প্রশাসনিক বা পুলিশি তদন্ত নয়, বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে বাঁশখালীতে শ্রমিক হত্যাকারীদের চিহ্নিত করুন, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন
বাঁশখালীর গন্ডামারায় এস.আলম. গ্রুপের মালিকাধিন কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে গুলি করে ৫ জন শ্রমিক হত্যার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত, কর্তৃপক্ষ-নিরাপত্তারক্ষী-পুলিশসহ শ্রমিক হত্যার জন্য দায়িদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে শ্রমিক হয়রানি বন্ধ, নিহত শ্রমিকদের আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ, আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত ১০ দফা মেনে নেওয়ার দাবিতে আজ সাকাল ১১-০০ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ-স্কপ এর আহবানে বিক্ষোভ প্রদর্শনের কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়।
স্কপের যুগ্ম-সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি শহিদুল্লাহ চৌধুরির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন স্কপ নেতা জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কামরুল আহসান, সাধারণ সম্পাদক আমিরুল হক আমিন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম, জাতীয় শ্রমিক লীগের ট্রেড ইউনিয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ হোসেন, জাতীয় শ্রমিক জোটের যুগ্ম সম্পাদক সালেক আহমেদ প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল।
নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রতক্ষ্যদর্শীদের ভাষ্যমতে এস.আলম গ্রুপের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শ্রমিকরা বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ, রোজার মধ্যে ১০ ঘন্টার পরিবর্তে ৮ ঘন্টা কর্মদিবস বাস্তবায়ন, শুক্রবারের ডিউটির সময় ৮ ঘন্টার পরিবর্তে ৪ঘন্টা নির্দারণসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছিল। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকের প্রতিনিধিরা আগেরদিন শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পরের দিন তা অস্বীকার করায় শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে কাজ বন্ধ করলে তাদের কাজে যোগ দিতে বাধ্য করতে শক্তি প্রয়োগ করা হয়। তখন শ্রমিকরা বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করলে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৫ জন শ্রমিককে হত্যা এবং অর্ধশতাধিক শ্রমিককে মারাত্মভাবে জখম করা হয়।
নেতৃবৃন্দ বলেন, কোন পূর্ব নোটিশ ছাড়া, নিজেদের জীবন হারানোর মত ঝুঁকি তৈরী হওয়া ছাড়া পুলিশ নির্বিচারে গুলি করতে পারেনা। এস.আলম. কোম্পানির ভাড়াটিয়া কোন বাহিনীর দায় পুলিশকে সামনে এনে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে কিনা সেই সংশয় প্রকাশ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, যদি ঐ শ্রমিকদের বুকে পুলিশ গুলি চালিয়ে থাকে তাহলে খুনের অপরাধে পুলিশের ঐ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আর তদন্ত ছাড়াই ঘটনা প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের ভুমিকা দেখে মনে হচ্ছে তারা প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করছে। তাই প্রশাসন বা পুলিশের তদন্ত নয়, প্রকৃত সত্য উদঘটন ও অপরাধীদের চিহ্নিত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে। দেশের দ্বিতীয় প্রধান শিল্প শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে শ্রম আইন লঙ্ঘন করে কর্মকান্ড পরিচালনার প্রেক্ষিতে শ্রম দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভুমিকা কি ছিল তাও তদন্ত করে দেখতে হবে।
কয়েক হাজার শ্রমিকের নামে সম্পদ ধ্বংসের মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করায় নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একই প্রকল্পে ৫ বছর আগেও গুলি করে ৪ জন মানুষ হত্যা করা হয়েছিল। পুলিশের ব্যার্থতার কারণে সেই হত্যাকান্ডের বিচার হয়নি বলেই একই ধরণের ঘটনার পুণরাবৃত্তি ঘটল। শ্রমিকদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করার আহবান জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, তিন লক্ষ নয় নিহত শ্রমিকদের পরিবার প্রতি আই.এল.ও কনভেনশন ১২১ অনুসারে আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত ১০ দফা মেনে নিতে হবে। সমাবেশ থেকে বিচার বিভাগীয় তদন্ত, নিহত শ্রমিক পরিবার প্রতি আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়।
স্কপ নেতৃবৃন্দ, অধিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে শ্রমিকদের রক্ষা করতে শ্রম আইনের কর্মঘন্টা সংশ্লিষ্ট ধারা সমূহ স্থগিত করে জারী করা প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে বাতিল করার এবং করোনা সংকটে কর্মহীন প্রকৃত শ্রমজীবীদের হাতে সহায়তা পৌঁছানো নিশ্চিত করতে ত্রাণ বিতারণ প্রক্রিয়ায় ক্রিয়াশীল শ্রমিক সংগঠনসমূহ কে যুক্ত করার জোর দাবি জানান।