করোনাদুর্গত সহযোগিতা কেন্দ্রের সাথে যুক্ত থাকায় অনেকের ফোন পাচ্ছি যাদের কেউ প্রাইভেট কোম্পানি, স্কুলে বা কলেজে চাকরি করেন, কেউবা রং মিস্ত্রী, কাঠ মিস্ত্রী, গাড়ি চালক। তাদের কেউই বেতন পায়নি অথবা ঘরে এখন আর কোন নগদ অর্থ নেই। তাদের কারো কারো ঘরে তিন দিন বা বড় জোর এক সপ্তাহের খাবার-দাবার থাকলেও জরুরি ওষুধ কিনতে পারছেন না।
তারা ভাবছেন করোনাদুর্গত সহযোগিতা কেন্দ্র একটা এনজিও অথবা সরকারি প্রতিষ্ঠান। তাদের বলছি এটা আসলে কিছু মানুষের সমবেত প্রচেষ্টা, তাই আমাদের সামর্থ্য খুবই কম। উত্তরে দুই-একজন জানালেন, যেটুকু পারবেন, সেটাও আমাদের জন্য এখন অনেক অনেক বড় কিছু।
এ রকম পরিস্থিতিতে দুঃখজনক হলো বিশ্বের বৃহত্তম এনজিও ব্র্যাকের মালিকানাধীন বিকাশ তাদের কমিশনের টাকা প্রতি হাজারে বিশ যথারীতি বহাল রেখেছে। লাভ তো করতেই হবে! কাউকে এক হাজার টাকা বিকাশে পাঠালে বিশ টাকা কম পাচ্ছেন! আবার এরকম একটা দুর্যোগকালে বিকাশ থেকে বিকাশে টাকা পাঠাতে গেলেও প্রতিবার পাঁচ টাকা করে কেটে নেয়া শুরু করেছে!
অথচ বিকাশ অন্তত নিজের লাভের একটা অংশ থেকে এই নগদ অর্থ সাহায্যে অংশগ্রহণ করতে পারে, এই কমিশনের পরিমানটা কমিয়ে দিয়ে।
আগামী এক-দুই মাসের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় বিকাশে আমরা যেই যৎসামান্য টাকা পাঠাতে পারছি, সেটাতেও আমাদের নিজেদেরই লজ্জায় পড়তে হচ্ছে। তারপরও ঐ যৎসামান্য টাকা পেয়ে উনারা যে রকম হিমালয়সমান দোয়া দিচ্ছেন, তাতে এটা বুঝতে পারছি অন্তত মানুষগুলোর বেঁচে থাকার জন্য এই মুহূর্তে কারো কারো জন্য নগদ অর্থের প্রয়োজনটাও প্রচণ্ড। তাই সরকারেরও উচিত এই দিকটায় মনোযোগী হওয়া।
মানুষ না বাঁচলে কী ব্যবসা বা ব্যবসায়ী বাঁচবে? শুধু রপ্তানি আয় দিয়ে কি বাংলাদেশ বাঁচবে?
লেখক : অধ্যাপক ড. তানজীমউদ্দিন খান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।