চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩ হাজার ৮৬১ কোটি ডলার। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি ৩ হাজার ১৪২ কোটি ডলারের।
বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের অস্থিরতায় দেশে দেশে যখন বাণিজ্য নিয়ে দুশ্চিন্তা, তখন বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি আয়ে স্বস্তির সুবাতাস বইছে। আর সেই পালে জোর হাওয়া দিচ্ছে তৈরি পোশাক। দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের ওপর ভর করে লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে রপ্তানি আয়।
২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৩ হাজার ৮৬১ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় করেছে বাংলাদেশ। এ আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯৬৭ কোটি ডলার বা ৩৩ শতাংশের বেশি। শুধু তাই নয়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬০১ কোটি ডলার বা সাড়ে ১৮ শতাংশ বেশি আয় হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ মাসে পোশাক রপ্তানি থেকেই আয় হয়েছে ৩ হাজার ১৪২ কোটি ডলার, যা মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮১ শতাংশ। এ সময়ের মধ্যে পোশাক রপ্তানিতে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭৯৪ কোটি ডলার বা ৩৪ শতাংশ বেশি। পোশাকের এ প্রবৃদ্ধির কারণে গত ৯ মাসে এ খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৯ শতাংশ বা ৫০৯ কোটি ডলার বেশি রপ্তানি আয় হয়েছে দেশের। গত জুলাই থেকে মার্চ, এই সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৬৩৩ কোটি মার্কিন ডলারের।
পোশাকের পাশাপাশি অন্যান্য খাতেও রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি রয়েছে। এর ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬০১ কোটি ডলার বা প্রায় সাড়ে ১৮ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় হয়েছে। উল্লিখিত সময়ে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ২৬০ কোটি মার্কিন ডলার।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রায় প্রতি মাসেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রপ্তানি আয় হয়েছে। সর্বশেষ গত মার্চে সব মিলিয়ে পণ্য রপ্তানি বাবদ আয় হয়েছে ৪৭৬ কোটি ডলার। এ আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২১ কোটি ডলার বা ৩৪ শতাংশ বেশি। আর গত বছরের মার্চের চেয়ে গত মার্চে ১৬৮ কোটি ডলার বা ৫৫ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় হয়েছে।
রপ্তানিকারকেরা বলছেন, রপ্তানির এ ধারা অব্যাহত থাকলে বছর শেষে পণ্য রপ্তানির আয় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। চলতি অর্থবছরের জন্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার। অর্থবছর শেষ হতে বাকি এখনো ৩ মাস। এর মধ্যে পণ্য রপ্তানির আয় হয়েছে ৩ হাজার ৮৬১ কোটি ডলার। সেই হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে আগামী ৩ মাসে আর ৪৮৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করতে হবে। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী দুই মাসেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকেরা।
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদউল্লাহ বলেন, আগামী জুন মাস পর্যন্ত তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি থাকবে। তাতে বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা খুব কঠিন হবে না।
তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পোশাক রপ্তানির গতি কিছুটা মন্থর বলে জানান শহীদউল্লাহ আজিম। তাঁর মতে, ইউরোপের বড় বড় ক্রেতা এখন ‘ধীরে চলো’ নীতি অবলম্বন করছে। এ কারণে ক্রয়াদেশ কিছুটা কম। যুদ্ধের এ শঙ্কার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গ্যাস–সংকট। গ্যাসের চাপ কম থাকায় গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধান না হলে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এদিকে, তৈরি পোশাকের মধ্যে ভালো করছে নিটওয়্যার খাত। এ খাত থেকে গত ৯ মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ১ হাজার ৭১২ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৪৭ কোটি ডলার বা ৩৫ শতাংশ বেশি। ওভেন খাতে প্রবৃদ্ধি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩২ শতাংশ বেশি। এ খাত থেকে চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে আয় হয়েছে ১ হাজার ৪৩১ কোটি ডলার। আগের বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৩ কোটি ডলার।
পোশাক ছাড়া হিমায়িত মৎস্য, কৃষিপণ্য, রাসায়নিক পণ্য, প্লাস্টিক ও চামড়া খাতেও রপ্তানি আয়ের ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এসব খাতেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে গত ৯ মাসে। তবে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।