একজন গার্মেন্ট কর্মীর বাস্তব জীবনী

সিমা আক্তার

আজ থেকে প্রায় ১০বছর আগে কোনো একটা কারণে মা আমাদের দুইটা বোন কে নিয়ে ঢাকায় চলে এসেছিলো। বাবাও আমাদের কোন খোঁজ খবর নেয় না মা ঢাকায় এসে একটা গার্মেস্টস কারখানায় কাজ করতো। অল্প কিছু টাকা বেতন পেতো। তখন আমরা দুইটা বোন খুব ছোট্ট, দেখতাম মা খুব কষ্ট করতো নিজে ভালো কিছু না খেয়ে না পরে আমাদের দুইটা বোন কে দিত। একটা কাপড় পরে কতদিন থাকতো আর আমাদের দুই টা বোনের দিকে তাকিয়ে শুধু কান্না করতো আর বাবার আশায় ছিলো যে বাবা একদিন আমাদের খোঁজ খবর নিবে। সেই আশায় মা আমাদের দুইটা বোনকে রেখে কোথাও চলেও যান নাই আমাদের কষ্ট হবে বলে।

তো মা আমাদের জন্য এতো কষ্ট করতো আমার সহ্য হতো না, বেশ কয়েক বছর পরে আমার বয়স তখন ১৪ বছর একদিন মনের কষ্টে একটা গার্মেন্টস এ চাকরি খুজতে গেলাম আল্লাহর রহমতে চাকরি টা হয়েও গেল।

জানেন চাকরি নেওয়ার পরে অফিসের কাজ কিছুই বুঝতাম না স্টাফ রা গালাগালি করতো গায়ে হাত তুলতে যেতো তখন খুব কষ্ট হতো আমার তবু্ও কাজ করতাম ভাবতাম মায়ের চাকরি টা ও চলে গেছে এদের কথা শুনে আমিও যদি চলে যায় তাহলে আমার মা আর ছোট্ট বোন টা কি খাবে কি পরবে বাথরুমে গিয়ে কান্না করে এসে আবার কাজ করতাম আর বাবাকে খুব মিছ করতাম।

মনে হতো আজ যদি আমার বাবা থাকতো তাহলে এরা আমাকে বলতে পারতো না। তারপর আমার চাকরি হওয়ার কিছুদিন মা হঠাৎ একটু অসুস্থ হয়ে যায় দুই তিন দিন অফিসে না যেতে পারায় মায়ের চাকরি টা চলে যায়.. তো আমি মাকে বলতাম মা তুমি চিন্তা করো না আমি চাকরি করে. অনেক টাকা জমিয়ে তোমাকে একটা বাড়ি বানিয়ে দিব সেই বাড়িতে তুমি সুখে থাকবা।

মায়ের জিবন টা গার্মেন্টস শেষ করে আমাদের দুইটা বোন কে বড় করলো। আর আমার জিবন টা গার্মেন্টস এ শেষ করে এখন মাকে দেখছি মায়ের চিকিৎসা করছি মাকে বাড়ি বানিয়ে আর দিতে পারিনি  কারণ একা চাকরি করে যা টাকা পাই তা দিয়ে মায়ের চিকিৎসা, বাসা ভাড়া দোকান বাকি, বাজার করে মায়ের বাড়ি বানানোর টাকা আর জমিয়ে রাখতে পারিনা তাই বলছি শ্রমিক ভাই-বোনেরা আন্দোলন যদি করতেই হয় নূন্যতম নয় বাঁচার মতো মজুরী পাওয়ার আন্দোলন করতে হবে, যাতে আপনার ছেলে মেয়েকে আর গার্মেন্টস এ চাকরি করতে না হয়, ভালো স্কুলে যেন লেখাপড়া করাতে পারেন, ভালো খাওয়াতে পারেন, ভালো পরাতে পারেন, সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ করে দিতে পারেন, যাতে আমার মতো ১৪ বছর বয়সে গার্মেন্টস এ চাকরি করতে না হয় আর আমার মায়ের মতো আপনাদের জিবনও গর্মেন্টস এ শেষ হয়ে না যায় যাই হোক কেউ কিছু মনে করেন না কেন জানি আজ খুব কষ্ট হচ্ছিলো তাই কথা গুলো বললাম

                                                     আমার মাকে কি আমি কোনদিনও একটু সুখে রাখতে পারবো না

 

লেখকঃ সিমা আক্তার, গার্মেন্ট শ্রমিক।

শেয়ার করুনঃ