মুনাফার লোভ ত্যাগ করে শ্রমিকদের বাঁচতে দিনঃ- কাজী রুহুল আমীন

করোনাভাইরাস এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছে সরকার।সমগ্র দেশবাসী এই যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েলেও গামেন্ট মালিকরা মুনাফার লোভ সামলাতে না পেরে যথার্থ নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছাড়াই কারখানা খুলে দিয়ে লক্ষ লক্ষ শ্রমিককে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। লকডাউন আর ঘরে থাকার কোনো তোয়াক্কা করছেনা তারা।ফলে শ্রমিকদেরকে করোনা যুদ্ধে জয়লাভ করে বেচে থাকতে করোনার পাশাপাশি মালিকদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে। যা দেখে দেশবাসী বলছে গামেন্ট মালিকরা সমগ্র দেশকে করোনা মহামারিতে ঠেলে দিচ্ছে।

গত দুদিন আগেই রানা প্লাজা দিবসে শ্রমিকদেরকে শ্রদ্ধা জানাতে দেয়া হয়নি,কেননা শ্রমিকরা একত্রিত হওয়া নিরাপদ নয়।ঘরে বসে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে শ্রদ্ধা জানাতে হয়েছে। ক’জন শ্রমিক যাতে রানাপ্লাজা স্মৃতি স্তম্ভের সামনে একত্রিত না হয় সে ব্যাপারে সরকার খুবই সতর্ক থাকলেও একই বিল্ডিং এত ভেতরে হাজার হাজার শ্রমিককে কাজ করতে বাধ্য করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিলেও যেন কারো কোনো মাথা ব্যথা নাই।

প্রায় দুই দশক আগেই শ্লোগান দিয়েছিলাম “গামেন্ট নয় যেন কারাগার – এই কারাগার ভাংতে হবে “। বার বার অগ্নিকান্ড,ভবন ধ্বসের মাধ্যমে হাজার হাজার শ্রমিককে হত্যা বিশেষ করে রানা প্লাজা হত্যাকান্ডের পর দেশী বিদেশী চাপ এবং একড – এয়ালায়েন্সের নিরাপত্তাজনিত কাযক্রম বিশ্ববাসীকে শ্রমিক নিরাপত্তার ব্যপারে কিছুটা আশ্বস্ত করেছে।সেই আশার গুড়ে বালি দিয়ে তাক লাগিয়ে হতাশ করলেন এবং আসল চেহারার কিছুটা বহিঃপ্রকাশ ঘটালেন মালিকরা।এদের আসল চেহারা আমরা অনেক আগেই দেখেছিলাম বলে শ্লোগান দিয়েছিলাম ” লাশের উপর দাড়িয়ে- লুটপাট করা চলবে না” লাশের উপর দাড়িয়ে- মুনাফা করা চলবেনা”।

এবার যেসব কারখানায় বেতনের জন্য লকডাউন ভেঙে আন্দোলন করতে হয়েছে সেখানে শ্লোগান ছিল ” পেটে আমাদের ভাত নাই – করোনা ভাইরাসের ভয় নাই “। কারখানা চালু করেই ক্ষান্ত না, ছাটাই-নিযাতন-দমননীতি চালাচ্ছে মালিকরা। পুজিবাদী সমাজে পুজিপতির আসল চেহারা ক্রমান্বয়ে ফুটে উঠছে।বতমানের পুজিবাদী রাষ্ট্র ও সরকারের ভুমিকা এটাই প্রমাণ করছে যে,পুজিপতির কাছে মানুষ, মানবতা, মূল্যবোধ বলে কিছু নেই।পুজিপতি মুনাফার জন্য কারখানা করলেও প্রথমে মুনাফা করতে শোষণ তারপর ঘুষ-দুনীতি-লুটপাট তারপর এসকল টিকিয়ে রাখতে হত্যা পুজিবাদী সমাজকে গনতন্ত্রহীন করে এক পযায়ে হত্যা-খুনের পথ বেছে নেয় এবং জন্ম দেয় ফ্যাসিবাদের।কিন্ত সমগ্র দেশবাসীকে বলছে ঘরে থাকতে আর ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ দিয়ে পেটানো হচ্ছে।

একই বিল্ডিং এর মধ্যে হাজার হাজার শ্রমিককে দিয়ে কাজ করাচ্ছে দল বেধে প্রবেশ করছে বের হচ্ছে তাতে কী লকডাউন আর ঘরে থাকার সিদ্ধান্ত ভন্ডুল হচ্ছে না। কারখানা চালুর খেত্রে নিরাপত্তার যেসব বুলি তার প্রায় সবটাই ফাকাবুলি।

সমগ্র দেশবাসী তাই প্রশ্ন তুলেছে শ্রমিকরা কী মানুষ না যে তাদেরকে এভাবে কারখানায় কাজ করতে হবে? এক্ষেত্রে বলা হচ্ছে যে,বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ইত্যাদি সেসব দেশে কারখানা খোলা আছে।আমাদের ক্রেতারা সেসব দেশে চলে যাবে। তাহলে সে-সকল দেশের মতো নিরাপত্তার ব্যবস্থা করুন। ব্যবস্থা বলতে এখন শুধু কিছু কারখানায় হাত ধোয়ার জন্য ২/৪ টি সাবান ব্যতীত কোনো ব্যবস্থা নাই।

এখানেই খান্ত নয়, গণহারে চাকুরীচ্যুতি চলছে, লে-অফ করছে, সময় মতো বেতন দিচ্ছেনা এখান থেকেই বুঝা যায় যে, মালিকদের কাছে শ্রমিকদের জীবনের চেয়ে তাদের মুনাফার গুরুত্ব অনেক বেশি। এসব মালিকদের রুখে দিতে হাজার হাজার শ্রমিক রাজপথে লড়াই করছে। লাখো শ্রমিককে এমনকি সমগ্র দেশবাসীকে করোনা ঝুকিতে ফেলেছে। এখান থেকে বাচতে হলে শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। চাকরি চ্যুত করা যাবেনা,লে-অফ করা যাবেনা। সময় মতো বেতন দিতে হবে।তাহলেই করোনা যুদ্ধে জিততে পারবো। আর যদি এসব কারণে হেরে যাই তার দায়িত্ব কী মালিরা নেবেন? মুনাফার লোভ ত্যাগ করে শ্রমিকদের বাচতে দিন।দেশবাসীকে স্বস্তিতে সুস্থ থাকতে দিন।

লেখকঃ কাজী রুহুল আমীন, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *