বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আজীবন মুক্তি সংগ্রামী বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন (টাফ্) এর প্রয়াত সভাপতি শাহ্ আতিউল ইসলাম ১ম মৃত্যুবর্ষিকীতে “বর্তমান সময় ও শ্রমিক আন্দোলনের দিশা” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
আজ ২২ অক্টোবর ২০২১, বিকাল সাড়ে ৪টায়, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনী মিলনায়নে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন (টাফ) এর উদ্যোগে সংগঠনের প্রয়াত সভাপতি শাহ্ আতিউল ইসলামের ১ম মৃত্যুবার্ষিকীতে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন টাফ্ এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাসলিমা আখ্তার। সভায় আলোচনা করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জননেতা জোনায়েদ সাকি, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভপতি মোশরেফা মিশু, শ্রমিক কর্মচারি ফেডারেশনের সভাপতি আ. ক. ম. জহিরুল ইসলাম, ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সহ-সাধারন সম্পাদক আলিফ দেওয়ান, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল, বাংলাদেশ বহুমুখী শ্রমজীবী ও হকার সমিতির সভাপতি বাচ্চু ভূইয়াসহ অন্যান্য শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
বিভিন্ন শ্রেণি পেশার সংগঠনের পক্ষ থেকে সভার শুরুতেই শাহ্ আতিউল ইসলামের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ৮০-র দশক থেকে বিশ^ ব্যাংকের পরামার্শে স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্ট পলিজি অনুযায়ী বাংলাদেশে সরকারী বেসরকারী শিল্প এবং শিল্প শ্রমিকদের অবস্থার মধ্যে বিরাট পরিবর্তন ঘটা শুরু করে। ফলে শ্রমিক আন্দোলনের মধ্যেও পরিবর্তন আসতে শুরু করে। একইসাথে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলোও ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে নিজেদের লেজুড়ে পরিণত করে এবং এর মধ্যেমে শ্রমিক আন্দোলনকে শ্রমিক স্বার্থের বিপরীতে নিয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, সারা দুনিয়াতে এখন আনুষ্ঠিক শ্রমিকের চাইতে অনুনাষ্ঠিক শ্রমিকের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে শ্রমিকদের নিরাপত্তা, চাকুরির স্থায়িত্ব, অনিশ্চয়তা চরম আকার ধারণ করেছে। প্রাতিষ্ঠানিক ইউনিয়ন তো অনেক দূরের ব্যাপার তাদের কোনভাবে সংগঠিত হওয়ার বাস্তব শর্তই অনুপস্থিত হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশে যদি গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকে, শ্রমিকদের শ্রেণিগত স্বাথ রক্ষা করা সম্ভব হয়না। বর্তমান এই ফ্যাসিবাদী শাসনে বাংলাদেশের শ্রমিকদের প্রতিদিনের পরিস্থিতির দিকে তাকালেই দেখা যাবে। এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে হলে বর্তামান ক্রিয়াশীল শ্রমিক সংগঠনগুলোকেই ভাবতে হবে।
আলোচনা সভায় জোনায়েদ সাকি বলেন, বর্তমানে আমরা ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের মধ্যে আছি। এই ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের থেকে মুক্ত না হলে বাংলাদেশের শ্রমিকসহ মানুষের মুক্তি সম্ভব নয়। আইন দ্বারা শ্রমিকশ্রেণির অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। শ্রমিকদের রাজনীতি সংগ্রামের ভেতর দিয়ে শ্রমিকদের অধিকার আদায় করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আতিউল ইসলাম ঐক্যবদ্ধ ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের চেষ্টা করেছেন। তিনি নিজেকে কমিউনিস্ট আন্দোলনের কর্মী মনে করতেন।
বর্তমান সময়ে শ্রমিকদের ব্যবহারিক সংগ্রাম সম্পর্কে তিনি বলেন, চাকুরীর নিশ্চয়তা, বাসা ভাড়ার নিশ্চয়তা, মজুরির নিশ্চয়তাসহ বাস্তবিক জীবনের সংকটগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট শ্রমিক সংগঠন গড়ে তোলার মাধ্যমেই শ্রমিকদের বৃহৎ অর্থে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব। বর্তমানে শ্রমিক সংগঠন অনেক আছে কিন্তু শ্রেণি সচেতন শ্রমিক সংগঠনের অভাব প্রকট। চলমান ফ্যাসিবাদি ক্ষমতার বদল ঘটানো দরকার। এর বদল না ঘটালে ট্রেড ইউনিয়নসহ শ্রমিকদের কোনো অধিকার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।