বসন্ত আর ভালোবাসা দিবস এবার এল একসঙ্গে জোড় বেঁধে

বসন্ত আর ভালোবাসা দিবস এবার এল একসঙ্গে জোড় বেঁধে। সেই যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর গানে লিখেছিলেন, ‘আয় তবে সহচরী হাতে হাতে ধরি ধরি’—অনেকটা সে রকম। আজ সোমবার পয়লা ফাল্গুন, ‘বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’। আর মনের মন্দিরে প্রিয়জনের নামটি ভালোবেসে লেখার দিনটিও আজকেই—   ১৪ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।

বসন্ত যৌবনের দূত, নবজীবনের প্রতীক। ঋতুরাজ বলে তার খ্যাতি আবহমানকাল থেকে। শীতের ঘনঘোর কুয়াশায় আবছা হয়ে আসা দিগন্তরেখা, কনকনে হাওয়ায় রুক্ষ হয়ে ওঠা মৃতপ্রায় প্রকৃতিতে বসন্ত ফিরিয়ে আনে নতুন কুঁড়ির উদ্গম। পুষ্প-পত্রপল্লবে সঞ্জীবিত হয়ে ওঠে নিসর্গ। আবার রবীন্দ্রনাথের কথার ধার করেই বলতে হয়, ‘হেরো পুরানো প্রাচীন ধরণী হয়েছে শ্যামলবরনী/ যেন যৌবনপ্রবাহ ছুটেছে কালের শাসন টুটাতে…মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে।’

প্রকৃতির এই নবজাগরণের প্রভাব পড়ে মানুষের হৃদয়ে। চিত্ত আকুল হয় প্রিয় অনুভবে, ব্যাকুল হয় প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেতে। আবেগ উথলে ওঠে গহন স্বরে হৃদয়ের গোপন গভীর না-বলা কথাটি বলতে। আজ তো সেই হৃদয়ের দুয়ার খুলে দেওয়ার দিন।

ওদিকে পশ্চিমা রীতির ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালোবাসা দিবসও বেশ কয়েক বছর থেকে আমাদের দেশেও ঘটা করে উদ্‌যাপিত হয়ে আসছে। বিশেষত তরুণ প্রজন্ম এই দিনটি বেছে নিয়েছে তাদের মনের মানুষের কাছে প্রণয়ের কথা নিবেদনের জন্য।

উপহার দেওয়া, একসঙ্গে বাইরে ঘুরে বেড়ানো, কোথাও খেতে যাওয়া—অতঃপর সেই পরম রোমাঞ্চকর মুহূর্ত, সেই চিরপুরাতন আবেগের চিরকালের নতুন কথাটি জানিয়ে দেওয়া—আমি তোমায় ভালোবাসি। এই তো, ভালোবাসায় বন্দী হতে পারলে কে আর তা থেকে মুক্তি পেতে চায়।

ভালোবাসার উপহারের মধ্যে প্রথম অবস্থান ফুলের। দেশে এক দিনে সবচেয়ে বেশি ফুল বিক্রিও হয় এই ভালোবাসা দিবসে। ফুল উৎপাদক ও বিক্রেতাদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইমামুল হোসেন প্রথম আলোকে জানান, ভ্যালেন্টাইনস ডেতে সারা দেশে প্রায় ৯০ থেকে ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়। কেবল ঢাকাতেই বিক্রি হয় প্রায় ৫০ কোটি টাকার ফুল। এ ছাড়া পয়লা বসন্তে ঢাকায় প্রায় ১০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়। তবে এবার বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস একসঙ্গে পড়ায় মোট বিক্রির পরিমাণ কম হবে।

আজ বাসন্তী শাড়ি, হলুদ পাঞ্জাবিতে সুসজ্জিত নানা বয়সী নরনারী ফুল নিয়ে পথে নামবে। আজ বসন্ত উৎসব হবে সকাল সোয়া সাতটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চে।

করোনার অতিমারিতে মানুষের জীবনযাপনে পরিবর্তন এসেছে। মুখ ঢাকতে হয়েছে মাস্কে। তফাতে থাকতে হচ্ছে পরস্পরের। মাঝেমধ্যেই আসছে জনসমাগমস্থল এড়িয়ে চলার আদেশ, বড় সামাজিক উৎসব আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা। এমনকি এই নিদারুণ মহামারির কোপ থেকে বাঁচতে ঘরবন্দীও থাকতে হয়েছে দিনের পর দিন। বিচ্ছিন্নতাই যেন এক অনিবার্য নিদান হয়ে উঠেছে এই বিপন্ন সময় অতিক্রমের।

কিন্তু মানুষ তো সমাজ, পরিবার, প্রিয়জনের সান্নিধ্য ছাড়া—সত্যিকারের বাঁচা বলতে যা বোঝায়, সেভাবে কেমন করে বেঁচে থাকবে! দীর্ঘ শীতের পর প্রকৃতিতে এল প্রাণস্পন্দন জাগানিয়া উষ্ণ বসন্ত। কুয়াশার ঘনঘোর সরিয়ে দিতে এল ফাল্গুনের সোনালি রোদ, ছুটে এল দক্ষিণের বাঁধনহারা উতল হাওয়া।

আশা থাকুক এই রোদ, এই উষ্ণতা, এই বিপুল প্রাণের স্পন্দনে অতিমারির পরাক্রমমুক্ত হবে প্রকৃতি ও পরিবেশ। কেটে যাবে দেহমনের সব জড়তা, অবসাদ। অতিমারি অনেক কিছুই হয়তো বদলে দিয়েছে, কিন্তু মানুষের চিরন্তন আবেগ বদলায়নি। এই বসন্তদিনে সেখানে ভালোবাসার প্রসূন প্রস্ফুটিত হবেই।

শেয়ার করুনঃ