পৃথিবীর সকল বাবাকে বাবা দিবসের শুভেচ্ছা

এসব ব্যাপারে আমি অনেক চাপা। মানে ফিলিংস প্রকাশ করার ব্যাপারে। এখন এটাকেImmaturity বলবেন নাকি বোকামী সেটা সম্পূর্ণ আপনার ব্যাপার। আব্বু তো বলে , আমি নাকি পৃথিবীর সবচাইতে বড় বলদ। মাঝে মধ্যে নাকি অভিনয় করে হলেও বাবা-মাকে জড়ায় ধরতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে আমার যুক্তি একেবারেই ভিন্ন।

ছোটবেলায় কেমন ছিলাম জানি না, ওতো একটা মনে নাই আসলে। কিন্তু মনে আছে যে আব্বুর সাথে অনেক ক্লোজ ছিলাম। যদিও এখন অনেক কিছুই চেঞ্জ হয়ে গেসি। আব্বুর ব্যাপারে কিছু কথা বলি। এগুলা আমি নিজেও কখনো আব্বুর সামনে বলি নাই। আর মনে হয় না বলতে পারবো। ওইযে বললাম না ? আমি এসব ব্যাপারে অনেক চাপা। আব্বুকে যদি বলি, ” আব্বু আসার সময় ৫ টা কলম নিয়ে আইসো ” , আব্বু সেটা ভুলে যাবে। মনে করায়ে দিলে মনে পরবে আনার কথা। যদি বলি ” আব্বু আমার এই বইটা কিনা লাগবে , নিয়ে আইসো ” আব্বু সেটা আনতে একটু দেরী করবে (ভুলে যাবে না) কিন্তু যদি বলি ” আব্বু আমার প্যাড শেষ , আসার সময় নিয়ে আইসো ” এটা আব্বু কখনো ভুলবে না। এই ব্যাপারে আব্বু অনেক সতর্ক।

আব্বুকে একবার বলসিলাম যে বাসায় টিস্যু নাই, তখন বোধহয় রাত ১০:৩০ টা বাজে। সেদিন আব্বু অফিস থেকে আসছে ৯ টার দিকে। এসে কোনমতে খাওয়া-দাওয়া করে বিছানায় গিয়ে একটু শুইসে। ওই সময়ে আমার মনে পড়সে যে আনার টিস্যু লাগবে। আম্মুর থেকে লুকায়ে আস্তে আস্তে গিয়ে আব্বুকে বলসিলাম । আব্বু সাথে সাথে শার্ট পরে বাহিরে গিয়ে নিয়ে আসছে। আম্মু আমার উপর রেগে যাবে দেখে আমার হাতে লুকায়ে টিস্যুর প্যাকেট দিসে আর আম্মুকে বলসে যে সিগেরেট শেষ হয়ে গেসিলো দেখে বাহিরে গেসে।

আরবকটা কথা বলি, আব্বুর সাথে বাহিরে বের হলে যদি কিছু খাইতে চাই, আব্বু সেটা কিনে দিবে, পাশাপাশি এক্সট্রা কিছুও খাওয়াবে। কিন্তু আমি জানি যে, দোকানদারকে টাকা দেওয়ার সময় , আব্বু লুকায়ে টাকা গুনে দেখে, সারাদিনের হাতখরচের টাকাটা হবে তো ! তখন আমিই বলি ” আব্বু এটা খাবো না, বাজে টেস্ট ” কখনো বলি ” না, আজকে না, আজকে পেট ভরা, অন্যদিন খাবো “।
রেজাল্ট খারাপ হলে আম্মু বকতো কিন্তু পাশের থেকে আব্বু চোখ দিয়ে ইশারা করে বলতো ” শেষটা ভালো হবে , মন খারাপ করিস না ” আব্বুর কিন্তু আরো অনেক গুন আছে। আম্মুর অনেক খেয়াল রাখে। আম্মুর টেমপার বুঝে। রান্নাঘর থেকে ঘেমে বের হলে গামছা দিয়ে আম্মুর শরীর মুছে দেওয়ার জন্য দৌড়ায় যায়। আম্মুর শাড়ির কুচি ঠিক করে দেওয়া থেকে শুরু করে আম্মুর সব ঔষধ গুছিয়ে খেতে দেওয়া পর্যন্ত সবকিছু আব্বু পারে। আরো অনেক কথা আছে যেগুলো আমি খেয়াল করি।

চোখে দেখি , কানে শুনি কিন্তু প্রকাশ করিনা। আমি এসব লিখতেসি , আমি জানি আব্বু এগুলা পরে ইমোশোনাল হয়ে যাবে। আর এটাও সত্য যে, আজকে অফিস থেকে বাসায় আসার পর আমি একটু লুকায় লুকায় থাকবো, এতো কিছু বলে ফেলসি যে। আব্বু শুনো, অফিস থেকে বাসায় এসে এমন একটা ভান ধরবা যেনো তুমি কিছু পড়োই নাই , ঠিক আছে ? আর হ্যা , এবার তো কিছু দিতে পারলাম না। কিন্তু পরের মাসে বেতন পেলে তোমাকে একটা পাঞ্জাবি কিনে দিবো, তোমাকে সাথে করেই নিয়ে যাবো। এবার তো দিতে চাইসিলাম কিন্তু হলো না।
পরের মাসে ইনশা আল্লাহ। আর হ্যা, Happy Father’s Day , দোয়া করি যেনো তোমার আগামী দিনগুলো ভালো যায়, এবং আল্লাহ তোমাকে অনেক অনেক সুখী রাখেন। আমি আমার কথায়-কাজে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলি। ভেতরে ভেতরে ভাবি যে গিয়ে জড়ায় ধরে সরি বলে দেই, কিন্তু কেমন যেনো লাগে। তাই আর যাই না। মাফ করে দিও হ্যা? পৃথিবীর সকল বাবাকে বাবা দিবসের শুভেচ্ছা। আল্লাহ সকল বাবাকে নেক হায়াত দান করুক আর যারা ওপাড়ে আছেন, তারা জান্নাতবাসী হোক। আমিন।

লিখেছেনঃ রেহনুমা বিনতে হোসাইন (মুমু)
মিরপুর, ঢাকা।

শেয়ার করুনঃ