সামাজিক দূরত্ব বজায় গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য প্রযোজ্য নয় কেন?

বিজিএমইএ ও বিকিএমইএ এর বক্তব্য অনুযায়ী ২৮ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত করোনা ভাইরাস এর কারণে কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন গার্মেন্ট কারখানার মালিকদের । তবে জরুরী শিপমেন্ট বা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ মূলক পোষাক তৈরি করছেন প্রয়োজনে এমন কারখানা খোলা রাখতে পারবেন।

যেহেতু গার্মেন্ট মালিকেরা কারখানা বন্ধ কালীন সময় শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে তাই সরকার গার্মেন্ট মালিকদের ৫ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছেন শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য। অর্থনীতিবিদদের হিসাব অনুযায়ী করোনা ভাইরাস এর কারণে গার্মেন্ট শিল্পে যা ক্ষতি হবে তাতে ৪ হাজার কোটি টাকা দিলেই হয়ে যাওয়ার কথা, কারণ এসময় তাদের কোন কাঁচামাল কিনতে হবে না।

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস এর প্রভাব শুরু হওয়ার আগে থেকেই গার্মেন্ট মালিকরা মায়া কান্না শুরু করেছেন। তারা বলাবলি করছিলেন তারা কাঁচামালের অভাবে কিছুদিনের মধ্য গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ করে দিতে হবে, তারা যে গার্মেন্ট উৎপাদন করেছেন তা শিপমেন্ট হচ্ছে না, শিপমেন্ট হলেও মাল জাহাজ থেকে খালাস হচ্ছেনা, বায়ারদের সব আউটলেট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

অথচ সরকার যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, আনসার বাহিনীসহ সকল বাহিনী মোতায়েন করেছেন।বিজিএমইএ ও বিকিএমইএ এর বক্তব্য অনুযায়ী ২৮ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত করোনা ভাইরাস এর কারণে কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ করার পরে অনেক গার্মেন্ট মালিক জরুরী শিপমেন্ট এর কথা বলে তাদের কারখানা খোলা রেখেছেন।

জরুরি দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসা সহকারী ও টেকনিশিয়ান, সিটি করপোরেশন ও নিরাপত্তা প্রহরী ছাড়া কেও বাহিরে বের হতে পারবেনা বলে বার বার ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য এই নিয়ম মানা হচ্ছেনা কেন? তাহলে কি ধরে নিব শ্রমিকরা মানুষ না।

যেখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি রাস্তায় কয়েক জন এক সাথে বের হলেই তাদের উপর লাঠি চার্জ করা হচ্ছে, শ্রমজীবী মানুষদের কান ধরে অপমান করা হচ্ছে।কয়েক জন এক সাথে খাবার খাওয়ার কারণে খাবার হোটেল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মুদি দোকানে একটু ভিড় দেখলেই সেই দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

অথচ একটা গার্মেন্ট কারখানায় এক সাথে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করে, তারা একে ওপরের খুব কাছাকাছি বসে কাজ করে, তাদের একসাথে কারখানায় প্রবেশ করতে হয়, একসাথে কারখানা থেকে বের হতে হয়।তাদের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি কিন্তু তাদের নিরাপত্তার কথা কিছু গার্মেন্ট মালিক ভাবছেন না।বিষয়টি সরকারের উচিৎ ভালো ভাবে নজর দেওয়া।

আজ ২৮ মার্চ বেশীর ভাগ গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ থাকলেও বেশ কিছু গার্মেন্ট খোলা ছিল, কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকরা বন্ধের দাবী জানিয়ে কাজ না করেই বের হয়ে চলে আসে, কিছু কারখানায় শ্রমিকরা বের হতে চাইলেও বের হতে পারেনি, তাদের অনেক ভয়ভীতি প্রদর্শন করে জোর করে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হয়েছে।গার্মেন্ট মালিকদের এই ধরণের আচরণে শ্রমিকরা আতংকের মধ্য জীবন যাপন করছেন।

আজ ২৮ মার্চ আশুলিয়ার জামগড়া অবস্থিত এনভয় গ্রুপের মান্তা এ্যাপারেলস লিঃ গার্মেন্ট কারখানা করোনা ভাইরাসের কারনে বিজিএমইএ ঘোষনা অনুযায়ী আশে পাশের গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হলেও তাদের কারখানা বন্ধ করা হয়নি । বিকালে কারখানা ছুটির সময় শ্রমিকরা বন্ধের দাবী জানালে বিকাল আনুমানিক ৬ঘটিকার সময় কারখানার ভিতর মালিক পক্ষ পুলিশ দিয়ে শ্রমিকদের উপর হামলা চালায়। এতে কারখানার শ্রমিক বিলকিছ কার্ডনং ২৫২১২, অপারেটর সহ অনেকে আহত হয়। আহত শ্রমিকরা নারী ও শিশু হাসলাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

লিখেছেনঃ খাইরুল মামুন মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *