মহান মে দিবস সমাগত। এই দিবসটি হলো বিশ্বের শ্রমিকশ্রেণি ও মেহনতি মানুষের নিজস্ব দিন। তাদের সংগ্রামের বিজয়ের-উৎসবের দিন। নতুন শপথ গ্রহণের দিন। আন্তর্জাতিক সংহতির দিন। কমরেড জসিমউদ্দীন মণ্ডল বক্তৃতা করে বলতেন, “বছরের তিনশ পয়ষট্টি দিনের মধ্যে প্রায় সবগুলো দিনই হলো ‘কোট-টাই-পেন্টালুন’ পরা ‘বড়লোকদের’ দিন। একটি দিনই কেবল ‘দাদ আলা-পা ফাটা’ ‘ছোটলোকদের’ দিন। সে দিনটি হলো পহেলা মে– মে দিবস।”
যাদেরকে তথাকথিত ‘ছোটলোক’ বলে গণ্য করা হয় তারাই আমাদের দেশের ‘নিরানব্বই’ শতাংশ মানুষ। তাদের প্রকৃত ‘দাম’ ও মর্যাদা আসলে ‘ছোট’ নয়। বরঞ্চ তাদের অবদানই সবচেয়ে ‘বড়’। এসব মুটে-মজুর-জেলে-কিষাণ-শ্রমিক-কর্মচারীরাই আমাদের দেশের অর্থনীতি চালু রেখেছে। আমাদের যেটুকু প্রবৃদ্ধি-সমৃদ্ধি তা প্রধানত তারাই সম্ভব করে তুলছে। এটি একটি স্বীকৃত সত্য যে, দেশের মেহনতি কৃষক ও ক্ষেতমজুররা, গার্মেন্টস সহ ছোট বড় কলকারখানা-প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা, এবং হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করা প্রবাসী শ্রমজীবীরাই দেশের ‘নিরানব্বই’ শতাংশ সম্পদ সৃষ্টি করে থাকে। অথচ তারা পায় তাদের সৃষ্ট সম্পদের মাত্র ‘এক’ শতাংশ। আর, যারা নতুন সম্পদ সৃষ্টির বদলে অন্যের সম্পদ লুটেপুটে খায় সেই অবশিষ্ট ‘এক’ শতাংশ ‘কোট-টাই-পেন্টালুন’ পরা লুটেরা ধনীকরা পায় সেই সম্পদের ‘নিরানব্বই’ শতাংশ।
এরকম বেইনসাফি ও বঞ্চনা মেনে নেয়া যায় না। কিন্তু তথাপি তা সম্ভব হচ্ছে রাষ্ট্রক্ষমতা ও রাজনীতি থেকে এই ‘ছোটলোকদের’ দূরে সরিয়ে রাখতে পারার কারণে। লুটেরা শোষকরা দশকের পর দশক ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতার ‘ড্রাইভিং সিট’ দখল করে রেখেছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে কেন্দ্র করে লুটেরা বুর্জোয়া শ্রেণির দু’টি পৃথক বিবাদমান গোষ্ঠীতে তারা ভাগ হয়ে আছে। লুটপাটের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে পরস্পরের মধ্যে তীব্র গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে তারা দেশে অরাজকতা, নৈরাজ্য, অধঃপতন ও ধ্বংসের বিপদকে ডেকে আনছে। সম্প্রতি নারী-শিশু ধর্ষণ-হত্যার বিভৎসতা ভয়ঙ্কর মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ছে, মাদকাসক্তির বিস্তার ঘটছে, নীতি-নৈতিকতার ক্ষেত্রে ধ্বস নেমেছে, দুরাচার-দুষ্কর্ম-অপরাধে দেশ ছেয়ে গেছে। এসবই হলো তাদের লুটপাটের অর্থনীতি ও রাজনৈতিক নীতি-দর্শনের মৌলিক গলদ ও দেউলিয়াপনারই নিদর্শন।
কিন্তু নিজেদের মধ্যে ‘গলা কাটা বিবাদে’ লিপ্ত থাকলেও, তারা উভয় পক্ষই একমত হয়ে, কোনো অবস্থাতেই যেন ‘নিরানব্বই’ শতাংশ তথাকথিত ‘ছোট লোকরা’ রাষ্ট্রক্ষমতা ও রাজনীতিতে সামনে আসতে না পারে, তা ছলে-বলে-কৌশলে ঠেকিয়ে রাখতে তৎপর। কারণ, তা ঠেকিয়ে রাখতে না পারলে, যে ‘অর্থনৈতিক-সামাজিক’ ব্যবস্থা চালু রেখে তারা তাদের ‘লুটপাট ও অনাচারের রাজত্ব’ বহাল রেখেছে, তা ধ্বসে পড়বে। তারা মেহনতি মানুষের রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে ওঠা ও সেই ভিত্তিতে তাদের জাগরণ ঘটানোর প্রচেষ্টাকে ভয় পায়। তাই, প্রকৃত তাৎপর্য নিয়ে শ্রমিকরা যেন ‘মে দিবস’ পালন না করতে পারে, সেজন্য তারা নানা ফঁন্দির আশ্রয় নেয়। তার একটি হলো, ‘মে দিবস’ পালনকে আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে বন্দী করে ফেলা।
একথা আজ স্পষ্ট যে লুটেরা বুর্জোয়াদের হাতে শাসন ক্ষমতা থাকলে দেশ ক্রমাগতভাবে ধ্বংসের পথেই ধাবিত হতে থাকবে। তাই, দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে হলে, চলতি বুর্জোয়া শাসনের অবসান ঘটিয়ে ‘নিরানব্বই শতাংশ’ মেহনতি মানুষের রাষ্ট্রক্ষমতা ও রাজনীতির সামনে এসে দাঁড়ানো আজ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। ‘মে দিবস’ আবার নতুন করে দেশের মেহনতি মানুষের সামনে এই ঐতিহাসিক কর্তব্য হাজির করেছে।
পুঁজিবাদী সমাজে শ্রমিকরা কাজ করে ‘জীবিত’ থাকার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় রসদ সংগ্রহের জন্য। সে কাজ করে তার শ্রম প্রদানের ক্ষমতা পুনরুৎপাদনের উদ্দেশ্যে। শ্রমশক্তির অব্যাহত পুনরুৎপাদনের জন্য যা অপরিহার্য তা হলো– শ্রমিকের নিজের জন্য, ও নিজের শ্রম-শক্তির অব্যাহত প্রবাহ নিশ্চিতের জন্য বংশবৃদ্ধি করতে, গোটা পরিবারের জন্য, ভরণ-পোষণ, শিক্ষা-চিকিৎসা, মাথা গোঁজার ঠাঁই ইত্যাদির ব্যবস্থা করা। সেই সাথে শরীর ঠিক রাখার জন্য অপরিহার্য হলো ন্যূনতম ঘুম ও বিশ্রাম। এসবই হলো মানুষের ‘জীবিত’ থাকার আয়োজনের ব্যাপার। প্রশ্ন হলো, মানুষ কী উদ্দেশ্যে এসব আয়োজনে নিজেকে নিয়োজিত রাখবে? নিশ্চয়ই তা হলো, প্রকৃত ‘বেঁচে থাকা’ (to live) বলতে আসলে যা বোঝায়, সেজন্যে। পুঁজিবাদী সমাজে কাজ ও বিশ্রামের সময়টুকু হলো জীবিত থাকার আয়োজন মাত্র (to earn a living)। আসল ‘বাঁচার’ (to live) জন্য সময়টা হলো এর বাইরে।
‘আট ঘণ্টা কাজ, আট ঘণ্টা বিশ্রাম ও বাকি আট ঘণ্টা বিনোদন ও সংগ্রাম’–এটিই ছিল মে দিবসের মূল শ্লোগান। শ্রমিকের সে সংগ্রাম হলো– শোষণ থেকে মুক্তির জন্য, শোষণমুক্ত মানবিক সমাজের জন্য, মুক্ত মানুষের মুক্ত বিশ্ব প্রতিষ্ঠার জন্য, সমাজতান্ত্রিক-সাম্যবাদী সভ্যতা নির্মাণের জন্য সংগ্রাম। অনেক দেশে শ্রমিকদের কাজের সময়ের দাবিটি পরবর্তীতে আরো অগ্রসর হয়েছে। ‘সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা অথবা ৪২ ঘণ্টার বেশি কাজ নয়’– এভাবে দাবি উঠেছে। সে দাবি আদায়ও হয়েছে। কত ঘণ্টা কাজ করতে হবে, এটি হলো নিঃসন্দেহে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মানবিক বিষয়। কিন্তু আরো অনেক গভীর তাৎপর্যপূর্ণ কথাটি হলো ‘কাজের সময় কমাতে হবে’। কারণ, ‘কাজের সময়ের’ বাইরে যেটুকু সময় ‘বিনোদন ও সংগ্রামের’ জন্য রাখতে পারবে, শুধু সেটুকুই হবে শ্রমিকের ‘নিজের সময়’। কাজের সময় কমানো প্রয়োজন যাতে করে শ্রমিক তার ‘নিজের জন্য সময়’ বাড়িয়ে নিয়ে প্রকৃত ‘বাঁচার জন্য’ সময় করে নিতে পারে।
ইংরেজিতে বললে, ‘so that he can live, besides just earning a living’। ‘মে দিবসের’ আট ঘণ্টা কাজের কেন্দ্রিক-দাবিটির কালোত্তীর্ণ গুরুত্ব ও তাৎপর্যের একটি প্রধান উৎস এখানেই।
১৮৮৬ সালের ১ মে শিকাগো শহরের শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটের মূল দাবি ছিল ৮ ঘণ্টা কাজের অধিকার প্রতিষ্ঠা। ওই কর্মসূচির অংশ হিসেবে সেদিন ৩ লক্ষ শ্রমিক এক ঐতিহাসিক ধর্মঘটে সামিল হয়েছিল। ২ মে ছিল রবিবার। ৩ মে আরো বড় শ্রমিক সমাবেশে মালিকের গুণ্ডারা আক্রমণ চালিয়ে ৬ জন শ্রমিককে হত্যা করেছিল। এর প্রতিবাদে ৪ মে শহরের ‘হে-মার্কেট’ স্কোয়ারের বিশাল সমাবেশে মালিক ও সরকারের সশস্ত্র বাহিনীর নির্বিচার লাঠিচার্জ ও গুলিতে শ্রমিকের রক্তে লাল হয়ে উঠেছিল ‘হে-মার্কেট’ চত্বর। নিহত হয়েছিল ৪ জন শ্রমিক। কয়েকজন পুলিশও প্রাণ হারিয়েছিল। ৮ জন শ্রমিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৫ জনকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল।
আমেরিকার শ্রমিকদের এই আন্দোলনের সমর্থনে দেশে-দেশে শ্রমিকরা সংহতি আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। ফলে মালিকরা ক্রমান্বয়ে বাধ্য হয়েছিল ৮ ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবি মেনে নিতে। ১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকী উপলক্ষে ফ্রেডেরিক এঙ্গেলসের নেতৃত্বে প্যারিসে ‘দ্বিতীয় কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ওই বছরই অনুষ্ঠিত ‘সোস্যালিস্ট লেবার ইন্টারন্যাশনালের’ সম্মেলনে জার্মান কমিউনিস্ট নেত্রী ক্লারা জেটকিনের ঘোষণা অনুযায়ী ১৮৯০ সাল থেকে প্রতিবছর ১ মে দিনটিকে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এভাবেই আন্তর্জাতিকভাবে মে দিবস পালনের সূচনা হয়েছিল। অর্থাৎ, মে দিবসের সামগ্রিক ইতিহাস শুরু থেকেই ছিল শ্রমিক শ্রেণির অধিকার প্রতিষ্ঠা, মুক্তি অর্জন ও আন্তর্জাতিক সংহতির লক্ষ্যে ধারাবাহিক সংগ্রামের ইতিহাস। শ্রমিক শ্রেণির কাছে মে দিবস হলো সেই লক্ষ্যে নতুন সংগ্রামে উজ্জীবিত হওয়ার শপথের দিন। এটি কখনই নিছক কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। মে দিবসকে আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে বন্দি করার অর্থই হলো শ্রমিক শ্রেণিকে তার চূড়ান্ত অর্থনৈতিক-সামাজিক মুক্তির লক্ষ্যে পরিচালিত সংগ্রাম থেকে বিচ্যুত করার প্রচেষ্টা।
ব্রিটিশ আমলে মে দিবস পালন করাকে কার্যত দেশদ্রোহী কাজ বলে ব্রিটিশ শাসকরা বিবেচনা করতো। পাকিস্তান আমলেও মে দিবস পালন করতে হতো অনেক সতর্কভাবে ও লুকিয়ে ছাপিয়ে। ১৯৬৯-৭০ সালের দিকে পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হয়েছিল। প্রকাশ্যে মে দিবসের অনুষ্ঠান করা শুরু হয়েছিল। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রণাঙ্গনেই আমরা মে দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম। স্বাধীনতার পর মে দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে বাধাগুলো বহুমাত্রায় অপসারিত হয়েছে।
মে দিবস এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হচ্ছে। দিবসটি এখন সরকারি ছুটির দিন। এটি এখন শ্রমিকদের উৎসবের দিনে পরিণত হয়েছে। শ্রমিকরা দলে দলে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে, রঙ ছিটিয়ে এসব অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাও এখন মে দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। মে দিবসে ঢাকা শহর আজকাল অনেকটাই শ্রমিকের উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে মে দিবস পালনে ‘মুক্তি’ অর্জন সম্ভব হলেও, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও চেতনা-ধারার মতোই, ‘মে দিবসের মুক্তিকেও’ তীব্র হোঁচট খেয়ে চিৎপটাং হয়ে পড়তে হয়েছে। এদেশের শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি জনগণকে আবার শোষণ-বঞ্চনা-অধিকারহীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হতে হয়েছে। রাষ্ট্রীয় নীতি থেকে বস্তুত: বিতাড়িত হয়েছে মেহনতি মানুষের মুক্তির প্রশ্নটি। শোষণ-বঞ্চনা ও নিপীড়ন থেকে মুক্ত হয়ে প্রতিটি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন হলেও আজ পর্যন্ত সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি।
সংবিধানের ১৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “উৎপাদনযন্ত্র, উৎপাদনব্যবস্থা ও বণ্টনপ্রণালীসমূহের মালিক বা নিয়ন্ত্রক হইবেন দেশের জনগণ।” ১৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে মেহনতি মানুষকে– কৃষক ও শ্রমিকের এবং জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্ত করা।”
সংবিধানে এখনো এসব নির্দেশনা বহাল থাকলেও তথাকথিত মুক্তবাজার নীতির নামে ‘উৎপাদনযন্ত্র, উৎপাদনব্যবস্থা ও বণ্টনপ্রণালী’র মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ ‘দেশের জনগণের’ হাত থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। অসংখ্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তুলে দেয়া হয়েছে মুষ্টিমেয় ব্যক্তির হাতে। লুটপাট চালিয়ে তারা সেসব শিল্প ধ্বংস করে ফেলেছে। ‘কৃষক ও শ্রমিকের এবং জনগণের অনগ্রসর অংশের’ উপর এখনো চলছে নানামাত্রিক শোষণ-নিপীড়ন।
ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে শ্রমিকদের। নারী শ্রমিকদের ওপর চলছে অধিকতর বঞ্চনা ও বৈষম্য। শ্রমিকদের অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার খর্ব করে রাখা হয়েছে। ভবন ধ্বসে, কারখানায় আগুন লেগে হাজার হাজার শ্রমিক মৃত্যুবরণ করছে। কর্মস্থলে কাজের উপযুক্ত পরিবেশের ব্যবস্থা করা তো দূরের কথা বেশিরভাগ কল-কারখানায় শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তাটুকুরও ব্যবস্থা নেই।
সমস্ত সমাজ আজ ভয়াবহ অবক্ষয় ও পচনের সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। প্রতি বছর লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে, খেলাপী ঋণের ও কালো টাকার পরিমাণ বাড়ছে, সৎ বিনিয়োগকারী-ব্যবসায়ীদের তুলনায় অর্থনৈতিক অপরাধীদেরকে বাড়তি সুবিধা দেয়া হচ্ছে, মেগা প্রজেক্টের নামে চলছে মেগা লুটপাট, অবকাঠামো নির্মাণে লোহার রডের বদলে বাঁশ ব্যবহার করার মতো অপরাধ ঘটতে থাকলেও এসবের বিচার থেকে পার পেয়ে যাওয়ার ঘটনা ক্রমাগত ঘটছে। এদিকে বেকারত্ব, বৈষম্য, ইত্যাদির মাত্রা ভয়াবহভাবে বেড়ে চলেছে। সমাজে নারী-শিশু ধর্ষণ, পুড়িয়ে মারা, মাদক ব্যবসা, শিক্ষার মানের বিপদজনক অবনতি, স্বাস্থ্য সেবায় চরম দুর্ভোগ, শিক্ষা-স্বাস্থ্য সেবার বাণিজ্যিকীকরণ ইত্যাদি দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক অধিকার, এবং এমনকি মানুষের ভোটাধিকার, হরণ করে স্বৈরতান্ত্রিক-ফ্যাসিস্ট কায়দায় রাষ্ট্র চালানো হচ্ছে। চোখ ধাঁধানো কিছু ‘উন্নয়ন’ নিদর্শন দিয়ে দেশের এই সার্বিক রুগ্নতাকে আড়াল করা যাচ্ছে না। জনগণের মনে ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হচ্ছে।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রয়োজন এক বিপ্লবী গণজাগরণ। ঊনসত্তরের মতো, একাত্তরের মতো। বুর্জোয়া শক্তি আজ চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ। সেক্ষেত্রে অন্য শ্রেণি শক্তিকে এগিয়ে আসতে হবে। মধ্যবিত্ত সমাজকে সঙ্গে রাখতে হবে ঠিকই, কিন্তু তাদের উপর নির্ভর করে থাকলে হবে না। এবার হাল ধরতে হবে মেহনতি মানুষকে। ইতিহাসের এটিই স্পষ্ট নির্দেশনা। এই উপলব্ধি সবার মাঝে উদয় হোক! মেহনতি মানুষের মাঝে সেই বিপ্লবী দায়িত্ববোধ সঞ্চারিত হোক! এবারের ‘মে দিবসে’ সেটিই সব থেকে বেশি কাম্য।
লেখকঃ মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)