পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষ দশ, ইয়াংওয়ানের চমক, পিছিয়ে নেই দেশীয়রাও
বিদায়ী ২০২২–২৩ অথ৴বছরে দক্ষিণ কোরিয়ান কোম্পানি ইয়াংওয়ান সর্বোচ্চ ১০০ কোটি ডলারের পোশাকপণ্য রপ্তানির মাইলফলক ছুঁয়ে চমক দেখিয়েছে। তবে পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষ ১০ শিল্পগোষ্ঠীর মধ্যে পরের ৯টিই দেশীয়।
দুই দশক আগে ইয়াংওয়ান করপোরেশনের তৈরি পোশাক রপ্তানি ছিল দুই কোটি ডলারের কম। তখন ঢাকা ও চট্টগ্রামে দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্যোক্তা কিহাক সাংয়ের মালিকানাধীন এই কোম্পানির কারখানা ছিল সাতটি।
ওই সময় চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ২ হাজার ৪৯২ একর জমির ওপর কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (কেইপিজেড) নির্মাণের কাজ করছিল ইয়াংওয়ান। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ২০১১ সাল থেকে কেইপিজেডে কারখানা চালু হতে থাকে। সেই সঙ্গে দ্রুত বাড়তে থাকে তাদের রপ্তানি।
শুরু থেকেই কারখানায় উন্নত প্রযুক্তি সংযোজনের পাশাপাশি উচ্চ মূল্যের পোশাক তৈরিতে মনোযোগ দেন কিহাক সাং। তাতে ইয়াংওয়ানের রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিলিয়ন ডলারের মাইলফলকে পৌঁছেছে দক্ষিণ কোরিয়ার এই কোম্পানি। এই অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি রপ্তানি করেছে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার বা ৯ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকার পোশাক। এ শিল্পগোষ্ঠীই বর্তমানে বাংলাদেশের শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক।
দুই দশক আগে বাংলাদেশের শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক ছিল ওপেক্স সিনহা গ্রুপ। কিন্তু বেশ কয়েক বছর আগেই শীর্ষ রপ্তানিকারকের দৌড় থেকে হারিয়ে গেছে কোম্পানিটি। অন্যদিকে ২০ বছর আগের লাখ কিংবা এক-দুই কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানিকারক অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন মহিরুহ হয়ে উঠেছে। তাদের মধ্যে একটি অর্ধবিলিয়ন, মানে ৫০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে। কয়েকটি কোম্পানি ৫০ কোটি ডলারের মাইলফলকের দিকে এগোচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান আশি ও নব্বইয়ের দশকে ক্ষুদ্র পরিসরে যাত্রা শুরু করেছিল।
পোশাক রপ্তানিতে বর্তমানে দ্বিতীয় শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী হচ্ছে স্থানীয় হা-মীম গ্রুপ। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে তারা রপ্তানি করেছে ৬১ কোটি ২৫ লাখ ডলার বা ৬ হাজার ৯১ কোটি টাকার পোশাক। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছে যথাক্রমে মণ্ডল গ্রুপ ও ডিবিএল গ্রুপ। এর মধ্যে মণ্ডল গ্রুপ ৪৩ কোটি ডলারের, আর ডিবিএল গ্রুপ ৪২ কোটি ডলার ৮৬ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। পঞ্চম স্থানে থাকা চট্টগ্রামের প্যাসিফিক জিনস গ্রুপ রপ্তানি করেছে ৪০ কোটি ৬০ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক। শীর্ষ দশের বাকি পাঁচ (ষষ্ঠ-দশম) শিল্পগোষ্ঠীর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড ৩৮ কোটি ৭১ লাখ, পলমল ৩৮ কোটি ৫৯ লাখ, বেক্সিমকো ৩৭ কোটি, একেএইচ ৩১ কোটি ২৬ লাখ ও এশিয়ান-ডাফ ৩০ কোটি ৯৩ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও শীর্ষ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের তথ্য ও পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির শীর্ষ ১০ শিল্পগোষ্ঠীকে খুঁজে পেয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, দেশ থেকে গত অর্থবছর মোট ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। ম্যাপড ইন বাংলাদেশের তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা আছে ৩ হাজার ৭৫২টি। শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক শিল্পগোষ্ঠীর কারখানার সংখ্যা ১০৪।
তার মানে, দেশের প্রায় ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ পোশাক কারখানা এই ১০ শিল্পগোষ্ঠীর। তাদের সম্মিলিত পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ৪৬৭ কোটি ডলার, যা দেশের মোট পোশাক রপ্তানির ১০ শতাংশ। অবশ্য এনবিআরের হিসাবে, গত অর্থবছরে ৪ হাজার ২৫২টি প্রতিষ্ঠান পোশাক রপ্তানি করেছে।
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠীগুলো আমাদের আলো দেখাচ্ছে। তারা উচ্চ মূল্যের পোশাক রপ্তানি করছে। পণ্য বহুমুখীকরণেও প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করছে তারা। আমাদের তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য এগুলো খুবই ইতিবাচক।’
ইয়াংওয়ানের এক পোশাক ১,৮৮৮ ডলারে
একটি পোশাকের রপ্তানি মূল্য কত হতে পারে? তা শুনলে নিশ্চয়ই চোখ কপালে উঠবে আপনার। ২০২২-২৩ অর্থবছর ইয়াংওয়ান একেকটি জ্যাকেট রপ্তানি করেছে ১ হাজার ৮৮৮ ডলার বা ২ লাখ টাকায়। ভুল নয়, ঠিকই শুনেছেন। কৃত্রিম তন্তু দিয়ে তৈরি এই জ্যাকেট তারা জার্মান ব্র্যান্ড অ্যাডিডাসের কাছে রপ্তানি করেছে।
ইয়াংওয়ানের রপ্তানি করা দামি পোশাকের উদাহরণ এখানেই শেষ নয়, গত বছর তারা এক হাজারের বেশি জ্যাকেট রপ্তানি করেছে, যেগুলোর প্রতিটির মূল্য ৫০০ থেকে ৬৫০ ডলার। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে দামি পোশাক রপ্তানিকারক তারা। গত অর্থবছর তাদের প্রতিটি পোশাকের গড় রপ্তানি মূল্য ছিল ১৯ ডলার।
ইয়াংওয়ান গ্রুপের সম্মিলিত রপ্তানি বিলিয়ন ডলারের (১০০ কোটি) মাইলফলক অতিক্রম করেছে আরও আগে। তবে শুধু পোশাকে বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির মাইলফলক ছুঁয়েছে গত অর্থবছরে। এ সময় ৫ কোটি ৩০ লাখ পিস পোশাক রপ্তানি করেছে তারা। উচ্চ মূল্যের পোশাক, বিশেষ করে জ্যাকেট তাদের বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানির মাইলফলকে পৌঁছাতে সহায়তা করেছে। তাদের রপ্তানিমুখী পোশাকের বেশির ভাগই কৃত্রিম তন্তুর।
হা-মীমের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া সস্তা পোশাক হলো টি-শার্ট। রপ্তানি আয়ের বড় অংশই আসছে এই টি-শার্ট থেকে। তবে হা-মীম গ্রুপ কোনো টি-শার্ট রপ্তানি না করেই দ্বিতীয় শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক হয়েছে। তাদের রপ্তানির অন্যতম খাত হলো প্যান্ট। গ্রুপটির রপ্তানি আয়ের ৪৫ শতাংশই এই প্যান্ট থেকে আসছে। এ ছাড়া জ্যাকেট, সোয়েটার, শার্ট ও ট্রাউজার রপ্তানি করে তারা।
গত অর্থবছর হা-মীম গ্রুপ ৭ কোটি ৩৮ লাখ পিস পোশাক রপ্তানি করে, যার মূল্য ছিল ৬১ কোটি ২৫ লাখ ডলার। গড়ে প্রতি পিস পোশাকের রপ্তানি মূল্য ছিল সোয়া আট ডলার।
হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমরা তৈরি পোশাক রপ্তানিতে এক বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারে পৌঁছাতে চাই। এ জন্য আমরা যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউরোপ ও জাপানের বাজারে নজর দিচ্ছি। ইতিমধ্যে আমরা জ্যাকেট রপ্তানি শুরু করেছি। বর্তমানে যেসব পোশাক রপ্তানি করছি, তার সঙ্গে আরও অপ্রচলিত পণ্য যুক্ত করার পরিকল্পনাও করছি আমরা।’ এ কে আজাদ ব্যবসায়ীদের শীষ৴ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সােবক সভাপতি।
৬৯ দেশে যাচ্ছে মণ্ডলের পোশাক
এশিয়া থেকে ইউরোপ, আফ্রিকা থেকে আমেরিকা—কোথায় যাচ্ছে না মণ্ডল গ্রুপের পোশাক। গত অর্থবছরে গ্রুপটি ৬৯টি দেশে পোশাক রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা বা ১৫ কোটি ডলার দামে সাড়ে ৬ কোটি পোশাক রপ্তানি করেছে স্পেনে। তালিকায় এর পরেই রয়েছে ফ্রান্স, ইতালি, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশ রয়েছে। সব মিলিয়ে এই গ্রুপ গত অর্থবছর ৪ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা বা ৪২ কোটি ৯৯ লাখ ডলার দামে ১৭ কোটি ৪৮ লাখ পিস পোশাক রপ্তানি করেছে।
মণ্ডল গ্রুপ সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে টি-শার্ট। গত অর্থবছরে টি-শার্ট থেকে গ্রুপটির মোট রপ্তানি আয়ের ৪০ শতাংশ এসেছে। তাদের প্রতি পিস টি-শার্টের গড় রপ্তানি মূল্য ২৪৪ টাকা বা আড়াই ডলার।
মণ্ডল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল মজিদ মণ্ডল। বর্তমানে তাঁর ছেলে আবদুল মমিন মণ্ডল ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য।
১৪ কোটি পোশাক রপ্তানি ডিবিএলের
তিন দশক আগে যুক্তরাজ্যে তিন হাজার পিস পলো শার্ট রপ্তানির মধ্য দিয়েই হাতেখড়ি হয়েছিল দুলাল ব্রাদার্স লিমিটেড (ডিবিএল) গ্রুপের। গত অর্থবছরে তারা ১৪ কোটি পিস পোশাক রপ্তানি করেছে ৪২ কোটি ৮৬ লাখ ডলারে।
ডিবিএল গ্রুপের পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা সিঅ্যান্ডএ। গত অর্থবছরে গ্রুপটির মোট রপ্তানির ২৬ শতাংশের আমদানিকারক জার্মানভিত্তিক এই খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। এরপর রয়েছে এইচঅ্যান্ডএম ও পুমা। এই দুই ক্রেতার কাছে রপ্তানি হয়েছে ৩৭ শতাংশ পোশাক। এ ছাড়া হুগো বস, মার্কস অ্যান্ড স্পেনসারের মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডও ডিবিএলের পোশাকের ক্রেতা।
গত অর্থবছরে ৫৯টি দেশে রপ্তানি হয়েছে ডিবিএলের পোশাক। মোট পোশাকের ৩৬ শতাংশ বা ৫ কোটিই ছিল টি-শার্ট। তাদের রপ্তানি তালিকায় রয়েছে অন্তর্বাস, শার্ট, জ্যাকেট, ট্রাউজার ইত্যাদি।
ডিবিএল গ্রুপ গড়ে তুলেছেন চার ভাই। তাঁরা হলেন আবদুল ওয়াহেদ, এম এ জব্বার, এম এ রহিম ও এম এ কাদের।
প্যাসিফিকের রপ্তানির ৯১ শতাংশই জিনস
