সাভারের আশুলিয়ায় একটি সোয়েটার কারখানার ১১০ জন শ্রমিককে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে। এছাড়া কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধও ঘোষণা করা হয়েছে।
বুধবার আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার হামিদুল্যাহ ম্যানশনে গিয়ে ফ্যাশনইট কোম্পানি লিমিটেড কারখানার দেয়ালে ছবিসহ শ্রমিকদের চাকুরীচ্যুত নোটিশ টানাতে দেখা যায়। আরেকটি নোটিশে কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
শ্রমিকরা জানান, কারখানাটিতে প্রায় ১ হাজার ৩০০ শ্রমিক রয়েছে। সম্প্রতি কারখানায় নিয়োগ পেয়েছেন এমন নতুন কয়েকজন কর্মকর্তা নিজেদের পছন্দের নতুন কিছু শ্রমিককে পুরাতন শ্রমিকদের চেয়ে বেশি বেতনে কারখানায় নিয়োগ দেন।
এই ঘটনার পর কারখানার শ্রমিকরা বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদ ও শ্রমিকদের কাজের রেট (প্রাইস) বাড়ানোর দাবি শুরু করে। কারখানাটির ব্যবস্থাপককে (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) আনিছুর রহমান পিটার শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে কারখানা মালিকের সঙ্গে কথা বলে শ্রমিকদের দাবি পূরণে কয়েকদিন সময় লাগবে বলে জানান।
তবে, কযেকদিন আগে কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) আনিছুর রহমান পিটারকে চাকুরিচ্যুত করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। পরে শ্রমিকরা আনিছুর রহমানের চাকরিতে ফেরানোর দাবিতে কারখানার ভেতরে কর্মবিরতি পালন শুরু করেন। এই ঘটনার জেরে কারখানা কর্তৃপক্ষ বেআইনিভাবে কারখানার ১১০ জন শ্রমিককে চাকুরীচ্যুত করেছে বলে জানান তারা।
চাকুরীচ্যুত শ্রমিক মনির হোসেন বলেন, যৌক্তিক দাবিতে গত ৫ দিন ধরে আমরা কারখানায় কর্মবিরতি পালন করছিলাম। হঠাৎ করে শ্রমআইন ১৩ এর ক ধারায় কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এর পর ১১০ জনের ছবিসহ চাকরিচ্যুতের নোটিশ দেয়ালে টানানো হয়। আমাদের কোনো বেতন কিংবা আইনগত পাওনাদি পরিশোধ করা হয় নি। সামনে ঈদ, আমাদের পুরো পরিবারের ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গেল।’
চাকুরীচ্যুত হওয়া শ্রমিক ওয়াশিম বলেন, টার্মিনেশন বেনিফিট দেওয়ার কথা আছে। আমরা চাই না কোনো ঝামেলা হোক। আমরা আমাদের আইনগত পাওনা বুঝে নিতে চাই।’
গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, ‘ শ্রমিকদের কী কারনে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে তা নোটিশে বলা হয়নি। কিন্তু ১১০ জন শ্রমিকের ছবিসহ তালিকা প্রকাশ করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। কারখানার ভালো কিংবা খারাপ শ্রমিক হলেও দেয়ালে তার ছবি টানানো আইনসম্মত নয়। দেয়ালে ছবি টাঙ্গিয়ে ছাঁটাই করা রীতিমতো অন্যায়। এসব শ্রমিকদের পরবর্তিতে অন্য কারখানায় চাকরি পাওয়াও কঠিন হয়ে যাবে।’
এছাড়া ঈদকে সামনে রেখে শ্রমিকদের চাকুরীচ্যুত অমানবিক কাজ বলেও জানিয়েছেন এই শ্রমিক নেতা।
এ ব্যাপারে জানতে কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আবদুল মালেক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘শ্রমিকরা ৯ দিন ধরে কারখানায় অনৈতিক দাবি নিয়ে কারখানায় কাজ করছিলেন না, উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটছিল। এ কারণে বিভিন্ন মহলে কথা বলে ১১০ শ্রমিককে শ্রম আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী টারমিনেট করেছি এবং কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ।