গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর জন্য নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের উদ্যোগ
বর্তমান শ্রম আইন অনুযায়ী, প্রতি পাঁচ বছর পরপর নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের মাধ্যমে শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করতে হয়। এ লক্ষ্যে নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্হান মন্ত্রণালয়। মজুরি বোর্ড গঠনের লক্ষ্যে গত ২৬ জানুয়ারি শ্রমিক ও কারখানা মালিকপক্ষের প্রতিনিধিদের নামের তালিকা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়।
তৈরি পোশাক শিল্পে বর্তমানের ৪০ লাখেরও বেশী শ্রমিক কাজ করেন। এর আগে সর্বশেষ ২০১৮ সালের শুরুর দিকে মজুরি বোর্ড গঠন করা হয় এবং ওই বছরের ডিসেম্বর থেকে শ্রমিকদের ন্যূনতম বেসিক মজুরি ৪ হাজার ১ শত টাকা ও মোট মজুরি ৮ হাজার করে নতুন মজুরি নির্ধারণ করা হয়। সে সময় শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির দাবী ছিল ১৬ হাজার টাকা।
দেশে পণ্যমূল্য অস্বাভাবিকহারে বাড়তে থাকায় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের দাবি উঠতে থাকে। এ দাবিতে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা, সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর এলাকাসহ কয়েকটি এলাকায় শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ মিছিল, রাস্তা অবরোধ করে আসছিল। সে সময় প্রধানমন্ত্রী গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করার ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি।
গত কয়েক মাস ধরেই বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচী ও শ্রম ও র্কমসংস্থান মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচি পালন করে আসছে।
ইতিমধ্যে ১২টি গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনের জোট, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদ-জি-স্কপ ও ১৫টি গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনের জোট, ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিল-আইবিসি গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা দাবী জানিয়েছে। ১০টি গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনের জোট, গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলন গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা দাবী জানিয়েছে ও ৭টি গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনের জোট, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদ গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ২২ হাজার টাকা দাবী জানিয়েছে এবং যেসব সংগঠন কোন জোটে নেই তারাও নতুন মজুরি বোর্ড গঠন ও শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরির জানায়। অন্যদিকে ৫৩টি গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনের জোট গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ তারাও ন্যুনতম মজুরির দাবী জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ক্রমাগত পণ্যমূল্য বাড়ছে এবং গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। এর ফলে শ্রমিকদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখি। তবে বোর্ডে শ্রমিকদের পক্ষে যথাযথ প্রতিনিধি থাকা উচিত বলে মনে করি।
গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরির ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত বেসিকের ৫০% মর্ঘ্য ভাতা চালু এবং সব সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য রেশন কার্ডের মাধ্যমে বিতরণ করার দাবী জানাচ্ছি।
লেখকঃ খাইরুল মামুন মিন্টু, সভাপতি, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটি
