আশুলিয়ার ভাদাইলে প্রয়াত সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম শামাকে স্মরণ: শ্রমিকের বর্তমান অবস্থা ও লড়াইয়ে নিজস্ব শক্তি গড়ে তোলা প্রসঙ্গ–শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত
গতকাল ১৮ আগস্ট ২০২৩, শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪ টায় গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি আশুলিয়া শাখার উদ্যোগে ভাদাইলে কার্যালয়ের সামনে প্রয়াত সাংগঠনিক সম্পাদক এবং আশুলিয়ার প্রিয় শ্রমিক নেতা আমিনুল শামার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে আলোচনাসভা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। শামাকে স্মরণ: শ্রমিকের বর্তমান অবস্থা ও লড়াইয়ে নিজস্ব শক্তি গড়ে তোলা প্রসঙ্গ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় আশুলিয়া শাখার সভাপ্রধান জিয়াদুল ইসলামের নেতৃত্বে। সভায় বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন, গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য লীগের সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার হোসেন, স্বাধীন বাংলা গার্মেন্ট শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি আল কামরান, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আশুলিয়ার সংগঠক ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো শাহজাহান, ন্যাশনাল ওয়ার্কাস ইউনিটি সেন্টারের সহ-সভাপতি সেলিনা হোসেন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের আশুলিয়া শাখার সভাপতি মো. খোরশেদ আলম, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সাভার-আশুলিয়ার সভাপতি আশিক সরকার, জাতীয় নীট ডাইং গার্মেন্ট শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন সাভার আশুলিয়ার সভাপতি শাহাদাত হোসেন স্বপন, বিপ্লবী গার্মেন্ট গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি ফেডারেশনের আশুলিয়ার সভাপতি মো আলমগীর হোসেন ও অন্যান্য্য আঞ্চলিক নেতৃত্ব।
এছাড়া ৩ দিনের আয়োজনে শামা স্মরণে আলোচনা ও শিশুদের সাংস্কৃতিক আয়োজন চলছে আশুলিয়ায়। উল্লেখ্য ২০২০ সালে করোনাকালে জটিল হ্রদরোগে আক্রান্ত হয়ে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও আশুলিয়ার জনপ্রিয় নেতা শামা মাত্র ৩৬ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে যান। তিনি ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে এ ১৭ আগস্ট ২০২০ এ মৃত্যু বরণ করেন। করোনাকালেও তার গুনগ্রাহী এবং শ্রমিকাঞ্চলে হাজারো মানুষের ভীড় জমে তাকে দেখার জন্য। নদী ভাঙ্গা অঞ্চল সিরাজগঞ্জ জেলার খাসরাজীবাড়ী থানার শামা ছোট বয়স থেকেই রাজনৈতিক পারিবারিক আবহাওয়ায় বড় হয়। দারিদ্রের কারণে খুব অল্প বয়সে ১৪-১৫ বছর বয়স থেকে পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করে। ২০০৮ সালে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হন। প্রায় ১২ বছর আশুলিয়ার বান্দু, কুইন সাউথ, বেক্সিমকোসহ নানা কারখানায় কাজ করে। কুইন সাউথে তিনি শ্রমিকের নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য আমিনুল ইসলাম শামার হাত ধরে পোশাক শ্রমিকদের গুরুত্বপূর্ণ কাজের অঞ্চল আশুলিয়ায় কাজের বিস্তৃতি ঘটে। শামার মৃত্যুতে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতিসহ শ্রমিক আন্দোলনের অপুরনীয় ক্ষতি হয়েছে। শামা তার সাংগঠনিক দক্ষতা, বন্ধু বৎসল আচরণ ও অন্যের বিপদে পাশে থাকবার জন্য শ্রমিকাঞ্চলে পরিচিত এবং প্রিয় নেতৃত্ব ছিলো। তার কর্মদক্ষতা ও বাস্তব ভিত্তিক জ্ঞান তাঁকে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করেছিলো। করোনার বিপদকালেও অসুস্থতার সময় সংগঠনের সদস্য শুভানুধ্যায়ীরা ছাড়াও আশুলিয়ার শ্রমিক, শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বরা ঐক্যবদ্ধভাবে শামাকে সহযোগিতা করেছিলো। যেটি ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা ও বিরল ঘটনা।
