ঈদের আগে বেতন-ভাতা অবিলম্বে পাওনা পরিশোধ করুন

করোনার কারণে গত দুই বছর বাংলাদেশের মানুষ ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেননি। করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই তারা আশা করছেন এবারে স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন? কিন্তু নিত্য যাদের অভাব তাড়া করছে, তারা কীভাবে ঈদ উদ্‌যাপন করবেন?

খোদ রাজধানী, নারায়ণগঞ্জ, মিরপুর, আশুলিয়া, উত্তরা, গাজীপুরের বেশ কিছু তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকেরা বকেয়া বেতন ও ঈদের বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। কোনো কোনো কারখানায় তিন মাসের বেতন বাকি পড়েছে। মালিকদের পক্ষ থেকে তাঁদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, ঈদের আগে সমুদয় বকেয়া পরিশোধ করা হবে। ঈদের বাকি মাত্র কয়েক দিন। এর মধ্যে তাঁরা বেতন–ভাতা পাবেন কি না সন্দেহ। শিল্প পুলিশের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, আশুলিয়া-সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, খুলনা ও কুমিল্লায় প্রায় ৯ হাজার ১৭৬টি শিল্পকারখানা রয়েছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র কারখানা কমপক্ষে ২ হাজার ৬৮৮টি; যার ৩৭টি এখনো গত মার্চের মজুরি দেয়নি।

বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বেশির ভাগ কারখানায় ঈদের বোনাস দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসের অর্ধেক বেতনও দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। কারখানার মালিকদের এই দুই সংগঠন স্বীকার করেছে, কিছু কারখানা আর্থিক সমস্যায় আছে। যেসব কারখানা সমস্যায় আছে, সেসব কারখানার শ্রমিকেরা কি পরিবার–পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকবেন? ঈদ করবেন না?

খবর থেকে জানা যায়, করোনার ধাক্কা কাটিয়ে তৈরি পোশাক খাত বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ হাজার ১৪৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। এতে প্রবৃদ্ধি হয় ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) প্রায় গত বছরের কাছাকাছি রপ্তানি হয়েছে, যা পরিমাণে ৩ হাজার ১৪২ কোটি ডলার। এটি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি। গত দুই বছর করোনার কারণে কারখানার উৎপাদন ও রপ্তানি অপেক্ষাকৃত কম ছিল। তাই সে সময়ে বেতন-ভাতা বকেয়া রাখার না হয় যুক্তি ছিল।

এবারে রেকর্ড পরিমাণ রপ্তানি করার পরও কেন শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়া হবে না?

শনিবারের মধ্যে শ্রমিকেরা চলতি মাসের মজুরি ও উৎসব ভাতা না পেলে ঈদ করতে পারবেন না, তাদের বাড়িও যাওয়া হবে না। এই অবস্থা কেবল তৈরি পোশাক খাত নয়, আরও অনেক খাতেই কারখানা ও গণপরিবহনসহ সেবা প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা বেতন-ভাতা বকেয়া রেখেছেন। অতীতে দেখা গেছে, কোনো কারখানার মালিক শ্রমিকদের বেতন–ভাতা দিতে ব্যর্থ হলে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ দিয়ে দিত। এবারও তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করি। শ্রমিকেরা ঈদের আনন্দ থেকে যাতে বঞ্চিত না হন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

যেখানে মালিকেরা প্রতিবছর শত শত কোটি টাকা মুনাফা করছেন, সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনাও আদায় করছেন, সেখানে শ্রমিকদের কেন ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা হবে? ঈদের আগেই শ্রমিকদের উৎসব ভাতা, বকেয়া বেতনসহ সমুদয় পাওনা পরিশোধ করা হোক।

শেয়ার করুনঃ