আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ২০২৩ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভাঃ
আদিবাসী তরুণদের পরিবর্তনের দূত হিসেবে তাদের ভূমিকা যথাযথভাবে পালনের আহ্বান জানিয়ে রাশেদ খান মেনন বলেন, সারা বিশ্বে দেখা গেছে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে মুক্তির জন্য যুবকরা বিভিন্ন যায়গাতে আন্দোলন সংগ্রাম করছে, আমাদের তরুণদেরও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, প্রজনন স্বাস্থ্য রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ২০২৩ উপলক্ষে্ বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) কর্তৃক আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
আজ ১০ আগস্ট বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় ঢাকস্থ মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপিএস এর পরিচালক শাহনাজ বেগম সুমি। আামাদের জীবন, আমাদের স্বাস্থ্য, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক সঞ্জয় মজুমদার এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, সমাজকল্যাণ সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এর সহ- সাধারণ সম্পাদক ডা. গজেন্দ্রনাথ মাহাতো, মটস্- কারিতাস পরিচালক জেমস গোমেজ, আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি হরেন্দ্রনাথ সিং, হিল উইমেন ফেডারেশন এর সভাপতি শান্তি দেবী তঞ্চঙ্গ্যা, , জাতীয় আদিবাসী পরিষদ বৃহত্তর ঢাকা কমিটির সদস্য সুরতী সিং, শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সিমাভি,বাংলাদেশের লবি এন্ড অ্যাডভোকেসি অফিসার ইসহাক ফারুকী এবং ধারণা পত্র উপস্থাপন করেন আদিবাসী ইয়ুথ নাই স্যু প্রু।
জনাব মেনন আরও বলেন, গবেষণা তথ্য অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে বাংলাদেশের উপকূল থেকে প্রায় তিন কোটি মানুষ ভবিষ্যতে বাস্তুচ্যুত হবে। আজকে চট্টগ্রামে বন্যা, পাহাড়ের ভূমিধস জলবায়ু পরিবর্তনেরই প্রভাব। মানবসৃষ্ট নানা কারনে বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে দেশ এবং বিশ্বকে বাঁচতে একমাত্র তরুনরাই। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, সকল আন্দোলনে যুবকরাই নেতৃত্ব দিয়েছে। পাহোড়ের আদিবাসী কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার বিষয়ক কার্যক্রমকে শুধুমাত্র এনজিওর মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এটিকে রাজনৈতিক ও রাষ্ট্র্রীয় দায়িত্ব হিসেবে দেখা দরকার।
জেমস গোমেজ, পরিচালক, মটস্ কারিতাস বলেন, এই বিশ্বে যুবকদের সংখ্যা বেশী, এজন্যই এবারের প্রতিপাদ্যে যুবকরা প্রাধান্য পেয়েছে। যুবকদের কারিগরী শিক্ষার পাশাপাশি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য মট্স কারিতাস আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ৩৩% যুবকদের কারিগরী প্রশিক্ষণের সুযোগ রেখেছে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অর্থায়নে এবং সিমাভি নেদারল্যান্ডস-এর সহযোগিতায় বাস্তবায়নাধীন ”আওয়ার লাইভস, আওয়ার হেলথ, আওয়ার ফিউচারস: এমপাওয়ারিং অ্যাডোলেসেন্ট গার্লস এন্ড ইয়াং উইমেন ইন চিটাগাং হিলট্রাক্টস টু লিভ উইথ ডিগনিটি এন্ড উইদাউট ভায়োলেন্স” প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস), বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরাম ও আদিবাসী যুব কাউন্সিল যৌথভাবে আয়োজিত জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলা, যুব/ কিশোর -কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার প্রতিষ্ঠায় আদিবাসী যুবাদের ভূমিকা শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার,বনজ সম্পদ ধ্বংস এবং অপরিকল্পিত নগরায়ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি, জীবন ও জীবিকার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এর জন্য প্রয়োজন হল, সবুজায়ন ও পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ, অধিকারবোধ জাগিয়ে তোলা, ও যুবদের নিজেদের মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করা।
বক্তারা আরও বলেন, সময়ের প্রবাহে আদিবাসী জীবনে শিক্ষার হার কোন কোন সম্প্রদায়ে বাড়লেও যোগাযোগ ব্যবস্থা যেখানে দুর্বল সেখানে শিক্ষা অগম্য রয়ে গেছে। অন্যদিকে, পাহাড়ে শুধু নয়, সমতলেও আদিবাসীদের আবাস দখল করে শিল্পায়ন বা পর্যটনে বিনিয়োগ, প্রকৃতিকে মুনাফার বস্তুতে পরিণত করা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ধরে নেওয়া হচ্ছে যা সম্পদের উপর থেকে আদিবাসীদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। পাহাড়ে সুপেয় পানির সংকট ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অনুন্নয়ন নারীদেরসহ সকলকেই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ঝুঁকিতে আছে কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য। কিশোর-কিশোরীরা স্বাস্থ্যঝুঁকির কারনে মানসিক সমস্যারও মুখোমুখি হচ্ছে।
পাহাড়ি বিশেষ করে চট্টগ্রাম পার্বত্য জেলার আদিবাসীদের বড় রাজনৈতিক অর্জন হল, ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত পার্বত্য শান্তি চুক্তি। এই চুক্তি একটি মাইলফলক। এই চুক্তির সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে ভূমিসহ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের অধিকার পাহাড়ে বসবাসরত জাতিগোষ্ঠীর নিজেদের জীবন নিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। এই কাজে সফলতা আসবে যদি আদিবাসী যুব সমাজ স্ব স্ব সম্প্রদায় বা জাতিগোষ্ঠীকে এসকল কাজে যুক্ত করা হয়।