সংগঠনের সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, শামা যে শ্রমিকাঞ্চলে শ্রমিকদের সংগঠিত করার কাজ করেছে সেটি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শ্রমিকাঞ্চল, আশুলিয়া। এই আশুলিয়ায়সহ সকল শ্রমিকাঞ্চলে শ্রমিকরা যাতে সংগঠিত হতে না পারে, তার জন্য নানা ফাঁদ মালিক-সরকার পেতে রেখেছে। ভয় ও প্রলোভনের ফাঁদে শ্রমিক নেতৃত্ব এবং শ্রমিক এলাকা– দুইকেই দুষিত করার চেষ্টায় মত্ত মালিক ও ক্ষমতাসীনরা। শত সংকটেও শ্রমিকরা যাতে প্রকৃত ইউনিয়ন এবং মজুরি বৃদ্ধিসহ অন্যান্য আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারে তার জন্য এই অপচেষ্টা। তাসলিমা আরো বলেন, আশুলিয়াসহ সকল শ্রমিক অঞ্চলে শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী চক্রর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে নিজস্ব শক্তিতে লড়াই গড়ে তুলতে হবে। শ্রমিকের স্বার্থের পক্ষে নিজস্ব ঐক্যবদ্ধ শক্তি ছাড়া এই দুষিত আবহাওয়া মোকাবিলা করা যাবে না। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি ২৫ হাজারে বৃদ্ধিতে সকল বাঁধা ও প্রলোভন উপেক্ষা করে লড়াইয়ে থাকতে পারার মধ্যেই শামাকে স্মরণ করা যাবে।
আলোচনা সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, জীবিত শামার চেয়ে মৃত শামা অনেক শক্তিশালী হয়ে বেঁচে আছে তার কাজের মধ্যে দিয়ে। শামা না থাকলেও শ্রমিকের আন্দোলনের মধ্যে তার সংগঠনের মধ্যে সে বেঁচে আছে। মূল ধারার ইতিহাসে সবসময় দেশের মেহনতি মানুষ এবং শ্রমিক রাজনীতির ইতিহাস উপেক্ষিত। শ্রমিকের রাজনীতির ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখতে শামাকে স্মরণ করা জরুরি। শামা অসুস্থ অবস্থায় শ্রমিক, শ্রমিক সংগঠন , বন্ধু শুভানুধ্যায়ীরা ঐক্যবদ্ধভাবে যেভাবে পাশে ছিলেন সেইভাবে বর্তমান মজুরি আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে করার আহবান জানান বক্তারা।
তারা আরো যোগ করেন, শামা শারিরীকভাবে অনুপস্থিত হলেও তিনি বেঁচে থাকবেন পোশাক শ্রমিকের লড়াই ও সংগ্রামে। ২০১৮ সালের মজুরি আন্দোলনে শামা গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রেখেছিলো। শামা বলেছিলো ‘‘ শ্রমিকরা কোন ষড়যন্ত্র করে না, পেটের জন্য, ভাত-কাপড়ের জন্য, সন্তানের শিক্ষা, ভালো মানের চিকিৎসা এবং মাথা গোঁজার ঠাইয়ের জন্য বাধ্য হয় মজুরি আন্দোলন করতে..’’ এই বক্তব্যটির তাৎপর্য বর্তমান মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে আবারও সত্য হয়ে সামনে এসছে। বর্তমানে শ্রমিকরা তাদের মজুরি ২৩ থেকে ২৫ হাজার টাকা বৃদ্ধির আন্দোলন করছে। এই আন্দোলন তাদের বেঁচে থাকার এবং অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন বলে অভিমত প্রকাশ করেন নেতৃত্ব। শ্রমিকের নিজেস্ব শক্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মজুরি বৃদ্ধিসহ, শ্রমিকের উপর সকল জুলুম নির্যাতনের বিরূদ্ধে শক্তিশালী আন্দোলনের আহবান জানান তারা।
পরবর্তী কর্মসূচি:
১.প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা ও ২ দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও শিশুদের সাংস্কৃতিক আয়োজন ১৭ আগস্ট ২০২৩ বেলা ৫ টা থেকে রাত ৮টা আশুলিয়া
২. আলোচনা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী: আলোচনার বিষয়: শামাকে স্মরন: শ্রমিকের বর্তমান অবস্থা ও লড়াইয়ের নিজস্ব শক্তি গড়ে তোলার প্রসঙ্গ। ১৮ আগস্ট ২০২৩, ভাদাইল , আশুলিয়া আলোচক: তাসলিমা আখতার, বাবুল হোসেন, জিয়াদুল ইসলাম, রূপালী আক্তার, স্থানীয় শাখা নেতৃত্ব ও অন্যান্য আঞ্চলিক সংগঠনের শ্রমিক নেতৃবৃন্দ
৩.এছাড়া সাভার, গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ ও চট্টগ্রামে শ্রদ্ধা ও আলোচনা ১৭ আগস্ট থেকে ১৯ আগস্ট ২০২৩ পর্যন্ত।