কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবে হাজার হাজার শ্রমিক চাকুরী হারানোর ঝুকিতে আছে।

কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবে বাংলাদেশে হাজার হাজার শ্রমিক ছাঁটায় করা হয়েছে, আরো হাজার হাজার শ্রমিক চাকুরী হারানোর ঝুকিতে আছে।

কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবে বাংলাদেশ থেকে পোশাকের আমদানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে প্রায় সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কার্যত বন্ধ। স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হওয়ায় সেসব দেশে পোশাকপণ্যের চাহিদা কমে গেছে ব্যাপক হারে। আবার এদিকে বাংলাদেশেও ক্রমেই বাড়ছে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলেও চলছে অঘোষিত লকডাউন। জরুরি ছাড়া শিল্প-কারখানার উৎপাদনও তাই কার্যত বন্ধ।

এ প্রেক্ষাপটে আসন্ন মন্দা মোকাবেলায় পোশাক শিল্প মালিকরা ব্যয় সংকোচন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে শুরু করে দিয়েছেন। গণহারে কিছু কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটলেও এর ব্যাপকতা আরো বাড়বে মূলত সংকট কাটতে শুরু করলে।

এছাড়া নভেল করোনাভাইরাসজনিত সংকটে শ্রমিক ছাঁটাই না করার বিষয়ে সরকারের দিকনির্দেশনাও রয়েছে। কিন্তু সরকারের দিকনির্দেশনা তোয়াক্কা না করে প্রায় সব পোশাক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। আর এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাছাই করা হচ্ছে এক বছরের কম সময় ধরে কাজ করছেন এমন শ্রমিকদের। কিছু কারখানায় ভবিষ্যতে ছাঁটাই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বেতন পরিশোধ করে শ্রমিকদের পরিচয়পত্র রেখে দেয়া হলেও শ্রম ও শিল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুরোধে পরিচয়পত্র আবার ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে দুএকটি কারখানায় কিন্তু তাদের আগামীমাসে বেতন পাবে কিনা এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে সন্দেহ আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে গার্মেন্ট কারখানা গত ২৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে, প্রথমে কারখানা গুলো বন্ধের নুটিশ দিলেও পরবর্তিতে ১২ এবং ১৬ ধারা মোতাবেক বন্ধের নুটিশ দেওয়া হয়। কয়েকটি বন্ধের নুটিশের সাথে ২০ ধারা মোতাবেক ছাঁটায়ের নুটিশ গেইটে লাগিয়ে দেন, যা বর্তমান বে-আইনি এবং অমানবিক।

