মানুষকে ক্ষুধার্থ রেখে করোনা প্রতিরোধে লকডাউন কার্যকর হচ্ছে না-সিপিবি

সিপিবি ঢাকা কমিটি’র সভাপতি কমরেড মোসলেহ উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাজেদুল হক রুবেল করোনা মহামারী মোকাবেলায় গণমাধ্যমে প্রকাশার্থে নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেন:

সরকারের সাধারন ছুটির নামে লকডাউনের আজ ১৯তম দিন। দীর্ঘ এ সময়ে সাধারণ মানুষ, বিশেষত: যারা দিন আনেন দিন খান, তাদের জীবন ক্রমশ দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ইতিপূর্বে ঘোষিত রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার আপতকালীন প্রণোদনা প্যাকেজসহ প্রধানমন্ত্রী ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। যেখানে বড় শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানসমূহকে ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং ক্ষুদ্র-কুটির ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে ২০ হাজার কোটি টাকা শতকরা ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকার এই শতকরা ৯ শতাংশ সুদের ভেতর বড় শিল্পে ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র-কুটির ও মাঝারি শিল্পে শতকরা ৫ শতাংশ ভর্তুকি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্যদিকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষিদের জন্য শতকরা ৫ শতাংশ সুদে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কৃষিতে ঘোষিত এ প্রণোদনা পর্যাপ্ত নয়। আমাদের প্রস্তাবনা এই যে, করোনা পরবর্তি সময়ে খাদ্য সংকটের আশংকা মোকাবেলায় ১. ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী বিশেষত: সবজি চাষী, ছোট ও মাঝারি পোল্ট্রি, মৎস্য ও গবাদিপশু খামারীদের কাছে সরাসরি প্রণোদনার অর্থ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা। ২. বিনা সুদে অর্থ সহযোগিতা প্রদান করা। ৩. কৃষিক্ষেত্রে প্রণোদনার পরিমাণ ৫ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার কোটি টাকা করা।

আমরা লক্ষ্য করছি যে, সরকারি নির্দেশনা থাকার পরও অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিশেষত: গার্মেন্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানে লে-অফ ও শ্রমিক ছাঁটাই চলছে। মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করা হচ্ছে না। স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। সরকার ঘোষিত ছুটির ভেতর গার্মেন্টের ছুটি বাতিল করে সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শ্রমিকদের হাঁটিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। শুধু শ্রমিকদেরই নয় সারাদেশের মানুষদেরই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলা হয়েছে। আবারও শিল্প মালিকেরা প্রমাণ করেছেন, শ্রমিকদের তারা মানুষ মনে করেন না। তাদের কাছে মুনাফাই সকল কিছুর উর্দ্ধে। আমরা শিল্প শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, চাকরি থেকে ছাঁটাই বন্ধ, আপতকালীন সময়ে পরবর্তি তিন মাসের বেতন প্রদান ও রেশনের ব্যবস্থা করার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি। পাশাপাশি ক্ষুদ্র দোকানি, দোকান কর্মচারী, হকার ও ভাসমান শ্রমজীবিদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রতি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করার জোর দাবী জানাচ্ছি। ঢাকা কমিটি বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ক্লিনিকে কর্মরত কর্মচারী, দোকান কর্মচারী ও গৃহকর্মী সহ সকল নিম্ন আয়ের শ্রমজীবিদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করার দাবী জানাচ্ছে।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে অসহায় মানুষদের সহায়তা প্রদানের জন্য কর্মসূচী পরিকল্পনা পর্যায়ে আছে বলে আমরা পত্রিকা থেকে জেনেছি। পরিকল্পনা অনুয়ায়ী ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিল’রকে প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি কমিটি করার কথা বলা হয়েছে। যেখানে এনজিও’র তিন জন, মসজিদ কমিটির তিনজন ও এলাকার গণ্যমান্য তিন ব্যক্তিকে নিয়ে কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। এ কমিটি ওয়ার্ডের দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত অসহায় মানুষের তালিকা প্রণয়ন, চাহিদা সংগ্রহ ও সেই অনুযায়ী ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব নেবেন। সিপিবি ঢাকা কমিটি এ ধরনের কমিটি গঠনে এলাকার সকল দলের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবার জোর দাবী জানাচ্ছে। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, সাম্প্রতিক দেশব্যাপী ত্রাণ কার্যক্রমে সরকারী দলের ব্যাপক দুর্নীতি লুটপাট চলছে। এ রকম কয়েকজন সরকারী দলের নেতাকর্মীদের ইতিমধ্যেই আটক ও শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু ঢাকা কমিটি মনে করে যে, শুধুমাত্র আইন প্রয়োগ করেই এই দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না। ত্রাণ কার্যক্রম ও খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হলে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সকল পর্যায়ে সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ভেতর দিয়েই একটি স্বচ্ছ জবাবদিহিতামূলক ত্রাণ ও খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। আর তাই ঢাকা কমিটি ঢাকা’র দুটি সিটি কর্পোরেশন সহ দেশের সকল অঞ্চলে খাদ্য ও ত্রাণ সহায়তা প্রদানে সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবার দাবী জানাচ্ছে। ঢাকার ভোটার নন, কিন্তু ঢাকায় বাস করেন তাদেরকেও ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তা তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করার আহ্বান জানাচ্ছে।

সিপিবি ঢাকা কমিটি করোনা আক্রান্ত রোগিদের সেবায় নিয়োজিত সামনের সারির চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের চাকরি ও তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে নিরাপত্তা সামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিত করবার দাবী জানাচ্ছে। চিকিৎসা খাতে নিরঙ্কুশ দলীয়করণ ও দুর্নীতি’র চিত্র আড়াল করে পুরো চিকিৎসক সমাজকে ‘বলির পাঁঠা’ বানানোর চক্রান্ত রুখে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। দুর্নীতিগ্রস্থ স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আমূল সংস্কার ছাড়া এ ধরনের জাতীয় দূর্যোগ কোনভাবেই মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। তাই সিপিবি ঢাকা কমিটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আমূল সংস্কারে ও জনমুখী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলবার লক্ষ্যে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জোর দাবী জানাচ্ছে।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *