পরিমনির মুক্তি চাই- লাকি আক্তার

২০১৩ সাল থেকে আজকে ২০২১ সাল। এখনও আমাকে প্রতিদিন গালি খেতে হয়। ভাত খাই একটু বেশিই আর সাথে নিয়ম করে গালি ।

গণজাগরণের সময় আমার ফোন নাম্বার পর্ন সাইটগুলোতে দেওয়ার পর আমি সহস্র ফোন রিসিভ করতাম৷ ফোন থাকতো চার্জে। বাজতে বাজতে বন্ধ হত। আবার চার্জ দিতাম। আমি কাউকে আমাকে গালি দেওয়া থেকে বঞ্চিত করিনাই। দে এটলিস্ট কুড কল মি। একজন কল করতে গিয়ে আরেকজন বিজি পাইলে সেটাতো আর আমার দোষ না!

আমার সহযোদ্ধারা অনেকেই সেই ফোন রিসিভ করতো মাঝে মাঝে। ফোন রিসিভ হলেই, অপরপ্রান্ত থেকে অপরিচিত জন জানতে চাইতো রেট৷ আমার কমরেড শুভাকাঙ্ক্ষীরা বলেছিলো নাম্বার চেঞ্জ করো। আমি করিনাই। আমার লজিক ছিলো আমি আসলে নাম্বার চেঞ্জ করে করে পার পাবো না। এখনো সেই একটি নাম্বারই ব্যবহার করি। সেই চার হাজার ফোন কল এখন নাই। তবে এখনও আসে কয়েকটা কল।

আমার সংক্রান্ত যেকোন খবরের নিচে গালি থাকে সহস্র। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেখবেন, বেশ্যা, মলম বিক্রেতা, কনডম বেচা আর খ ম চ আর কিছু কালি, কাইল্লা টাইপ। এখন সেটা শুধু আমার ক্ষেত্রে না প্রায় নিউজের নিচেই এগুলোর ছড়াছড়ি। অবশ্য যেগুলোকে গালি বলা হয় সেগুলোর অনেকগুলোকে গালি বলা নিয়েও আমার আপত্তি আছে। অবশ্য বেশ কিছু গালি আছে যেগুলো রেসিস্ট। এইগুলো নিয়ে আরেকদিন আলাপ করবো!
হালকা টাচ দেই, যেমন কনডম বেচা ( ধরা যাক যারা ফার্মেসিতে কনডম বেচে, এটা কেমনে গালি ভাই! আর খ-ম-চ সংক্রান্ত গালি নিয়ে আমার কথা হলো, ভাষার মধ্যে গালির মধ্যেও লৈঙ্গিক বিষয় আছে, আর গায়ের রঙ নিয়ে গালি অবশ্যই রেসিস্ট)

যাইহোক যা বলছিলাম, আমার বাসা থেকে সুহেলকে গ্রেফতারের পর ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টদের যে ভাষা আমাকে স্লান্ডারিং এর জন্য ব্যবহৃত হয়েছিলো।সেগুলোও অনুরূপ মিসোজিনিস্ট এবং ভয়ারিস্টিক ছিলো। ভাগ্যিস সেদিন আমার বোনেরা কেউ বাসায় ছিলোনা। নইলে তারা কি ঘটনা সাজাইতো তাই ভাবি! চোখের পলকে ছবি তুলে সজীবকে বাদ দিয়ে পাঠাইলো। সেই ছবি অখ্যাত পোর্টালে আসলো। সেই লিংক শেয়ার দিলো ছাত্রলীগের অনেক নেতা। আর চললো স্লান্ডারিং৷ আর ভাষা একই!

এগুলোরে যে আমি পাত্তা দেই না, তা সকলেই জানেন। তবে এর মাধ্যমে আমি সমাজকে চিনি। ইভেন আই স্টাডি অন মাইন টু! আর সকলেই জানেন যে, আমি এত শর্ট টেম্পারড না যে গালি দিয়ে আমাকে আমার কাজ থেকে বিরত রাখা সম্ভব! কিন্তু বহু মানূষ আছে একটা দুটো গালিও নিতে পারেন না। ট্রমাটিক হয়ে যান। ফলে এটা নিয়ে অবশ্যই কথা বলতে হবে। আর যে কাউকে মিসোজিনিস্ট আক্রমণ করলে আমি অবশ্যই প্রতিবাদ করবো। কেউ রুখে দাড়ালে তার পা্শে থাকবোই।

এক ঘটনা মনে পড়লো, ২০১৩ সালে আমাকে নিয়ে এক লোক চিঠি লিখেছিলো সিপিবি সভাপতির কাছে। এটা হুমকি ছিলো না। ভালোবেসে লিখেছিলো যে, তার আমার জন্য অনেক চিন্তা। যে আমাকে তো কেউ বিয়ে করবে না! তিনি যেন আমার বিয়েটা দিয়ে দেন। ভালোবাইসা বলতে পারেন ।

এখনও আমাদের সমাজে পরিবারও এরকম অনেক ক্ষেত্রে ভালোবাইসাই স্টেরিওটাইপ চিন্তা পুশ করতে থাকে। মানে আদর্শ জীবন মানে বিয়ে মানে এক বিয়ে, বাসায় থাকা, রাজনীতি না করা, বা তাদের আরোপিত মোরালের শৃংখলা এরকম স্টেরিওটাইপ চিন্তা আরকি! আরও বহু বিষয় আছে এরকম। অবশ্য খোদ বামপন্থী দলের বহু ব্যক্তির মধ্যে এই রকম স্ট্রেরিওটাইপ চিন্তা বহু পাওয়া যাবে। বক্তৃতা একরকম আর পরিবারে আরেকরকম সেটাও পাওয়া যায়! সেগুলোর বিরুদ্ধেও লড়তে হয় আমাদের। ভিক্টোরিয়ান মরালিটির ধারনা সব জায়গায়ই খুজে পাওয়া যায়।

এইসব আলাপ করলাম পরিমনির বিষয় বলার জন্য। পরিমনির উপর যে কায়দায় আক্রমন হচ্ছে, যে মোরাল পুলিশিং হচ্ছে সেটা এখানে একজন মানুষের নাগরিক অধিকারের হনন। তার মর্যাদার উপর আক্রমণ। এই কদর্য খেলায় যুক্ত এই মাফিয়া রাষ্ট্রের বহু অরগান। প্রপাগাণ্ডায় শামিল তাদের বিভিন্ন টুলস! ফলে আমাদের এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতেই হবে! আবার প্রতিবাদ প্রতিরোধ করতে গিয়ে, আমরাই যেন আবার কোন মিসোজিনিস্ট শব্দ চয়ন না করি সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখা কর্তব্য।

আর এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। নারী প্রশ্নে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা মূল ইস্যুর সাথেই আলাপ দিতে হবে। কারন আমরা যে সমাজকে নতুন করে ভেংগে নতুন সমাজ গড়তে চাই, সে কাজে আগে আমাদের চিন্তা, মননে মগজ থেকে পুরুষতন্ত্র এবং স্টেরিওটাইপ ভাবনা থেকে থাকলে সেটাকে আগে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। ঝেটিয়ে বিদেয় করতে হবে।

চলবে….

লিখেছেনঃ লাকি আক্তার

শেয়ার করুনঃ