আদিবাসীদের পানগাছ কেটে ফেলা ও অতকির্ত হামলার ঘটনায় গ্রেফতার ও বিচার দাবী

মৌলভীবাজারের খাসিয়াপুঞ্জিতে আদিবাসীদের জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্বন পানগাছ কেটে ফেলা এবং খাসিয়া, গারো আদিবাসীদের উপর অতকির্ত হামলার ঘটনায়৮ সংগঠনের উদ্বেগ প্রকাশ এবং ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার দাবী:মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের বেলুয়া খাসিয়াপুঞ্জিতে গত ২৪ আগষ্ট বুধবার আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন পানগাছ কেটে ফেলা এবং খাসিয়া, গারোদের উপর অতকির্ত হামলার ঘটনায় আমরা চরম উদ্বিগ্ন এবং তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

গত ২৪ আগস্ট ২১, বুধবার রাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের বেলুয়া খাসিয়াপুঞ্জিতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন পানগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ২৫ একর জমির পানজুমের ২৮০০ পানগাছ হারিয়ে এখন নিস্ব পাঁচ খাসিয়া ও গারো পরিবার। সামাজিক বনায়নের নামে দুষ্কৃতিকারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে স্থানীয় আদিবাসীদের অভিযোগ। এতে তাদের প্রায় ১৮ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্থ আদিবাসীদের জীবিকার নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তাছাড়া কথিত সামাজিক বনায়নের নামে আদিবাসীদের পানজুম দখলের অপচেষ্টায় বনবিভাগের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।

এছাড়া উক্ত ঘটনায় বেলুয়া পুঞ্জির হেডম্যান হেনরী তালাং আটজনকে অভিযুক্ত করে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এতে অজ্ঞাতনামা আরও ৩০-৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই আসামিরা সবক’টি টিলার পানজুমের ভূমি সামাজিক বনায়নের দাবি করে দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। এ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে খাসিয়াদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। তাদের হুমকীতে পুঞ্জিবাসীরা চরম আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। এদিকে গত ২৭ আগষ্ট, শুক্রবার, বেলকুমা পুঞ্জির (পানাই পুঞ্জি নামেও পারিচিত) ৩ খাসিয়া নারী পুরুষ চিকিৎসার পর কুলাউড়া থেকে বাড়ী ফেরার পথে, কুকিজুরি পুঞ্জির রাজ নংরুম নামে এক খাসিয়া’কে এবং তার ৫ বছরের সন্তানসহ ৫জন ও মুরইছড়া পুঞ্জির উজ্জ্বল নামের আরেক গারোকে পাশ্ববর্তী বাঙালি’রা বেধরক মেরে আহত করেছে যা উপরোক্ত পানগাছ কর্তন ঘটনারই ধারাবাহিক রূপ। শুধু তাই নয়, আক্রান্ত আদিবাসীদের যারা সহায়তা দিয়েছে এবং নিরাপত্তাহীন পুঞ্জিগুলোর পাশে যেসব মানবাধিকারকর্মী দাঁড়িয়েছেন তাঁদেরও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। তাছাড়া খাসিয়াদের পুঞ্জির দোকানদার সহ অন্যান্যদের পুঞ্জিতে খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ ও চলাচলেও বাঁধা সৃষ্টির অভিযোগ আমরা পেয়েছি। আমরা  মনে করি পূর্বেকার ঘটনাসমূহে জড়িতদের গ্রেফতার না করা এবং আইনের আওতায় নিয়ে না আসার কারণে তারা বারংবার এসব ঘটনা সংঘটিত করছে।

এমনি এক বাস্তবতায় বংশপরম্পায় পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করা খাসিয়াদের জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা দিতে রাষ্ট্রের প্রশাসন যথাযথ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে আমরা মনে করি । এছাড়া সামাজিক বনায়নের নামে পানজুম ধ্বংস করে খাসিয়া জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদের অপচেষ্ঠায় চালাচ্ছে একটি মহল। আমরা এই মানবাধিকার লংঘণের প্রতিকার চাই।

আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত দাবী করছি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারও ডলুছড়াসহ অন্যান্য পুঞ্জির আদিবাসীদের জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, অপরাধীদের  দ্রুত গ্রেফতারসহ বিচার দাবী করছি।

বিবৃতিদাতা সংগঠন সমূহ হলো:

১. সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন ২.মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন  ৩. বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ৪. বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)  ৫. এসোশিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্মস এন্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি) ৬. নাগরিক উদ্যোগ  ৭. বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম  ৮. বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)

শেয়ার করুনঃ