রানা প্লাজায় শ্রমিক হত্যার ৭ বছর পূর্তি, ভালো নেই শ্রমিকরা

২৪ এপ্রিল বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের শ্রমিকদের জন্য প্রতিবাদ-প্রতিরোধের দিন।এই দিন শ্রমিক শ্রেনীর শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তোলার দিন।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার রানা প্লাজায় অবস্থিত ৫টি গার্মেন্ট কারখানায় হাজার হাজার শ্রমিক কর্মরত ছিল, ৯তলা ভবনে শ্রমিকদের কোন নিরাপত্তা ছিলনা। ২৩ এপ্রিল কারখানায় বড় ধরণের ফাটল দেখা দেওয়ার কারণে কারখানা ছুটি ঘোষণা করে গার্মেন্ট মালিকরা।

২৪ এপ্রিল বিল্ডিং এর ফাটল মেরামত না করেই বিল্ডিং মালিক রানাসহ গার্মেন্ট কারখনার মালিকরা শ্রমিকদের জোর করে কাজে যোগদান করতে বাধ্য করে।কারখানা চালুর কিছুক্ষণ পর সকাল ৯ টায় রানা প্লাজার ৯ তলা ভবন ভেঙ্গে পড়ে। একটানা ২৪ এপ্রিল সকাল থেকেই গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কর্মীরা ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, সামাজিক সংগঠন, গণ জাগরণ মঞ্চসহ সাধারণ মানুষ সরকারের উদ্ধার কাজের সাথে কাজ করে। থেকে ১৭ মে পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চলে। ১১৩৪ জন শ্রমিক নিহত হয়।সরকারি হিসাবে ২৪৩৮ জন শ্রমিক গুরুত্বর আহত হয়। কিন্তু প্রথম সাধারণ মানুষ যে আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করেছিল তাদের নামের তালিকাতে আসে নাই।যার কারণে আহত শ্রমিকের সংখ্যা আরো অনেক বেশী।

রানা প্লাজায় শ্রমিক হত্যার ৭ বছর পূর্তি হলেও আমরা দেখছি রানা প্লাজায় শ্রমিক হত্যার জন্য দায়ী বেক্তিদের বিচার বা কোন সাজা হয়নি।নিহত শ্রমিকরা কোন ক্ষতিপূরণ পাইনি। আহত শ্রমিকরা চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ কোন টায় পায়নি।আহত শ্রমিকরা চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার ফলে পঙ্গু জীবন নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন যাপন করছে।নিহত শ্রমিক পরিবার, কেও হারিয়েছে বাবা, কেও হারিয়েছে মা, আবার কেও হারিয়েছে সন্তান, পরিবারের এক মাত্র উপার্জন সক্ষম মানুষটা হারিয়ে নিহত শ্রমিকদের পরিবার অনাহারে শোকে  পাথর হয়ে আছে।

রানা প্লাজায় আহত-নিহত শ্রমিকদের সহযোগিতা করার জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নেতৃত্বাধীন রানা প্লাজা সমন্বয় কমিটির মাধ্যমে শ্রমিকদের কিছু সহযোগিতা করা হয়েছে। আমরা দেখছি সেই সহযোগিতাকে সরকার এবং গার্মেন্ট মালিকরা ক্ষতিপূরণ বলার চেষ্টা করছেন।

২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ভেঙ্গে পড়ার পর রানা প্লাজায় নিহত শ্রমিক পরিবার ও আহত শ্রমিকরা চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের দাবীতে আন্দোলন শুরু করে তখন দেশী বিদেশী মানুষ রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিক ও শ্রমিক পরিবারের পাশে দাঁড়ান সহযোগিতার জন্য।সে সময় প্রধানমন্ত্রীর এবং বিজিএমইএ এর তহবিলে জমা হয় কোটি কোটি টাকা।এই তহবিলে গার্মেন্ট শ্রমিকসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা একদিনের বেতন প্রদান করেন।

প্লাজা ভেঙ্গে পড়ার পর আমরা দেখছি হাজার হাজার শ্রমিক ও শ্রমিক পারিবার অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটালেও অনেকেই আছেন যারা এই শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলে সহায়তা এনেছিলেন, কিছু সহায়তা হয়তো দিয়েছিলেন তারা অনেকেই আগের থেকে অনেক ভালো আছেন।নাম গুলো না হয় নাইই বললাম।

বর্তমান সময়ে করোনা ভাইরাসের কারণে আহত শ্রমিকরা আরো কর্মহীন হয়ে পড়েছে, অনেকে ছিলেন তারা ছোট মুদি দোকান, চায়ের স্টল, ফুটপাতে দোকান, নির্মান শ্রমিকের কাজ, গার্মেন্টে ডেইলি বেসিকে কাজ করতেন কিন্তু তারা এসময় কোন কাজ করতে পারছে না। সরকার যে ত্রান সহায়তা দিচ্ছে তাও তারা পাচ্ছে না।আহত শ্রমিকরা তারা কোথাও চিকিৎসা পাচ্ছে না।সব মিলিয়ে ৭ বছর পরে এসেও রানা প্লাজার শ্রমিকরা ভালো নেই।

যত দিন না রানা প্লাজার শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা, পূনবাসন নিশ্চিত না হবে ততদিন পর্যন্ত রানা প্লাজার শ্রমিকদের দুর্দশা লাঘব হবে না।

রানা প্লাজার শ্রমিকদের দুর্দশা লাঘবের জন্য রানা প্লাজার শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা, পূনবাসন নিশ্চিত হবে। প্রয়োজনে রানা প্লাজার স্থানে সরকারি ভাবে বহুতল ভবন নির্মান করে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা, পূনবাসন নিশ্চিত হবে।রানা প্লাজার মত আর যাতে কোন ঘটনা না ঘটে তার জন্য রানা প্লাজায় শ্রমিক হত্যার জন্য দায়ী বেক্তিদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

 

রানা প্লাজা দিবসের কর্মসূচিঃ

রানা প্লাজায় শ্রমিক হত্যার ৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২৩ এপ্রিল বিকাল ৫ টায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন।

২৪ এপ্রিল সকাল ৮ টায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন।কর্মসূচি পালনের জন্য সকল শ্রমিক সংগঠনসহ সকলকে অনুরোধ জানাচ্ছি।

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের কারনে যেহেতু আমাদের গণজমায়েত হওয়ার কোন সুযোগ নেই, তাই প্রতিবারের মত এবাবের কর্মসূচি পালিত না হলেও পালিত হবে সীমিত আকারে।

লেখকঃ খাইরুল মামুন মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *