রাজধানীর নিউ ইস্কাটন দিলু রোডের নারমিন জেনারেল স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী উজ্জ্বল কুমার দে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মঙ্গলবার পাল্লায় (পাঁচ কেজি) ৩০ টাকা বেশি নিয়েছে। বুধবার পাল্লায় বেড়েছে আরও ২০ টাকা। খুচরা বাজারে এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪৫ টাকায় বিক্রি করছি। পাইকারেরা দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন।’
জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া বলেন, ‘আমদানি বন্ধ হওয়ার একটি সংবাদ শুনেছি। এদিকে দেশীয় ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ ধরে রাখছেন। এ কারণে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ কেজিতে ছয় টাকা বেড়েছে। তবে বাজারে পেঁয়াজের সংকট নেই। আশা করা যাচ্ছে, দ্রুত পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হবে।’
আরেক ব্যবসায়ী শাকিল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে তিন টাকা বেড়েছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম আরও বেশি বেড়েছে।এদিকে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আমদানির অনুমোদন
পাওয়ার চেষ্টা চলছে জানিয়ে হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন-উর-রসিদ বলেন, ‘আমদানির মেয়াদ গত ৩০ এপ্রিল মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তা ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এরপরে নতুন করে আর পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়নি। আমরা এখন অনুমোদন পেতে চেষ্টা চালাচ্ছি। যেহেতু সরকার থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের কিছু জানায়নি, সুতরাং দ্রুত অনুমোদন পাওয়ার আশা আছে। তখন বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’
যোগাযোগ করা হলে রাজধানীর শ্যামবাজারের পেঁয়াজ আমদানিকারক মোহাম্মদ মাজেদ বলেন, ‘পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি না থাকায় আমরা ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছি না। সে জন্য আমদানি বন্ধ রয়েছে। তবে বাজারে পেঁয়াজের সংকট নেই।’
চট্টগ্রাম থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, আমদানি বন্ধের খবরে সেখানেও পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। বুধবার খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম চার-পাঁচ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেশের কৃষকদের সুরক্ষা দিতে নতুন করে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিচ্ছে না কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংঘ নিরোধ কেন্দ্র। এই খবর প্রকাশ পাওয়ার পর ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে খাতুনগঞ্জ পাইকারি মোকামে বুধবার প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ৫ টাকা বেড়ে ৩৭ থেকে ৩৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের দাম বেড়ে ৩২ থেকে ৩৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অবশ্য চট্টগ্রামের বাজারে পেঁয়াজের কোনো সংকট দেখা যায়নি।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেটের ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিছ জানান, আমদানি বন্ধের খবরে দাম বেড়েছে পেঁয়াজের। তবে পেঁয়াজের সংকট নেই।
পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামের খুচরা বাজারেও। বুধবার খুচরায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে। বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের শাহজালাল স্টোরের কর্ণধার আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় খুচরায়ও বেড়েছে। দাম বাড়ার আগে প্রতি কেজি ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এখন ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দেশে পেঁয়াজের চাহিদার বড় অংশই দেশীয় ফলন দিয়ে মেটানো হয়। গত ২০২০–২১ অর্থবছরে দেশে ২২ লাখ ৬৪ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে, যা চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ। বাকি ২০ শতাংশ চাহিদা মেটানো হয় আমদানি করা পেঁয়াজ দিয়ে।