গণহারে করোনা পরীক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার দাবিতে বাম জোটের মানব্বন্ধন

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি, ঈদের আগে ২০ মে’র মধ্যে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস প্রদান, ক্রয় কেন্দ্র খুলে খোদ কৃষকের কাছ থেকে সরকারী উদ্যোগে মোট উৎপাদনের ২৫% বোরো ধান ক্রয়, ত্রাণ নিয়ে চুরি-দুর্নীতি বন্ধ, রেজগারহীন সকলকে ত্রাণ সরবরাহ, গণহারে সকলের করোনা পরীক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত এবং আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, সামাজিক সুরক্ষা খাতে অগ্রাধিকার দিয়ে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবিতে মানববন্ধন-সমাবেশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।

সোমবার (১৮ মে) সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সামাজিক দূরত্ব মেনে এই মানববন্ধন-সমাবেশ করে বাম গণতান্ত্রিক জোট।

বাম জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাজ্জাদ জহির চন্দন, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশরেফা মিশু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য কমরেড আকবর খান, বাসদ (মার্কসবাদী)র কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য কমরেড মানস নন্দী, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের কমরেড হামিদুল হক ও ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড শামীম ইমাম প্রমুখ।

নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকারের চিকিৎসা ব্যবস্থার দেউলিয়াত্ব ও চরম ব্যর্থতা ফুটে ওঠেছে। সারাদেশে ত্রাণ তৎপরতায় বেশুমার চুরি, লুটপাট, দুর্নীতি ও দলীয়করণের সাথে ক্ষমতাসীনদের যুক্ত থাকার বিষয়টিও গণমাধ্যমে ও ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রকাশ করার অপরাধে সাংবাদিক, লেখক, কার্টুনিস্ট, নাগরিকদের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হয়রানীমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে জেলে পুরেছে।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ গ্রেপ্তারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করার দাবি জানান।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, সামনে ঈদ কিন্তু এখনও অনেক গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতনও দেওয়া হয়নি। মে মাসের বেতন নাকি দিবে জুন মাসে, অথচ শ্রমিকদের বেতন দেয়ার জন্য ২% সুদে মালিকদের ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে সরকার। সাধারণ ছুটি সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে সবেতন ছুটি হওয়ার কথা কিন্তু মালিকরা শ্রমিকদের ৬৫ ভাগ বেতন দেয়ার কথা বলছে, যা অন্যায় ও বেআইনী। শ্রমিকরা স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে থেকে উৎপাদনের চাকাকে সচল রাখছে। তাই ঈদের আগে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সকল শ্রমিকদের বকেয়াসহ চলতি মাসের পূর্ণবেতন ও বোনাস আগামী ২০ মের মধ্যে প্রদান করতে হবে।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ১০৪০ টাকা দরে কৃষকের কাছ থেকে আট লাখ মেট্রিক টন বোরো ধান কেনার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে হাওরের ধান কাটা শেষ হয়েছে। ২৬ এপ্রিল থেকে সরকারের ধান ক্রয় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ১০/১২ মে পর্যন্ত শুরু হয়নি নানা জটিলতার কথা বলে। বাস্তবে ফড়িয়া মধ্যসত্ত্বভোগী চাতাল মালিকদের ধান কেনায় সুবিধা দিতেই এই বিলম্ব।

সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি ইউনিয়নে কমপক্ষে একটি করে ক্রয় কেন্দ্র খুলে খোদ কৃষকের কাছ থেকে উৎপাদিত বোরো ধানের ২৫% ক্রয় করার দাবি জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার ধান কম কিনে চাল বেশি কিনলে লাভ হবে চাতাল মালিকদের।

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দেশব্যাপী লুটপাটের বিষয় উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, ত্রাণ নিয়ে সারাদেশে সরকারী দলের তথাকথিত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক লুটপাট, চুরির অভিযোগ উঠেছে। অবিলম্বে ত্রাণ চোরদের গ্রেপ্তার-বিচার এবং তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানিয়ে রোজগারহীন হতদরিদ্র সকলের ত্রাণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।

নেতৃবৃন্দ গণহারে সকলের করোনা পরীক্ষা এবং কোভিড, ননকোভিড সকলের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের দাবি জানান সমাবেশে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে জনকল্যাণ খাতে বাজেটে বরাদ্দ প্রতি বছর কমে, তাই এবারে করোনা দুর্যোগে দেখা গেছে স্বাস্থ্য সেবা কত অবহেলিত, ফলে আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ না বাড়ানোর হলে জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা কোনটাই নিশ্চিত করা যাবে না।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *