আমি মিতা, ১৯৯৯ সাল থেকে পল্লী বিদ্যুৎ এ চাকুরি করতাম। ২০১০ সালে হঠাৎ মেয়ের বাবা বললো ,জবটা ছেড়ে দাও ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া। সংসারে মন দাও।
সরল বিশ্বাসে অব্যাহতি দিলাম, ১১/ ১২ বছরের চাকুরী। তিনমাস পরই জানতে পারলাম সে ২য় বিয়ে করেছে। যাকে বিয়ে করেছে সে মহিলার স্বামি বিদেশ থাকতো ২ বাচ্চার মা। আমি পাগলের মত হয়ে গেলাম। তারপর অশান্তি শুরু হলো। ছেলেমেয়েরা বাবাকে সহ্য করতে পারলো না। সবসময় অশান্তি লেগে থাকতো। একসময় সে বাসায় আসা এবং খরচ দেয়া বন্ধ করে দিলো। ৩ সন্তানকে নিয়ে না খেয়ে মরার মত অবস্থা। কারন সে ব্যবসা করবে মিথ্যা বলে আমার ব্যাংক থেকে সব টাকা গহনা তিনি নিয়ে গেছেন। কঠিন সময়টাতে কোন আপনজন পাশে ছিল না কারন আমরা ৪ জন সদস্য। হাতে কানা কড়িও নাই। বড় মেয়ের টিউশনির সামান্য টাকা দিয়ে খুব কষ্টে চলছিলাম।অনেক সময় ২দিনও আমরা না খেয়ে থেকেছি।
এবার আসি ব্যবসার শুরু ….. ২০১৪ সাল আমার জন্য বড় চ্যালেঞ্জের ছিল। একদিন বের হয়েছিলাম ছোট্র একটা ব্যাগ পার্সে ভরে বায়িং হাউসে।ভাইটাকে বললাম ,বায়িং থেকে কিছু পণ্য দে স্কুলে বাবুকে দিয়ে বসে থাকি আপাদের কাছে সেল করবো। ভাইটা সেই থেকে পণ্য দেয়া শুরু করলো। তারপর চাহিদা বাড়তে থাকলো ব্যাগটা আমি আর আনতে পারিনি। ভাই দিয়ে যেতে থাকলো। চাহিদা বাড়লো কার্টুন ভরে পাঠাতে শুরু করলো। চাহিদা বাড়তে থাকলো , বস্তা করে সিএনজি তে পাঠাতে শুরু করলো। চাহিদা বাড়তে থাকলো ,বস্তা পিক-আপে পাঠাতে শুরু করলো।
আলহামদুলিল্লাহ এখন চহিদা সারাদেশে এত্তো বেশি যে সেই ছোট্র ব্যাগের ৩০/৪০ পিস এখনকার ৩/৪ হাজারেও মিটতেছে না। সবই আল্লাহর ইচ্ছে। এখন খিলক্ষেত এ অনলাইনে সবার কাছে বড় আপা বলে পরিচিত আমি /২০১৪-২০২২ চলছে আলহামদুলিল্লাহ্। আমার পণ্যের মান আর দাম সবার কাছে প্রিয়। গত ৬ বছরে আমার প্রায় সব কাস্টমার পারমানেন্ট হয়ে যায়। কোন শেয়ার ,বুষ্ট ,প্রমোট লাগে না। প্রচুর সেল হয় যা দিয়ে আমার বেশ ভাল আয়ের পথ হয়। আমি ২০১২ থেকে ৩ সন্তান নিয়ে একা আছি।
আজ ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে বিয়ে দিয়ে দিছি। বড় মেয়ে বিদেশ থেকে লেখাপড়া শেষ করেছে। যারা সবসময় সাথে আছে তারা জানে,আমি ব্যবসায়ীক মনোভাব নিয়ে কাজটা করি না। নিজের আপনজনদের কেনাকাটা মনে করে সব পারসেল করি ।ভুল হয় , সমস্যা হয় কিন্তু বোনগুলো সব সুধরে আমায় সাহস দেয় এটাই তাদের কাছে আমার বড় পাওয়া। তারাই আমার চালিকাশক্তি ,বোনেরা না থাকলে আমার এক আনারও দাম নেই।
সবসময় পাশে থাকে তারা। অনিচ্ছাকৃত ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখে আমিও সবার বড় আপাতেই তৃপ্ত। আমি আপনাদের সকলের দোয়ায় আজ ব্যবসার জন্য এখানেই (পেজে) পরে থাকি/সারাদেশ থেকে ২৬ জন পাইকারি পণ্য নেয়। বিদেশেও পাঠাই। তবে প্রাতিষ্ঠানিক ধারণা নেই/ ছিলাম বিজ্ঞানের ছাত্রী। ভাল কিছুশিখতে আরও একটু এগিয়ে যেতে চাই। আশা করি শিখতে পারবো সবার দোয়া প্রার্থী।
লেখকঃ মিতা নাজনিন,নারী উদ্যোক্তা