করোনাকালে শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধে সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে নেওয়া ঋণের অর্থ ১৮ কিস্তির পরিবর্তে ৩৬ কিস্তিতে পরিশোধের সুবিধা চেয়েছেন তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকেরা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাক্ষাৎ করে পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানান।
বিজিএমইএর প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সহসভাপতি এস এম মান্নান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ও সাংসদ শফিউল ইসলাম, বর্তমান সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম, খন্দকার রফিকুল ইসলাম ও এম এহসানুল হক। বিজিএমইএর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়েছে।
বিজিএমইএ নেতারা বলেন, করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে পোশাকশিল্পের কঠিন সময় দীর্ঘায়িত হয়েছে। ইউরোপসহ বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি বাজারগুলো এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি। আশা করা হয়েছিল, মহামারি পরিস্থিতির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পোশাকশিল্প ঘুরে দাঁড়াতে সমর্থ হবে। তবে ভাইরাসটির নতুন ধরনের (ভ্যারিয়েন্ট) সংক্রমণ পোশাকশিল্পকে আবারও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করেছে।
পোশাক খাতের ১৩৩টি রুগ্ণ কারখানার মূল ঋণ ও আয় খাতে নিট সুদ অবসায়নের জন্য অর্থসচিবের সহযোগিতা চান বিজিএমইএর নেতারা। এ ছাড়া যেসব উদ্যোক্তা নিরাপদে ব্যবসা বন্ধ করতে চান, তাঁদের জন্য ‘চ্যাপটার ১১’ অনুসরণ করে ব্যবসা থেকে প্রস্থান নীতি প্রণয়নের অনুরোধ জানান তাঁরা।
বিজিএমইএর নেতারা বলেন, কোনো শিল্পগোষ্ঠীর একটি প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হলে তাদের সহযোগী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ঋণপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ব্যবসা পরিচালনা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যবসাও বন্ধ হয়ে যায়। তাই কোনো গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান খেলাপি হলে সহযোগী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চলমান ঋণ ও ব্যাংক–সুবিধাদি বন্ধ না করে খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিলীকরণের সুযোগ দিয়ে ঋণসুবিধা বহাল রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেন তাঁরা।
করোনার কারণে গত বছরের মার্চে একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতাদেশ আসতে থাকে। তখন পোশাকশিল্পের মালিকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লে সরকার রপ্তানিমুখী শ্রমিকদের পরের তিন মাস এপ্রিল, মে ও জুনের মজুরি দেওয়ার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। এই ঋণের বিপরীতে সেবা মাশুল ছিল ২ শতাংশ। পরে পোশাকশিল্পের মালিকেরা আরও এক মাসের মজুরি দিতে আবার ঋণ দাবি করেন। সরকারও তা মেনে নেয়। তখন তহবিলের আকার বেড়ে ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। তবে চতুর্থ মাসের জন্য ঋণের মালিকদের সেবা মাশুল ধরা হয় সাড়ে ৪ শতাংশ। বাকি সাড়ে ৪ শতাংশ সরকারের ভর্তুকি দেওয়ার কথা।
এই তহবিল থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কারখানার মালিক ঋণ নিয়েছেন। ঋণের গ্রেস পিরিয়ড ছয় মাস। পরবর্তী ১৮ মাসের কিস্তিতে সেই ঋণ পরিশোধের শর্ত ছিল। তবে গত বছরের শেষ দিকে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ প্রণোদনা ঋণের গ্রেস পিরিয়ডের সময় বাড়ানোর দাবি জানায়। তখন অর্থ মন্ত্রণালয় ঋণ পরিশোধের সময় গত ১ মার্চ থেকে আরও ছয় মাস বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়। সে জন্য এত দিন প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি দিতে হয়নি কারখানার মালিকদের।