১লা মে বিশ্ব শ্রমিক দিবস বা মে দিবস। শ্রমজীবী মেহনতি মানুষদের দিন। মে দিবস হাজার হাজার শ্রমিকের পথ চলা মিছিলের কথা, একই পতাকা তলে দাঁড়িয়ে আপোষহীন সংগ্রামের কথা। মে দিবস দুনিয়ার সব শ্রমিকদের এক হওয়ার দিন। কার্যক্ষেত্রে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের দিন। এবছর মে দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো (শ্রমিক- মালিক ঐক্য গড়ি) সোনার বাংলা গড়ে তুলি । এমন প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দেশে প্রতিবছর মহান মে দিবস পালিত হয় ।কিন্তু কোভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি পালন ও সামাজিক দূরত্ব বজার রাখার জন্য এ বছর সকল ধরণের আনুষ্ঠানিকতা বাতিল ঘোষণা করেছেন
মে দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। বাণীতে শ্রমজীবী মানুষসহ দেশের সকল মানুষদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাণীতে বলেন, সমগ্র বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের বাংলাদেশেও এই করোনা ভাইরাস রোগটি হানা দিয়েছে । ফলে দেশের শিল্পখাত ও মেহনতি মানুষ সংকটেরম মধ্য রয়েছে। দেশের এমন সংকটকালিন সময়ে সরকার জনগণের পাশে এসে ত্রাণকাজ প্রদানসহ সর্বাত্মক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে বলেন, মহান মে দিবসের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শ্রমিক ও মালিক উভয়েই ভাল সম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে সবাই একত্রে কাজ করে যাবেন এমন আশা ব্যক্ত করেন । করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় দেশের রপ্তানি শিল্প খাতের শ্রমিকদের আর্থিক সুবিধা দিতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে ।
১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের ম্যাসাকার শহিদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে পালিত হয়। সেদিন দৈনিক আটঘণ্টার কাজের দাবিতে শ্রমিকরা হে মার্কেটে জমায়েত হয়েছিল। তাদেরকে ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি এক অজ্ঞাতনামার বোমা নিক্ষেপের পর পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। ফলে প্রায় ১০-১২ জন শ্রমিক ও পুলিশ নিহত হয়।
১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে থেকে শিকাগো প্রতিবাদের বার্ষিকী আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব করেন রেমন্ড লাভিনে। ১৮৯১ সনে আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসে এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। এর পরপরই ১৮৯৪ইং সনে মে দিবসের দাঙ্গার ঘটনা ঘটে।
পরবর্তীতে ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে আমস্টারডাম শহরে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই উপলক্ষ্যে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবে দৈনিক আটঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবি আদায়ের জন্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বজুড়ে পয়লা মে তারিখে মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজন করতে সকল সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল এবং শ্রমিক সংঘের (ট্রেড ইউনিয়ন) প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সেই সম্মেলনে শ্রমিকদের হতাহতের সম্ভাবনা না-থাকলেও বিশ্বজুড়ে সকল শ্রমিক সংগঠন মে মাসের ১ তারিখে বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না-করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ।
বিশ্বের অনেক দেশেই মে দিবস একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। সেসব দেশে এমনকি এ উপলক্ষ্যে সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়ে থাকে।বাংলাদেশ এবং ভারতেও দিনটি যথাযথভাবে পালন করা হয়ে থাকে।তবে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারনে বিশ্বের কোন দেশই তেমন পরিসরে মে দিবসটি পালন করেছে না।
কোভিড-১৯ রোগের কারণে বিশ্বে আজ ভয়াবহ পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের লড়াই সবচেয়ে কঠিন। এমন লড়াই জীবনে বেঁচে থাকার লড়াই। আর্থিক বিপর্যয়ের মুহূর্তে ইতিমধ্যেই কাজ হারিয়েছেন অসংখ্য শ্রমজীবী মানুষ। করোনা পরবর্তী সময়ে কয়েক কোটি মানুষ কর্মহীন, বেকার হয়ে পড়বে পরিসংখ্যান এমনটাই বলছে । ফলে তাদের জীবনে নেমে আসবে ভয়ঙ্কর কঠিন দিন।
আমরা সকলে যেরকম একসঙ্গে থেকে এই করোনা ভাইরাস রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। সেরকমই সকলে সকলের পাশে থেকে এই মানুষগুলোরও কাজ ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। তবেই এই মানুষগুলো আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেন। সমাজ দাঁড়াতে পারবে। আমরা পালন করতে পারব মে দিবস। মুষ্টিবদ্ধ হাত উপরে উঠবে। তবেই মে-দিবস সার্থক হবে ।