আজ প্রয়াত সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম শামার ৩ য় মৃত্যু বার্ষিকীতে শ্রদ্ধা, আলোচনা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীর মধ্য ৩ দিনব্যাপী আয়োজন অনুষ্ঠিত
আজ ১৭ আগস্ট ২০২৩, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১ টায় গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির হাতিরপুলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে (৩০৫ রোজভিউপ্লাজা, ১৮৫ বীরউত্তমসিআর দত্ত রোড, হাতিরপুল, ঢাকা) সংগঠনের প্রয়াত সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম শামার ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা অর্পনের মধ্য দিয়ে ৩ দিনব্যাপী আয়োজন শুরু হয় । শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় সভাপ্রধান তাসলিমা আখতারসহ উপস্থিথ হন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কাস ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয় কেন্দ্রের সহসাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর মঈন, গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সাধারন সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সবুজ, বহুমুখি শ্রমজীবি ও হকার সমিতির সভাপতি বাচ্চু ভুইয়া, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান রিচার্ডসহ আরো অনেক সংগঠনের নেতৃত্বরা উপস্থিত হন। আমিনুল ইসলাম শামার প্রতিকৃতিতে পুস্প দিয়ে বক্তব্য রাখেন, মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্ব। আজ কেন্দ্রীয়ভাবে এবং আশুলিয়ায় শাখার কাজের অঞ্চলসহ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সকল শাখায় শামার প্রতিকৃতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। একই সাথে আশূলিয়া শাখায় ২ দিনের আলোকচিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়েছে বিকাল ৪টা থেকে আশুলিয়া ভাদাইল কার্যালয়ের সামনে।
উল্লেখ্য ২০২০ সালে করোনাকালে জটিল হ্রদরোগে আক্রান্ত হয়ে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও আশুলিয়ার জনপ্রিয় নেতা শামা মাত্র ৩৬ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে যান। তিনি ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে এ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ এ মৃত্যু বরণ করেন। করোনাকালেও তার গুনগ্রাহী এবং শ্রমিকাঞ্চলে হাজারো মানুষের ভীড় জমে তাকে দেখার জন্য। নদী ভাঙ্গা অঞ্চল সিরাজগঞ্জ জেলার খাসরাজীবাড়ী থানার শামা ছোট বয়স থেকেই রাজনৈতিক পারিবারিক আবহাওয়ায় বড় হয়। দারিদ্রের কারণে খুব অল্প বয়সে ১৪ -১৫ বছর বয়স থেকে পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করে। ২০০৮ সালে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য থেকে শ্রমিক রাজনীতি করেন। প্রায় ১২ বছর আশুলিয়ার বান্দু, কুইন সাউথ, বেক্সিমকোসহ নানা কারখানায় কাজ করে। কুইন সাউথে তিনি শ্রমিকের নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলো।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, সহসাধারণ সম্পাদক দীপক রায়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কাস ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয় কেন্দ্রের সহসাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর মঈন, গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সাধারন সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সবুজ তাঁকে স্মরণ করে বক্তব্য রাখেন। শামার মৃত্যুতে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতিসহ শ্রমিক আন্দোলনের অপুরনীয় ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন নেতৃত্ব।
তারা বলেন, শামা শারিরীকভাবে অনুপস্থিত হলেও তিনি বেঁচে থাকবেন শ্রমিকের লড়াই ও সংগ্রামে। ২০১৮ সালের মজুরি আন্দোলনে শামা গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রেখেছিলো। এবং তারা শামার ‘‘ শ্রমিকরা কোন ষড়যন্ত্র করে না, পেটের জন্য, ভাত-কাপড়ের জন্য, সন্তানের শিক্ষা, ভালো মানের চিকিৎসা এবং মাথা গোঁজার ঠাইয়ের জন্য বাধ্য হয় মজুরি আন্দোলন করতে..’’ এই বক্তব্যটির তাৎপর্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, বর্তমান সময়ে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে শামার মতো শ্রমিক নেতাদের অভাব বার বার স্মরণ করিয়ে দেয়। বর্তমানে শ্রমিকরা যে ২৫ হাজার টাকা মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন করছে সেটি তাদের বেঁচে থাকার এবং অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন। শামার ২০১৮ সালে মজুরি আন্দোলনে রাখা বক্তব্যে সেই বাস্তব সত্যটি উঠে এসছে বলে তারা মত প্রকাশ করেন।
তারা আরো বলেন, শামা যে শ্রমিকাঞ্চলে শ্রমিকদের সংগঠিত করার কাজ করেছে সেটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রমিকাঞ্চল আশুলিয়া। আশুলিয়ায়সহ সকল শ্রমিকাঞ্চলে শ্রমিকরা যাতে সংগঠিত হতে না পারে, তার জন্য নানা ফাঁদ মালিক-সরকারের পাতা আছে। শ্রমিক আন্দোলন দুষিত করার জন্য সার্বক্ষনিক চেষ্টায় আছে মালিকরাসহ সরকারের নানা গোয়েন্দা সংস্থা। এই অবস্থায় আশুলিয়ার মতো জায়গায় তরুণ শামা দুষিত শ্রমিক রাজনীতির প্রবণতার বিরূদ্ধে লড়াই করেছিলো যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।। তার সাংগঠনিক পারদর্শীতা এবং অন্যের বিপদে পাশে থাকার প্রবণতা এখনো শামাকে তাঁর কাজের এলাকা আশুলিয়া এবং তার জন্মস্থান খাসরাজ বাড়ীতে জনপ্রিয় করে রেখেছে। তারা বলেন, শামাকে পোশাক শ্রমিকের লড়াই সংগ্রামে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। ঐক্যবদ্ধ লড়াই সংগ্রামে শামা বেঁচে থাকবে।
তারা আরো বলেন, মূল ধারার ইতিহাসে সবসময় দেশের মেহনতি মানুষ এবং শ্রমিক রাজনীতির ইতিহাস উপেক্ষিত। শামার সংগ্রামকে এবং শ্রমিকের রাজনীতিকে ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখতে শামাকে স্মরণ করা জরুরি। শামা অসুস্থ অবস্থায় শ্রমিক, শ্রমিক সংগঠন , বন্ধু শুভানুধ্যায়ীরা অর্থসহযোগিতাসহ নানাভাবে যেভাবে পাশে ছিলেন সেইভাবে বর্তমান ২৫ হাজার টাকার মজুরি আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকলকে লড়াই সংগ্রাম করার আহবান জানান।
পরবর্তী কর্মসূচি:
১.প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা ও ২ দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও শিশুদের সাংস্কৃতিক আয়োজন ১৭ আগস্ট ২০২৩ বেলা ৫ টা থেকে রাত ৮টা আশুলিয়া
২. আলোচনা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী: আলোচনার বিষয়: শামাকে স্মরন: শ্রমিকের বর্তমান অবস্থা ও লড়াইয়ের নিজস্ব শক্তি গড়ে তোলার প্রসঙ্গ। ১৮ আগস্ট ২০২৩, ভাদাইল , আশুলিয়া আলোচক: তাসলিমা আখতার, বাবুল হোসেন, জিয়াদুল ইসলাম, রূপালী আক্তার, স্থানীয় শাখা নেতৃত্ব ও অন্যান্য আঞ্চলিক সংগঠনের শ্রমিক নেতৃবৃন্দ
৩.এছাড়া সাভার, গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ ও চট্টগ্রামে শ্রদ্ধা ও আলোচনা ১৭ আগস্ট থেকে ১৯ আগস্ট ২০২৩ পর্যন্ত।