বাংলাদেশ থেকে প্রথম জিনস রপ্তানির নেপথ্য কারিগর ছিলেন চট্টগ্রামের উদ্যোক্তা এম নাসির উদ্দিন। তাঁর হাতে গড়া প্যাসিফিক জিনস এখনো জিনস রপ্তানির নেতৃত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে জিনসের পাশাপাশি নিট ও কাজের পোশাক (ওয়ার্কওয়্যার) রপ্তানি করছে তারা। তবে প্যাসিফিক গ্রুপের রপ্তানি পণ্যের ৯১ শতাংশই জিনস প্যান্ট।
প্যাসিফিক জিনসের বড় ক্রেতা জাপানের বহুজাতিক খুচরা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান ইউনিক্লো। এ ছাড়া সিঅ্যান্ডএ, টেসকো, মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার, টম টেইলরের মতো ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো আস্থায় রাখছে প্যাসিফিককে। বিশ্বের ৫২টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে প্যাসিফিকের পোশাক। গত অর্থবছর এই গ্রুপের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৩৮ কোটি টাকা বা ৪০ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
প্যাসিফিক জিনস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘আমার বাবার হাতে ধরে যে প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়েছিল, দ্বিতীয় প্রজন্ম হিসেবে আমরা তার হাল ধরেছি। ডেনিম দিয়ে শুরু করলেও এখন আমরা বৈচিত্র্যময় পণ্য উৎপাদনে বিনিয়োগ করছি। নতুন নতুন নকশার পণ্য উদ্ভাবনের মাধ্যমে আরও উচ্চ মূল্যের পোশাক রপ্তানিই আমাদের লক্ষ্য। আমরা বিশ্বাস করি, প্যাসিফিক জিনসের প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারব।’
স্ট্যান্ডার্ডের রপ্তানির বেশির ভাগই ট্রাউজার
স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের রপ্তানি আয়ের বড় খাত ট্রাউজার। গত অর্থবছরে গ্রুপটির মোট আয়ের ৮৪ শতাংশ এসেছে ট্রাউজার রপ্তানি থেকে। বিশ্বের ৩২টি দেশে পোশাক রপ্তানি করেছে এই গ্রুপ। গত অর্থবছরে তারা ৪ কোটি ৩৩ লাখ পিস পোশাক রপ্তানি করে, যার দাম ছিল ৩ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা বা ৩৮ কোটি ৭১ লাখ ডলার। এই গ্রুপের মালিকানায় আছেন প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন ও আতিকুর রহমান। ২০১৩ সালে গাজীপুরে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল।
টি-শার্টে বড় পলমল
গড়পড়তা সস্তা পোশাকের তালিকায় রয়েছে টি-শার্ট। সস্তা হলেও পলমল গ্রুপের টি-শার্টের দাম কিন্তু কম নয়। পলমলের সবচেয়ে বেশি দামি টি-শার্ট রপ্তানি হয় ৬৪ ডলার বা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার টাকায়। গত অর্থবছর ৪১-৬৪ ডলারে টি-শার্ট রপ্তানি করেছে তারা। এই টি-শার্টের প্রধান ক্রেতা ওল্ড নেভি, ওয়ালমার্ট ও লিভাইসের মতো ব্র্যান্ড।
গত অর্থবছরে গ্রুপটির রপ্তানি আয়ের ৪৩ শতাংশই এসেছে টি-শার্ট থেকে । সব মিলিয়ে এই শিল্পগোষ্ঠী পোশাক রপ্তানি করেছিল ৩ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা বা ৩৮ কোটি ৫৯ লাখ ডলারের। পলমল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা নূরুল হক সিকদার। বর্তমানে তাঁর ছেলে নাফিস সিকদার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
বেক্সিমকোর ২১ কারখানার পণ্য রপ্তানি
বেক্সিমকো গ্রুপের ২১ কারখানায় তৈরি পোশাক রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ৪১ দেশে। এই শিল্পগোষ্ঠীর মালিকানায় রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
বেক্সিমকোর সবচেয়ে বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ইনডিটেক্স। এ ছাড়া মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার, প্রাইমার্ক, বেস্টসেলার, সিঅ্যান্ডএ, ল্যান্ডস অ্যান্ডের মতো বহু ক্রেতার কাছে পোশাক রপ্তানি করে তারা। বেক্সিমকোও দামি পোশাক রপ্তানি করছে। গ্রুপটির দামি পোশাকের তালিকায় রয়েছে জ্যাকেট ও ওভেন শার্ট।
প্রতি পিস রপ্তানি হয় ১৫০ থেকে ১৬৮ ডলারে। প্রায় ৭৪ ধরনের পোশাকপণ্য করছে তারা। এই তালিকায় বৈচিত্র্যময় পোশাক হলো আইসোলেশন গাউন। গত অর্থবছর যুক্তরাষ্ট্রে ১ কোটি ১৮ লাখ পিস আইসোলেশন গাউন রপ্তানি করেছে তারা। গত অর্থবছর বেক্সিমকো ৩ হাজার ৬৭৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে।
একেএইচের প্রধান রপ্তানি পণ্য শার্ট
দেশের নবম শীর্ষস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারক শিল্পগোষ্ঠী একেএইচ গ্রুপের প্রধান রপ্তানি পণ্য হচ্ছে শার্ট। গত অর্থবছরে গ্রুপটির রপ্তানি আয়ের ৬৫ শতাংশই শার্ট থেকে এসেছে। সব মিলিয়ে তারা ৩ হাজার ১০৯ কোটি টাকা বা ৩১ কোটি ২৬ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে।
শার্ট ছাড়াও জ্যাকেট, প্যান্ট, টি-শার্টসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করছে গ্রুপটি। গত অর্থবছরে ৪৬টি দেশে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি পিস পোশাক রপ্তানি করেছে তারা। একেএইচের প্রধান ক্রেতা এইচঅ্যান্ডএম। একেএইচ গ্রুপের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামসুল আলম। উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আছেন মো. আবুল কাশেম।
এশিয়ান-ডাফের বড় ক্রেতা ওয়ালমার্ট
পোশাক রপ্তানিতে দশম অবস্থানে থাকা এশিয়ান ডাফ গ্রুপের বড় তিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান হলো ওয়ালমার্ট, গ্যারেন ও টার্গেট। গত বছর গ্রুপটির রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ এসেছে এই তিন ক্রেতা থেকে। এর মধ্যে ওয়ালমার্টই নিয়েছে তাদের মোট রপ্তানির ৩৬ শতাংশ পোশাক। সব মিলিয়ে গত অর্থবছর তাদের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৭৬ কোটি টাকা বা ৩০ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। এটি বিজিএমইএ এর সাবেক সহসভাপতি আব্দুস সালামের প্রতিষ্ঠান।
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, ‘বাংলাদেশের কারখানায় উচ্চ ও মাঝারি মূল্যের তৈরি পোশাক উৎপাদন হওয়ার বিষয়টি খুবই ইতিবাচক। এই সক্ষমতার বিষয়টি আরও ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছে পৌঁছানো গেলে এসব পোশাক তৈরির পরিমাণ বাড়বে।’ তিনি আরও বলেন, উচ্চ ও মাঝারি মূল্যের পোশাক তৈরির কৌশল অনেকে গোপন রাখতে চাইবে।
বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ যদি এসব পোশাক তৈরিতে কী ধরনের যন্ত্রপাতি, কেমন বিনিয়োগ, কেমন দক্ষতার শ্রমিক লাগবে সেগুলো অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে তুলে ধরতে পারে, তাহলে যাঁরা বিনিয়োগে আগ্রহী, তাঁরা সহজেই সুযোগটি নিতে পারবেন। তাহলে উচ্চ ও মাঝারি মূল্যের পোশাক রপ্তানিতে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে দেশ।