আজ প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিলসহ মজুরি বোর্ডের সামনে বিক্ষোভ
অবিলম্বে ২৫ হাজার টাকা মজুরি, মজুরি বোর্ডের কার্যবিবরণী প্রকাশ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত ও ৬৫% বেসিক, ১০% ইনক্রিমেন্ট এবং ৭ গ্রেডের বদলে ৫ গ্রেডের দাবিতে বিক্ষোভ।
আজ ১০ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় পোশাক শ্রমিক আন্দোলনের জোট ‘মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন’ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিলসহ মজুরি বোর্ডের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত করে। অবিলম্বে ২৫ হাজার টাকা মজুরি, মজুরি বোর্ডের কার্যবিবরণী প্রকাশ, স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত এবং ৬৫% বেসিক, ১০% ইনক্রিমেন্ট এবং ৭ গ্রেডের বদলে ৫ গ্রেডের দাবিতে মজুরি বোর্ডের সামনে এই বিক্ষোভ সভা অনুষ্ঠিত হয়। গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভা প্রধান তাসলিমা আখতারের সভাপতিত্বে এবং গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয়। বক্তব্য রাখেন, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহসভাপতি জলি তালুকদার, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম সবুজ, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শামীম ইমাম, জাতীয় সোয়েটার গার্মেন্টস ফেডারেশনের সভাপতি এ এম ফয়েজ হোসেন, ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক প্রকাশদত্ত, বিপ্লবী গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল ইসলাম ও প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, রপ্তানীর শীর্ষখাত পোশাক শিল্পের কারিগর শ্রমিকরা বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্যর উধ্বগতি ও মুদ্রাস্ফীতির জাতাকলে এক দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। এই কঠিন সময় মজুরি বোর্ডের বিলম্ব শ্রমিকদের জীবন নিয়ে কঠিন পরিহাসের সমতুল্য। তারা বলেন, ২য় রপ্তানীকারক দেশ এবং বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নে চীনকে ছাপিয়ে শীর্ষে থাকলেও এখনো আমাদের শ্রমিকদের স্বস্তা মজুরের পরিচয় ঘুচেনি। একদিকে, মালিকরা উন্নয়ন করছে। অন্যদিকে মাত্র ৮ হাজার মজুরিতে শ্রমিক ও তার পরিবার অপুষ্টি-রোগ-শোকে ভুগছে। এই বাজারে ২৫ হাজার টাকার নীচে শ্রমিকদের বাঁচা সম্ভব না। তাই অনতিবিলম্বে ২৫ হাজার টাকা মজুরির প্রস্তাব বিবেচনায় এনে বোর্ডকে মেয়াদকালে কার্যক্রম শেষ করার আহবান জানান নেতৃত্ব।
নেতৃবৃন্দ তীব্র ক্ষোভের সাথে উল্লেখ করেন, ৬ মেয়াদের ৪ মাস অতিবাহিত হয়েছে একদিন আগে। ইতিমধ্যেই আমরা শ্রমিকের মজুরি ২৫ হাজার টাকা করার ও অন্যান্য জোটও তাদের প্রস্তাব বোর্ডে জানিয়েছে। অথচ আজকের বৈঠকেও এখনো কোন পক্ষই কোন মজুরি প্রস্তাব করেছে বলে শোনা যায়নি। এই দীর্ঘসূত্রীতা শ্রমিকদের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্রিক জটিল সময়ে বিপদের মধ্যে নিক্ষেপেরই লক্ষন। তারা বলেন, আসন্ন রাজনৈতিক ডামাডোল এবং আতঙ্কের মধ্যে মজুরি আন্দোলনকে দমন এবং শ্রমিকদের দাবিকে উপেক্ষা করে লামছাম ধরিয়ে দেবার প্রচেষ্টা চলছে। নেতৃত্ব বক্তব্যে যোগ করেন, মজুরির মেয়াদকালে ঘোষণা না করে নির্বাচনী মওসুমের নিক্ষেপ করলে শ্রমিকরা নির্বাচন বর্জন করবে। তারা আরো বলেন, দেশে গণতন্ত্রর অভাব মজুরি বোর্ডে পরিলক্ষিত। এখানে সকল সদস্য আলাদাপক্ষ না হয়ে একপক্ষ হয়ে শ্রমিকের স্বার্থ বিরোধী কাজ করছে। নেতৃবৃন্দ ২৫ হাজার টাকা মজুরি দাবিসহ মজুরি বোর্ডের কার্যবিবরণী জনসমুক্ষে প্রকাশ এবং এর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জোর দাবি জানান।
তারা আরো বলেন, মজুরি বোর্ড কৌশলে মজুরি কাঠামো এমন রাখছে যাতে শ্রমিকের ক্ষতি হয় কিন্তু লাভ হয় মালিকের। যার নজির মজুরির বেসিকের হার নির্ধারনের মধ্যে পরিষ্কার। তারা বলেন ২০০৬ এর পর থেকে মজুরির হার কমানো হচ্ছে। ২০১৮ বেসিকের পরিমান কমতে কমতে ৫১.২% ঠেকেছে। এই বেসিক কখনোই গ্রহণযোগ্য না। তারা বলেন, মজুরির হার কমালে শ্রমিককে ওভার টাইম, গ্রাচুইটী, মাতৃত্বকালীন সুবিধাসহ অন্যান্য সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় । এইবার মজুরি কাঠামোতে মোট ২৫ হাজার টাকা মজুরিসহ ৬৫% বেসিক করার আহবান জানান তারা। একইসাথে তারা বলন, মজুরি কাঠামোতে বিভিন্ন উপভাগে করে মজুরি বৈষম্য জারি আছে। গ্রেডের বদলে ৫ গ্রেড করা এবং শিক্ষানবীশ গ্রেড বাতিল করার আহবান জানান তারা। তারা আরো বলেন ইপিজেড এবং ইপিজেড এর বাইওে কারখানাগুলোতে ইনক্রিমেন্টসহ রয়েছে। সকল কারখানায় ১০ % ইনক্রিমেন্ট করার আহবান জানান তারা। একইসাথে শ্রমিকদের আহবান করেন মজুরি বোর্ডকে দাবি বাস্তবায়নে তাগাদা দিতে আরো শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পথ প্রসস্ত করবার জন্য।