সাভার শিল্পাঞ্চলে অসন্তোষ করোনা ভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যেই সাভার ও আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানা খোলা নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল কিছু কারখানা খুলে দেয়া হলেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগে আজ সোমবার (২৭ এপ্রিল) কাজে যোগ দেয়নি বহু শ্রমিক। এছাড়া কর্মস্থলে যোগ দিলেও বিক্ষোভ দেখিয়েছেন শ্রমিকরা। শ্রমিকরা বলছেন, শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করে অধিকাংশ কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া বন্ধ থাকা কারখানার শ্রমিকেরা ঘরে বসেই বেতন পাবেন বলে ধারণা তাদের। আর তাদের কাজে এনে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে। এ কারণে চালু হওয়া অনেক কারখানার শ্রমিকেরা কাজ করতে চাচ্ছেন না। জানা যায়, আজ সকাল থেকে কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নানা অভিযোগে কাজে যোগ দিতে অনীহা দেখায় আশুলিয়ার নরসিংহপুরের শারমীন গ্রুপের শ্রমিকেরা। কারখানায় এলেও একপর্যায়ে সবাই সেখান থেকে বেরিয়ে যান। শারমিন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, বর্তমান অবস্থায় শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে গত শনিবার কারখানা খোলার দিন দুই শিফট চালু করা হয়েছিল। অর্ধেক শ্রমিক সকাল ছয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত আর বাকি অর্ধেক শ্রমিক বেলা আড়াইটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করছিলেন। এতে শ্রমিকেরা ছয় ফুট দূরত্বে বসে কাজ করতে পারতেন। কিন্তু শ্রমিকেরা নানা অজুহাতে এক শিফট চালু করার দাবি জানান। তাদের দাবি অনুযায়ী আজ থেকে এক শিফট চালু করা হয়েছিল। এরপরও আজ সকালে শ্রমিকেরা কর্মস্থলে উপস্থিত হয়ে কারখানা থেকে বের হয়ে যান। পরে অবশ্য আলোচনার ভিত্তিতে তাঁরা কাজে ফিরতে সম্মত হয়েছেন।
এদিকে আশুলিয়ার নরসিংহপুরের হা-মীম গ্রুপের কারখানায়ও ঘটেছে একই ঘটনা। সেখানে সকালে শ্রমিকরা কারখানায় এসে কাজে যোগ দিতে অনীহা প্রকাশ করে। পরে কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। কারখানার মূল ফটকে দেওয়া নোটিশে বলা হয়, আন্তর্জাতিক ক্রয় আদেশ বাতিল, শ্রমিকদের নিরাপত্তা আর স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হলো। এছাড়া জামগড়ার নেক্সট কালেকশন নামের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরাও আজ সকালে কর্মস্থলে উপস্থিত হয়ে কাজ না করে কারখানা থেকে বের হয়ে গেছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে গত দুইদিনের মতো তৃতীয় দিনেও ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে আশুলিয়ার সিগমা ফ্যাশনসের ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকেরা। তারা সোমবার বেলা ১১টার দিকে কারখানার সামনে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় তাঁরা ছাঁটাইয়ের আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান।
এদিকে আন্তর্জাতিক ক্রয় আদেশ বাতিল হয়ে যাওয়ায় আগামী তিন মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সাভারের উলাইল এলাকার কে এল ডিজাইন অ্যাপারেলস। সেখানে কারখানা খোলার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। এর আগে রোববার থেকে কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে আজ মূল ফটকে বন্ধের নোটিশ সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক ক্রয় আদেশ বাতিল হয়ে যাওয়ায় আগামী তিন মাস কারখানাটিতে কোনো কাজ থাকবে না। এ কারণে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হলো। কে এল ডিজাইনের শ্রমিকরা বলেন, আজ তাদের কারকানা চালু হওয়ার কথা ছিল। সেই অনুযায়ী কর্মস্থলে উপস্থিত হয়ে তাঁরা কারখানা বন্ধ দেখতে পান। বন্ধের বিষয়টি আগে জানানো হলে তাঁরা দূর থেকে ঝুঁকি নিয়ে সাভার বা কর্মস্থলে উপস্থিত হতেন না। এ কারণে তাঁরা কারখানা খোলার দাবি জানিয়েছেন। এবিষয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, পোশাক কারখানা মালিকদের একেকসময় একেক সিদ্ধান্তে দ্বিধাদ্বন্দে পড়েছেন শ্রমিকরা। একারণে করোনা ঝুঁকি সত্তেও অনেকে কাজে যোগ দিয়েছেন। আবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় অনেকে অনীহাও দেখাচ্ছেন। এবিষয়ে সরকারকে কার্যকরী ভূমিকা নিতে হবে। এব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা শিল্প পুলিশ-১ এর সহকারী পুলিশ সুপার জানে আলম খান বলেন, সকাল থেকে কিছু কারখানায় কিছু ঘটনা ঘটলে কয়েকটি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া কিছু জায়গায় শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে সম্মত হয়। দুপুরের পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।