন পালন করছে এসি লাগানো প্রাসাদে বসে, গণভবন, বঙ্গভবন, নাট্যভবনে বসে, আর আমরা অপেক্ষা করছি যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুর। গার্মেন্টস শ্রমিকদের শত কিলোমিটার হাঁটিয়ে আনা হয়েছে।করোনার টেস্ট করাতে এসে এই শাহবাগে, পিজি হাসপাতালের সামনে অসহায় রোগীরা রাস্তায় পড়ে আছে, কাঁদছে, সেখানেই শুয়ে থাকছে পেপার বিছিয়ে। কেউ কেউ মারাও যাচ্ছে। মারা যাচ্ছে বাংলাদেশ।

মানববন্ধনে ছাত্র ইউনিয়ন ঢাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈম বলেন, আমরা যখন বলি, পৃথিবীটা মরে যাচ্ছে একটু করে করে, তখন আমাদেরকে উন্নয়ন আর অর্থনীতির সূচক দেখানো হয়। বলা হয়, পরিবেশ একটা গেলে আরেকটা আসবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমরা যখন বলি, আমার বিশ্ববিদ্যালয়কে তোমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো থাকতে দাও, বিশ্ববিদ্যালয় গাবতলী নয়, যে এখানে বাস ট্রাক থাকবে, বিশ্ববিদ্যালয় পল্টন নয়, যে এখানে যুবলীগের জন্মদিন করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় কোনো মাছের বাজার নয়, যে বাজার উচ্ছেদ করে মেট্রো রেলের পিলার বসাতে হবে, তখন আমাদেরকে জায়গার সংকট দেখানো হয়। বলা হয়, ঢাকা শহরে স্পেইস নাই কোনো। আর আমরা যখন বলি, চীন আর ইতালীতে হাজারে হাজারে মানুষ মরছে, তখন আমাদেরকে ভাড়া করা
টেলিভিশনের মাধ্যমে জানানো হয়, গরমের দেশে করোনা হয় না।

তিনি বলেন, যেই দেশের সরকার একটা কার্টুন আঁকার জন্য কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে গ্রেফতার করতে পারে, যেই দেশের সরকার বেনাপোল থেকে সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে ধরে নিয়ে আসার নাটক করতে পারে, সেই দেশের সরকার চাইলেই পারতো করোনার প্রস্তুতি নিতে, চাইলেই পারতো মেট্রো রেলের রাস্তা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরিয়ে নিতে। কিন্তু তারা তা করে নাই। কারণ আমাদের স্বার্থ তারা দেখে না। সাধারণ মানুষের ক্ষতি হলে তাদের কীই বা আসে যায়! এই যে মেট্রোরেল, এই মেট্রোরেল শেরাটন হোটেলের উপর দিয়ে যেতে পারে নাই। কারণ ওইখানে যায় বড়লোকেরা। মেট্রোরেল যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গলার উপর দিয়ে, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে চিন্তা করে গরীবেরা। এই মেট্রোরেলের রাস্তা থেকে দুইশো মিটার দূরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র। সেইখানে এখন করোনা রোগের টেস্টিং চলছে। ভাবুন! উচ্চতর গবেষণা কেন্দ্রের মাত্র দুইশো মিটার দূরে ধুলা বালু মাখা এক কন্সট্রাকশন।

তিনি আরও বলেন, এই সরকারের ক্ষমতার অভাব নেই, অভাব ইন্টেনশনের, সদিচ্ছার। এই সরকার চায় বিশ্ববিদ্যালয়কে জাহান্নাম বানিয়ে তুলতে, জাহান্নাম বানানোর জন্যই সে পড়তে আসা নিরীহ ফার্স্ট ইয়ারের একটা ছেলেকে চার বছরে পরিণত করে ছাত্রলীগের পোষা সন্ত্রাসীতে। জাহান্নাম বানানোর জন্যই একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে ছুরির মতো মেট্রোরেল চলে যায়।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *