আজ ১৯ এপ্রিল- মঙ্গলবার পাইকরহাটী (ডাব বাগান), শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভ প্রাঙ্গনে সাঁথিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের আয়োজনে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের স্মরণে “স্মরণ সভা” ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব এ্যাডঃ শামসুল হক টুকু এমপি ।
একাত্তরের ১৯ এপ্রিলের সেই ভয়াল রাতের কথায় শহীদনগরবাসী ফিরে যায় সেদিনের স্মৃতিতে। খুঁজে পেতে চায় সেসব শহীদ ভাইদের যাদের তাজা রক্তে ভিজে গেছে গ্রামের মেঠোপথ। শহীদনগরে রয়েছে ‘গণকবর’। এখানে ঘুমিয়ে আছেন শতশত মুক্তিপাগল গ্রামবাসী। পাবনা বেড়া উপজেলার নগরবাড়ী ঘাট ছেড়ে পশ্চিম দিকে কাশিনাথপুর পেরিয়ে বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়ক সংলগ্ন সাঁথিয়া উপজেলার পাইকরহাটি গ্রামের (বর্তমান নাম শহীদনগর) ডাববাগান নামক স্থানে একাত্তরের ১৯ এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সম্মুখ প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। সম্মুখযুদ্ধে পরাজয়ের পর পিছু হটে যাওয়া পাকবাহিনী নতুন করে শক্তি বৃদ্ধি করে রাতের বেলা আবার আক্রমণ করে। এবার পাকবাহিনীর বিশাল শক্তির কাছে টিকতে না পেরে মুক্তিসেনারা পিছু হটে যায়। পাকসেনারা এবার গ্রামবাসীর উপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। একে একে পুড়িয়ে দেয় ডাববাগানের পার্শ্ববর্তী গ্রাম রামভদ্রবাটি কোড়িয়াল, বড়গ্রাম, সাটিয়াকোলা প্রভৃতি গ্রাম। নির্বিচারে গুলি চালায় নিরীহ গ্রামবাসীর উপর। লোকজনদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধরে এনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে শশ’ স্বাধীনচেতা গ্রামবাসীকে। এদের মধ্যে করমজার প্রাক্তন চেয়ারম্যান আফাজ ডাক্তার, আঃ লতিফ, শেখ কাজেম আলী, খোয়াজ শেখ, পিয়ার মন্ডল, জাকের আলী শেখ, সৈয়দ আলী মোল্লা, জগনারায়ণ বিশ্বাস প্রমুখ। যে গাব গাছটির কাছে নিয়ে এসে গ্রামবাসীকে হত্যা করা হয়েছিল, সেটি এখনও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আরও আছে সেই ডাববাগান।
এলাকাবাসী জায়গাটির নতুন নামকরণ করেছে‘শহীদনগর। পাইকর হাটি ডাব বাগান যুদ্ধে গ্রামের অল্প কিছু লোক আহত বা নিহত হয়েছিলেন বলে শোনা যায় কিন্তু এর কোনো দালিলীক প্রমান নেই। এই যুদ্ধের কমান্ডার ছিলেন কুষ্টিয়ার জেলার অধিবাসী ইপিয়ার হাবিলদার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আকবার। তিনি ৭ নং সেক্টরের অধিনে ছিলেন এবং সেক্টর কমান্ডার ছিলেন তৎকালিন লেঃ কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান। ১৬ ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলে মুক্তিযোদ্ধা ও স্হানীয় বাসিন্দা দের অনুরোধে এই এলাকার নতুন নাম করন করা হয় “শহীদ নগর” এখানে বীর বাঙ্গালী খ্যাত একটি ভাস্কর্য শহীদ মিনার তৈরী করা হয়েছে। “শহীদ নগর” যুদ্ধ ইতিহাসের পাতায় স্মরনীয় একটি নাম, যে নাম সবার কাছে চিরো ভাস্বর, চিরো স্মরনীয় হয়ে থাকবে প্রজন্ম হতে প্রজন্ম পর্যন্ত সবার কাছে, তথা আগামী নতুন প্রজন্মের কাছে।
উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কাশিনাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান মীর মঞ্জুর ইলাহি সাথিয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল লতিফ,,সাঁথিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম, কাশিনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলী মাস্টার সহ প্রমুখ উপস্তিত ছিলেন