১৪ই ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস। বাংলাদেশের ইতিহাসে রক্তস্নাত একটি দিন। 

আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস। বাংলাদেশের ইতিহাসে রক্তস্নাত একটি দিন।

এই দিনেই সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে শুরু হয় ছাত্র আন্দোলন, কালক্রমে যেটি গণআন্দোলনে রূপ নিয়েছিল।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তৎকালীন প্রধান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে এবং বাংলাদেশের সংবিধান রহিত করে সাত্তারের জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিসভা বাতিল ঘোষণা করেন।একইসাথে তিনি নিজেকে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করে সামরিক আইনে জারিকৃত সব বিধিবিধান ও আদেশকে দেশের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে ঘোষণা করেন।

১৯৮২ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ড. মজিদ খান ১৯৮২ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর একটি নতুন শিক্ষানীতির প্রস্তাব করেন। সেখানে প্রথম শ্রেণী থেকেই আরবি ও দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়। উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য মাপকাঠি করা হয় মেধা অথবা পঞ্চাশ শতাংশ ব্যয়ভার বহনের ক্ষমতা।

সে বছর ১৭ সেপ্টেম্বর ওই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের বিষয়ে একমত হয় ছাত্র সংগঠনগুলো।

শিক্ষার্থীদের তিনটি দাবি ছিলঃ

মজিদ খানের গণবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল,সব ছাত্র ও রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তিদান,সামরিক শাসন প্রত্যাহার করে গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।

এই নীতি ঘোষণার পর থেকেই বিক্ষোভ ও আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মিলিত হন এবং বাংলাদেশ সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। মিছিলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, জলকামান ও গুলি বর্ষণ করে। এতে নিহত হন সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের জাফর,জয়নাল, মোজাম্মেল, আইয়ুব, কাঞ্চন ও দিপালী সাহাসহ ১০ জন ।পুলিশের ট্রাকের চাপায় পঙ্গুত্ব বরণ করেন আরও অনেকে। সরকারি হিসাবে গ্রেপ্তার হয় ১ হাজার ৩১০ জন।

আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রদের তিনটি মৌলিক দাবিতে শিক্ষানীতি স্থগিত হয়ে যায়। সামরিকতন্ত্রের অবসান না হলেও ঘরোয়া রাজনীতির অধিকার দিতে বাধ্য হয় সামরিক জান্তা। আন্দোলনের সামনে সামরিক স্বৈরাচার মাথানত করে। ১৭ ফেব্রুয়ারি ছেড়ে দেয় এক হাজার ২১ জনকে এবং আটক রাখে ৩১০ জনকে।

১৮ ফেব্রুয়ারি সরকার শিক্ষানীতিটির বাস্তবায়ন স্থগিত করে। তখন থেকে দিনটিকে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *