নারীর অধিকার নিশ্চিতকল্পে কৈশোরকালীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা জরুরি

জাতীয় এসআরএইচআর কনফারেন্সে ১৭ দফা ঘোষণা

মঙ্গলবার (১২সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সিমাভি বাংলাদেশের কারিগরি সহায়তা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘জাতীয় এসআরএইচআর কনফারেন্স ও যুবসম্মেলন-২৩’ এর শেষ দিনে প্রেস কনফারেন্সে ১৭ দফার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যাবস্থাপক সঞ্জয় মজুমদার। কনফারেন্সে কৈশোরকালীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে বিষয়ভিত্তিক ৫টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। “যুব ও কিশোর কিশোরীদের জন্য নিশ্চিত হোক যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার”— এই স্লোগানকে সামনে রেখে কনফারেন্সের উদ্বোধন করেন বিএনপিএস-এর চেয়ারপারসন শহীদজায়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী। দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই কনফারেন্সে কৈশোর ও যুববান্ধব স্বাস্থ্যসেবা, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা, স্কুলে কিশোরীদের মাসিককালীন স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা, নারীর প্রতি নিকটজনদের দ্বারা সহিংসতা ও পার্বত্য চট্টগ্রামে বাল্যবিবাহ বন্ধে উদ্যোগ, এসআরএইচআর, পানি ও জলবায়ু পরিবর্তন: পার্বত্য চট্টগ্রামের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা শীর্ষক অধিবেশনে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের এনজিও, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধি, সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ও বিভাগের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের কিশোরী ক্লাবের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন ও তাদের মতামত তুলে ধরেন।

যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার বিষয়ক জাতীয় সম্মেলন ২০২৩ এর ঘোষণা :

১. সকল পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে যুব / কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা;

২. প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ সকল স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাসিকবান্ধব টয়লেট স্থাপন নিশ্চিত করা এবং মাসিকবান্ধব টয়লেটে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরকারিভাবে সরবরাহের ব্যবস্থা করা;

৩. মাসিকবান্ধব টয়লেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করা;

৪. কৈশোর ও যুববান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকল্পে মনোসামাজিক সেবার জন্য সেবাকেন্দ্রে বিশেষায়িত জনবল বা কাউন্সেলর নিয়োগ করা;

৫. প্রত্যন্ত এলাকাসমূহের বিদ্যালয়গুলোতে মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে স্যানিটারি প্যাড বিতরণের ব্যবস্থা করা;

৬. জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা;

৭. দুর্গম এলাকার মধ্যে ও ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে পরিকল্পনা করা, যেমন, হাওর এলাকা, চরাঞ্চল, পার্বত্য অঞ্চল প্রত্যেকটার বাস্তবতা ভিন্ন ভিন্ন। এই ভিন্ন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা;

৮. দুর্গম এলাকায় স্যাটেলাইট ক্লিনিক / মোবাইল মেডিকেল টিমের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম নিয়মিতভাবে পরিচালনা করা এবং এজন্য বিশেষায়িত বাজেট বরাদ্ধ রাখা;

৯. দুর্গম এলাকায় শিশুদের টিকা কার্যক্রমের পাশাপাশি গর্ভবতী মায়েদের জন্য ও মোবাইল মেডিকেল টিমের মাধ্যমে সেবা পৌঁছে দেওয়া;

১০. স্থানীয় পর্যায়ে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ করা, যাতে একই সাথে সেবাগ্রহীতাদের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভাষাগত সমস্যা এবং জনবল সংকট দুইই দূর হয়;

১১. স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রসমূহে এলাকা ভিত্তিক সেবাগ্রহীতাদের সুবিধাজনক সময় বিবেচনা করে সপ্তাহের কোনো একদিন ছুটির দিনে সেবাদানের ব্যবস্থা করা;

১২. দুর্গম এলাকাসমূহে কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা;

১৩. কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফারেল সিস্টেমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রথাগত নেতাদের (কারবারি ও হেডম্যান) রেফার করার ক্ষমতা প্রদান করা;

১৪. মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যসূচিতে বয়ঃসন্ধিকাল, মাসিক, যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য এবং অধিকার বিষয়ক সঠিক ও উপযোগী তথ্যের ঘাটতি দূর করা;

১৫. বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে বয়ঃসন্ধিকাল, মাসিকস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার বিষয়ে পাঠদান নিশ্চিত করা;

১৬. মাসিকের সাথে হরমোন পরিবর্তন ও বিপাক প্রক্রিয়ার (মেটাবলিজম) সম্পর্ক এবং নারীর সার্বিক স্বাস্থ্যের ও মাসিকের অব্যবস্থাপনার প্রভাব বিষয়ে সকল বয়সের মানুষকে সচেতন করার ব্যবস্থা নেওয়া এবং পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করা।

১৭. জলবায়ু পরিবর্তন ঝুকি মোকাবেলাসহ পরিবেশ সংরক্ষনে সরকারী-বেসরকারী সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মশিউর রহমান, ঢাকাস্থ আলিয়ঁস ফ্রাঁসেস-এর পরিচালক ফ্রাঁসোয়া গ্রেসজিন, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর এবং হিল ফ্লাওয়ার-এর নির্বাহী পরিচালক ডাঃ নিলো কুমার তঞ্চঙ্গা।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *