ঈদের পূর্বে শ্রমিকদের সকল বকেয়া পাওনা এবং আইন অনুসারে বেসিকের সমান ঈদ বোনাস পরিশোধের দাবিতে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র আজ ১৫ মে ২০২০, শুক্রবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে।
কর্মসূচী থেকে আগামী ২০ মে ২০২০ এর মধ্যে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেসিকের সমান ঈদ বোনাস এবং মার্চ-এপ্রিল মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করার দাবি জানানো হয়। বক্তারা একইসাথে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুসারে করোনা মহামারীকালে সকল ছাটাইকৃত শ্রমিককে পুনর্বহাল, শ্রমিকের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কর্মরত অবস্থায় করোনা সংক্রমিত হলে সুচিকিৎসা ও উপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানান।
গার্মেন্ট টিইউসির সভাপতি মন্টু ঘোষ এর সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম মিন্টুর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কার্যকরি সভাপতি কাজী রুহুল আমীন, সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার, প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান শামীম, আশুলিয়া অঞ্চলের সভাপতি সাইফুল্লা আল মামুন,
আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মঞ্জুর মঈন, রেদোয়ানটেক্স কারখানার শ্রমিক মোশাররফ হোসেন, ড্রাগন সোয়েটার কারখানার শ্রমিক আমিনুল ইসলাম, প্যারাডাইস ক্যাবল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে শ্রমিকনেতা মন্টু ঘোষ বলেন, দেশের গার্মেন্ট শিল্পের মালিকরা শ্রমিকদের শ্রমে ঘামে এক লাইনের কারখানা থেকে দশটা কারখনার মালিক হয়েছে। তবুও তাদের দুঃখের দিন শেষ হয় না। তারা মহামারীর সুযোগ বুঝে শ্রমিকের পাওনা টাকা মেরে দেয়ার চক্রান্ত করছে। কিন্তু ষড়যন্ত্র করে শ্রমিকের ভাগের টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ তাদের দেয়া হবে না।
তিনি আরো বলেন, যেই দেশ সমূহের রাষ্ট্রক্ষমতায় শ্রমিক শ্রেণির সরকার আছে সেখানে শ্রমিক এবং সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। আর আমাদের দেশে সরকার প্রধান সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে, আবার তারই লোকেরা শ্রমিকদের ডেকে বলে কাজ করো। তিনি শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত দাবি মেনে নেয়ার জন্য মালিক ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশে শ্রমিকনেতা কাজী রুহুল আমীন বলেন, শ্রমিকরা তার গোটা জীবনী শক্তি ক্ষয় করে মালিকদের সকল ভোগ বিলাসের অর্থ যোগান দেয়, অথচ এই মহামারী পরিস্থিতিতেও শ্রমিকের একমাসের মজুরির দায়িত্ব মালিকরা নিতে পারে না। তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, শ্রমিককে পূর্ণাঙ্গ বোনাস না দিয়ে যদি ঈদের দিন তাদের রাস্তায় নামানো হয় তাহলে শ্রমমন্ত্রী ও মালিক সমিতির নেতাদেরও রাস্তায় ঈদ করতে হবে।
সমাবেশে শ্রমিকনেতা সাদেকুর রহমান শামীম বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্য করে শ্রমিক ছাটাই অব্যাহত আছে এবং কারখানায় শ্রমিকের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে না। ফলে আক্রান্ত শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। তিনি বলেন, আক্রান্ত হলে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ক্ষতিপূরনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। গার্মেন্ট শ্রমিকরা আক্রান্ত হলে তার সুচিকিৎসা এবং ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
গার্মেন্ট টিইউসির সাধারণ সম্পাদক শ্রমিকনেতা জলি তালুকদার বলেন, মালিকরা এপ্রিলের বেতন ৩৫ শতাংশ কেটে নিয়েছে, এখন বোনাস কেটে রাখার পাঁয়তারা চলছে। মালিকরা এই করোনা মহামারী পরিস্থিতিকে একটা সুযোগ হিসেবে নিয়ে শ্রমিক ঠকিয়ে মুনাফার হার বৃদ্ধি করতে ন্যাক্কারজনক সব কাজে লিপ্ত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এই মহা দুর্যোগকালে মালিকরা শ্রমিকদের আন্দোলনে ঠেলে দিয়েছে। এত লম্বা সময়ধরে লাগাতারভাবে প্রতিদিন পাঁচ সাতটা কারখানার শ্রমিক রাস্তায় থেকেছে এমন অতীতে কখনো হয়নি। তিনি মালিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সুযোগ বুঝে শ্রমিক ঠকানোর পথ ত্যাগ করে ২০ মে’র মধ্যে পূর্ণাঙ্গ বোনাস ও বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করুন।