আমার জানামতে মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এ পর্যন্ত ইনটিমেট এপারেলস লিমিটেড , চট্টগ্রাম। ফ্যাশন ফোরাম লিমিটেড, আশুলিয়া। অবনী ফ্যাশন লিমিটেড, হেমায়েত পুর। ব্যাবিলন ক্যাজুয়্যাল ওয়্যারের লিমিটেড, হেমায়েত পুর।এপিএস হোল্ডিং লিমিটেড, কড্ডা, গাজীপুর। রাইজিংট্রেক্স ফ্যাশন লিমিটেড, আউকপাড়া। আশুলিয়া, ইসকেই ক্লথিং লিমিটেড, আশউলিয়া। দি ক্লথ এন্ড ফ্যাশন লিমিটেড, আশুলিয়া। সিনহা নিট অ্যান্ড ডেনিম লিমিটেড, জিরানী, আশুলিয়া। চৈতি গুরুপ, উত্তরা। ফ্লো ডিজাইন লিমিটেড, উত্তরা।এপিএস গ্রুপ, উত্তরা। টিএনএফ গার্মেন্ট, উত্তরা। ইন্টার ফ্যব ম্যানুফ্যাকচারি লিঃ বড় বাড়ী, গাজীপুর।ফ্যাটার ফ্যাশন লিমিটেড, ২৭ রোড, গাজীপুর।ওরেন এলিয়েন্ট নিটওয়্যার লিমিটেড, গাজীপুর। ইউনিগিয়াস গার্মেন্ট, গাজীপুর।বেস্ট সার্ট লিমিটেড, গাজীপুর।ওয়েস্ট লাইন ফ্যাশন লিমিটেড, বড় বাড়ী, গাজীপুর। পশমি সোয়েটার লিমিটেড, বোর্ড বাজার, গাজীপুর।রিয়াজ নিটওয়্যার লিমিটেড, গাজীপুর।জিনিয়াস এয়াপারেলস লিমিটেড, আউক পাড়া, আশুলিয়া।আহসান কম্পোজিট লিমিটেড, গাজীপুর।সালেক কম্পোজিট লিমিটেড, গাজীপুর।ডেনিম এশিয়া লিমিটেড, গাজীপুর।ফেয়ার ওয়াশিং লিমিটেড, গাজীপুর। এপেক্স ফুড ওয়্যার লিমিটেড, গাজীপুর। ডেনিস নিট ওয়্যার লিমিটেড, গাজীপুর। জন লিবার্স নিট ওয়্যার লিমিটেড, গাজীপুর। মদিনা পেল ফ্যাশন ক্রফট লিমিটেড, গাজীপুর। এন্টং বিডি লিমিটেড, আশুলিয়া। টাইম সোয়েটার লিমিটেড, নারায়ণগঞ্জ। স্কাইলার্ক নিট কম্পোজিট লিমিটেড, হেমায়েতপুর। আলফা ক্লথিং লিমিটেড, জিরানি, আশুলিয়া।মোট ৩৪ টি গার্মেন্ট কারখানায় হাজার হাজার শ্রমিক ছাঁটায় হয়েছে।আর একটু ভালো করে খোঁজ খবর নিলে এই লিস্ট আরো বাড়তে পারে বলে আমার মনে হয়।

অন্যদিকে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঝুঁকিতে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) ছুটির ঘোষণা দিয়েছে বেপজা কর্তৃপক্ষ। এই ছুটি কালীন সময়ে শ্রমিকদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯-এর ১১ ধারা অনুযায়ী লে-অফ এ আবেদন করছে ইপিজেডের কারখানা গুলো। এরইমধ্যে কিছু কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছে।লে-অফ থাকাকালীন বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনের ১৫ ধারা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাবেন ন্যূনতম এক বছর কাজ করা শ্রমিক-কর্মচারীরা। যাবতীয় পাওনা ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯-এর ধারা ১৫ অনুসারে যথাসময়ে প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন।

এই লে-অফ কার্যকর হলে লে-অফের ক্ষতিপূরণ হিসেবে মূল বেতনের ৫০% পাশাপাশি সম্পূর্ণ বাড়িভাড়া পাবে শ্রমিকরা। একই সঙ্গে সম্পূর্ণ বোনাসও পাবে । তবে অন্যান ভাতা যেমন চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত ভাতা পাবেন না । সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের সঙ্গে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আরো ১৫ দিন লে-অফ রাখা যাবে কারখানা। এর পরও সমস্যা থেকে উত্তরণ না হলে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ সাপেক্ষে আইন অনুযায়ী ছাঁটাই করতে পারবে। তবে যেসব শ্রমিক বা কর্মচারীর চাকরির বয়স এক বছর হয়নি, তারা কোনো সুবিধাই পাবেন না।

তার মানে দেশের সব রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) এ হাজার হাজার শ্রমিক চাকুরী হারানোর ঝুকিতে আছে। ইপিজেড সহ সকল কারখানায় শ্রমিক ছাঁটায় বন্ধের এখনি পদক্ষেপ না নিলে এই শিল্পে অস্থিরতা বিরাজ করবে এবং লক্ষ লক্ষ পরিবার অর্ধাহারে-অনাহারে পথে বসবে।

লিখেছেনঃ খাইরুল মামুন মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *