নিম্নতম মজুরী বোর্ডে এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ এ্যলায়েন্স বাংলাদেশ জোটের স্মারকলিপি প্রদান
আজ ২০ নভেম্বর ২০২৩, এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ এ্যলায়েন্স বাংলাদেশ জোট, তোপখানাস্ত শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালায়ের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে। এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ এ্যলায়েন্স বাংলাদেশ জোট এর সদস্য ও ট্রেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন এর সভাপতি আবুল হোসাইনসহ জোটের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জনাব আবুল হোসাইন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান খাত গার্মেন্টস হলেও শ্রমিকদের জন্য মর্যাদাপূর্ণ মজুরি নির্ধারণের বিষয়টি উপেক্ষিত। মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে শ্রম আইনে বর্ণিত বিষয়সমূহ বিবেচনা, প্রয়োজনীয় পুষ্টিমান ও জীবনযাপন ব্যয়, উৎপাদনশীলতা, পার্শ্ববর্তী দেশ এবং একই ধরণের শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি বিবেচনাসহ পে-স্কেলের সর্বনিম্ন ধাপের মজুরি বিবেচনা করতে হবে। বিশ্বে গার্মেন্টস পণ্যের বাজার ৬৫৩ বিলিয়ন ডলারের এবং বাংলাদেশ সেখানে মাত্র ৭.৯ শতাংশ রপ্তানি করে। নতুন বাজারে প্রবেশাধীকারের যেখানে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে শ্রমিকদের মজুরি, অন্যান্য সব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে কম নির্ধারন করে বিশেষ একটি গোষ্ঠী অন্তর্জাতিক মানদন্ডে না নিয়ে বাজার নষ্ঠের একটি পাঁয়তারা করছে।
মজুরী বোর্ডের চেয়ারম্যান জনাব লিয়াকত আলী মোল্লা বলেন, বাংলাদেশ সরকার শ্রমিক বান্ধব কারখানা গড়ে তোলার লক্ষ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্তণালয়ের অধীন বিভিন্ন দপ্তর, পরিদপ্তর গঠন করেছে; মালিক শ্রমিকদের সমন্বয়ে গঠিত নিম্নতম মজুরি বোর্ড ইতোমধ্যে গার্মেন্টস সেক্টরের জন্য গত ৭ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে একটি খসড়া নিম্নতম মজুরী ঘোষণা করেছে। আগামী ২৬ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে নিম্নতম মজুরী চুড়ান্তকরনের একটি সভা আহ্বান করা হয়েছে। আজকের স্মারকলিপির বিষয়বস্তু নিয়ে আগামী মিটিং এ উপস্থাপন করা হবে।
এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ এ্যলায়েন্স বাংলাদেশ জোটের স্মারকলিপিতে বলা হয়, গার্মেন্টস একটি আন্তর্জাতিক পন্য, ফলে সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে তার প্রতিফলন থাকবে সেটাই আমরা প্রত্যাশা করি। একই সাথে গার্মেন্টস শিল্পে প্রতিযোগী অন্যান্য দেশসমূহের মজুরি কাঠামোও বিবেচনায় নিতে হবে। ২০১৮ সালে গার্মেন্টস পণ্যের রপ্তানী ৩২বিলিয়ন ডলার যা ২০২২ সালে ছিল ৪৫.৭০ বিলিয়ন ডলার। অর্থ্যাৎ রপ্তানীর প্রবৃদ্ধি অব্যাহত আছে। অপরদিকে, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের ফলে ২০১৮ সালে ১ডলার=৮৩ টাকা থাকলেও বর্তমানে ১১০টাকা হারে রপ্তানিকারকেরা গ্রহণ করছেন। ফলে বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার এক হিসাবে দেখা যাচ্ছে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এর ফলে গার্মেন্টস মালিকরা প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি মুনাফা করেছে। কিন্তু শ্রমিকরা মূল্যস্ফিতির চাপে পিষ্ট হলেও বাড়তি মুনাফা থেকে শ্রমিকদের বঞ্চিত করা হয়েছে। এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ এ্যলায়েন্স বাংলাদেশ জোট মনেকরে সূস্যতম মজুরী ১২,৫০০ টাকা ন্যূনতম মজুরী নির্ধারন বাংলাদেশ সংবিধানের ১৫নং অনুচ্ছেদ, আইএলও ১২১ অনুচ্ছেদ, শ্রম আইনের ১৪১ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। জীবনযাত্রার মান, জীবন যাপনের ব্যায়, মালিকের সক্ষমতা, শ্রমিকের উৎপাদন বিবেচনায় নিলে কোনভাবেই ১২,৫০০ টাকার নিম্নতম মজুরি কোনভাবেই যৌক্তিক হয় না। এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ এ্যলায়েন্স বাংলাদেশ জোট মনে করে আন্তর্জাতিক মানদন্ডে উন্নীত না করে সামগ্রীক অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করা হচ্ছে, যা শ্রমিকদের মনে বঞ্চনার অনুভ‚তি তীব্র করবে এবং তা বিক্ষোভের মনোভাব সৃষ্টি করবে। এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ এ্যলায়েন্স বাংলাদেশ এর গবেষণার ফলাফল বিবেচনা করে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি ন্যূন্যতম ২৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করা উচিৎ বলে দাবি জানিয়েছিলাম। শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়ন ও শিল্পের স্বার্থে তাই মজুরি পূনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।
এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ এ্যলায়েন্স, বাংলাদেশ জোট এর পক্ষে স্মারকলিপি প্রদান করেন ট্রেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন এর সভাপতি আবুল হোসাইন, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র এর সভাপতি ইদ্রিস আলী, গ্রীন বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি সুলতানা বেগম, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন, ট্রেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তপন শাহা, গ্রীন বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াস, জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাহারায়েনে সুলতান বাহার, বাংলাদেশ প্রগতিশীল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামরুন্নাহার, শ্রমিক নেতা খাইরুল মামুন মিন্টু, এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ এ্যলায়েন্স বাংলাদেশ সমন্বয়কারী আরিফুর রহমান, জেন্ডার অফিসার আমরিন হোসাইন এ্যানি।