আজ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টায় আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি আশুলিয়া শাখার উদ্যোগে পোশাক শ্রমিক ধর্ষণের বিচার, সকল কারখানায় যৌন নিপীড়ন বিরোধী অভিযোগ সেল গঠন এবং শ্রমিক স্বার্থের পক্ষে শ্রম আইন ও বিধিমালা সংশোধনের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
আশুলিয়া থানা শাখার সভাপ্রধান বাবুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, সাধারণ সম্পাদক জুলহাসনাইন বাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম শামা, কেন্দ্রীয় সদস্য এফ এম নূরুল ইসলাম, থানা শাখার সহসভাপ্রধান মাসুদ রানা বাবলু, সাধারণ সম্পাদক জিয়াদুল ইসলাম, আরিফা আক্তার, রূপালী আক্তারসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। সংহতি বক্তব্য রাখেন গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু।
মনববন্ধনে তাসলিমা আখতার বলেন, গত ১৫ জানুয়ারি আশুলিয়ার ইউনিকে ইপিজেড এর নারী পোশাক শ্রমিক এবং কাফরুলে ৩১ ডিসেম্বর রাতে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও সারা দেশে শ্রমিক, শিক্ষার্থী, শিশু কোন শ্রেণীর নারী নিরাপদ নেই। সমাজে পুরুষতান্ত্রিক মানস কাঠামো এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে ধর্ষণ ব্যাপক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। আশুলিয়ায় পোশাক শ্রমিক বেতন না পাওয়ায় বাসা ভাড়া সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় বাড়ীর মালিকসহ তার সাথের ৩ জন ঐ শ্রমিকের স্বামীকে আটকে রেখে গণ ধর্ষণ করে। একইভাবে কাফরুলের শ্রমিককেও ধর্ষণ করে স্বেচ্ছা সেবক লীগের গুন্ডারা। তিনি দাবি করেন অবিলম্বে এ দুটি ধর্ষণের ঘঁনার বিচার করতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, শুধু তাই নয়, প্রতিটি কারখানায় সকল শ্রমিকদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে সীমাহীন টার্গেটের চাপ। অসম্ভব টার্গেট পূরণ করতে না পারলে শ্রমিকদের ওপর নেমে আসে অবর্ণনীয় নির্যাতন। বিশেষত নারী শ্রমিকদের যৌন নিপীড়নের ঘটনা অহরহ কারখানাগুলোতে ঘটছে। জীবন দিয়ে যারা উৎপাদনের চাকা সচল রাখছেন, তারা যদি মানুষ হিসেবে, নারী হিসেবে ন্যূনতম সম্মান না পান সেটা এই শিল্পের চরম ব্যর্থতার বহিপ্রকাশ। তিনি আরো বলেন, মাননীয় হাই কোর্টের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্তে¡ও বেশিরভাগ কারখানাতে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে নির্ভয়ে অভিযোগ করার মতো কোন অভিযোগ সেল গঠন করা হয় নাই। অবিলম্বে সকল কারখানায় যৌন নিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা ও অভিযোগ সেল গঠন এবং এলাকায় এলাকায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানান তিনি।
মানববন্ধনে অন্যান্য বক্তারা বলেন, জাতীয় সংসদে বাণিজ্য মন্ত্রী স্বীকার করেছেন ২০১৯ সালে ৬০ অধিক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এবং ৩২ হাজারের অধিক শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছেন। এবং এ ছাঁটাই এখনো অব্যাহত আছে। অন্যদিকে এই ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের একটি বড় অংশকে কালো তালিকা করা হয়েছে সেন্ট্রাল ডাটা বেইজে যাতে তারা অন্য কারখানাতেও চাকরি না করতে পারে। বাণিজ্য মন্ত্রী মালিকের মন্ত্রী হয়ে আছেন, শ্রমিকের মন্ত্রী হতে পারেননি। কেননা তিনি শ্রমিকের পক্ষে কোন আশ্বাস দিতে পারেন নি। বক্তার বাণিজ্য মন্ত্রীল কথার নিন্দা জানান এবং অবিলম্বে ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের দাবি জানান।
বক্তারা আরো বলেন, শ্রম আইনকে উপেক্ষা করে বিশেষ সার্কুলার জারি করে শ্রমিকদেরকে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ওভারটাইম করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এটা সুস্পষ্টভাবে শ্রম আইন ও আইএলও কনভেনশনের লঙ্ঘণ। মালিকরা শ্রমিকদের ওভারটাইম ও টার্গেটের চাপের মধ্যে ফেলে জীবনী শক্তি নিশ্বেস করে ফেলছে। একদিকে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে শ্রমিক কাজ হারাচেছন অন্যদিকে অল্প শ্রমিকের ওপর বাড়তি কাজের কাজের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকোচিত করে ফেলা হচ্ছে। বক্তরা দাবি করেন, শ্রম মন্ত্রণালয়ের এ সার্কুলার অবিলম্বে বাতিল করতে হবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনে ওভারটাইমের সুযোগ কমিয়ে দিয়ে দুই শিফটে বেশি সংখ্যক শ্রমিকের কাজের সুযোগ করে দিতে হবে।
বক্তারা বলেন, বর্তমানে যে শ্রম আইন ও বিধিমালা আছে সেখানকার ফাঁক ফোঁকড় কাজে লাগিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে শ্রমিকদের। ৪০ বছরের শিল্পে আজ পর্যন্ত অবাধ ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি। ফলে অবিলম্বে শ্রম আইন ও বিধিমালা সংশোধন করে শিল্পের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।