চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি পরীমণির পক্ষে অবস্থান নেয়নি। উল্টো সাময়িকভাবে তারা পরীমণির সদস্যপদ স্থগিত করেছে। যদিও এখনো পরীমণির বিরুদ্ধে কোনো মামলাই হয়নি,তারপরেও। কারণ হিসেবে ওরা দেখিয়েছে,পরীমণির চলাফেরা এলোমেলো ছিলো। তাছাড়া তারা কিছু অশোভন মন্তব্যও করেছেন। যা খুবই দুঃখজনক।
তারা প্রশ্ন তুলেছেন একজন মেয়ে বেশি রাতে বাইরে থাকবে কেন? সে অত রাতে বোট ক্লাবে গেলো কেন। ইত্যাদি ইত্যাদি হাবিজাবি সব কথা। কেন? পরীমণি বোট ক্লাবে যেতে পারবে না কেন? বোট ক্লাব খারাপ জায়গা? বোট ক্লাব যদি খারাপ জায়গাই হয়,তাহলে পুরুষ মানুষই বা ওখানে যাবে কেন? বোট ক্লাব বা বিভিন্ন ক্লাব যদি দুর্বৃত্তের আখড়া হয়,সে গুলো যদি হয় দুষ্কৃতিকারীর অভয়ারণ্যই হয়ে থাকে-তাহলে তো এই ধরণের ক্লাব গুলোই বন্ধ ক’রে দেওয়া দরকার।
এখানে পরীমণি বা নারী পুরুষের কোনো ব্যাপার নয়। অস্বাস্থ্যকর কোনো জায়গা নারী পুরুষ কারোরই যাওয়ার জায়গা হতে পারেনা। যে নিকৃষ্ট জায়গা সকলেরই বয়কট করা উচিৎ,চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি সেইটাকে পরীমণির সদস্য পদ স্থগিতের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে।
অথচ ওখানে আমাদের কথিত দামি আরও তারকদের যাতায়াত আছে। তাছাড়া আমি রাতেই বা বেরোতে পারবো না কেন? দরকার হলে আমি প্রতি রাতেই বাইরে বেরোনোর অধিকার রাখি। প্রশ্নটা দরকারের। যে দেশের জন্য চার লক্ষ নারী নিজেদের নিঃশেষ ক’রে দিয়েছে,সেই দেশে কেন প্রশ্ন উঠবে মেয়েরা কখন বেরোতে পারবে আর কখন পারবে না! ৫০ বছরেও কেন আমরা এদেশের মানুষদের নিরাপদে চলাফেরা করার নিশ্চয়তা দিতে পারিনা? আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া বিতর্কিত এক আধজনকেও চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির মিটিংয়ে দেখা গেলো।
সিনেমা দেখা মানুষ হয়েও বাদবাকিদের আমি চিনতে পারিনি ওরা কারা,যারা আমাদের দেশটাকে আবার মধ্যযুগে নিয়ে যেতে চায়? চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সদস্যদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি,রাতের অন্ধকারে বাঘ ভালুক নারীদের চলাফেরা করার অন্তরায় নয়। কিছু নরপশু দিনে দিনে আমাদের দেশে বেড়ে উঠেছে। এবং ৭১ এর ধর্ষকরা এদের পরমাত্মীয়। এই সব নরপশুরাই নারীসমাজের রাতে দিনে চলাফেরা করার প্রধান বাঁধা। তাই পরীমণির পায়ে শিকল লাগানোর দুর্বুদ্ধি না এটে বরং চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি ধর্ষক নরপশুদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন এটাই আমরা আশা করি।
লেখকঃ তাহেরা বেগম জলি