তুমুল বিতর্কের মুখে ১ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণের নতুন তারিখ নির্ধারণ

তুমুল বিতর্ক, সমালোচনা আর আন্দোলনের মুখে অবশেষে সরস্বতী পূজার দিন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ৩০ জানুয়ারির পরিবর্তে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণের নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

শনিবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ইসির জরুরি বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

রাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা জানান, ‘সরস্বতী পূজার পূর্বনির্ধারিত তারিখ নিয়ে আমাদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছিল। আবার ১ তারিখ থেকে এসএসসি পরীক্ষাও শুরু হওয়ার সময়সূচি ছিল। এসব নিয়ে আজ আমরা বৈঠকে বসেছি। পাশাপাশি শিক্ষমন্ত্রীরও সঙ্গেও কথা বলি।’

‘‘তিনি (শিক্ষামন্ত্রী) জানিয়েছেন, ১ তারিখ পরীক্ষা পেছাতে কোনো সমস্যা নেই। তাই আমরা ৩০ জানুয়ারির পরিবর্তে ১ ফেব্রুয়ারি দুই সিটি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’

গত ২২ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণের জন্য ৩০ জানুয়ারি তারিখ রেখে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন।

কিন্তু একই তারিখ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজা থাকায় বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন তার প্রতিবাদ করে নির্বাচন পেছানোর দাবি তোলে।

কেননা পঞ্জিকা অনুযায়ী ২৯ জানুয়ারি সকাল ৯টা ১৫ থেকে ৩০ জানুয়ারি সকাল ১১টা পর্যন্ত সরস্বতী পূজার আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। আর ৩০ জানুয়ারি পঞ্চমীর আগে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া যায় না।

তাছাড়া এই পূজা দেশের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হয়ে থাকে। আর ৩০ জানুয়ারি নির্বাচন হলে কয়েক দিন আগে থেকেই ভোটের কার্যক্রম শুরু হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

এমন অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ সিটি নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। যদিও সেই রিট খারিজ করে দেন আদালত। তবে খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন ওই আইনজীবী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও নির্বাচন পেছাতে একাধিক দিন রাজধানীর শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এরপর তারা আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছে।

এত কিছুর পরেও নির্বাচন কমিশন ভোটের তারিখ পরিবর্তন না করার পক্ষে অনড় অবস্থান নেয়। এমনকি ভোট এবং পূজা এক সাথে অনুষ্ঠানে কোনো সমস্যা হবে না দাবি করে পুরোদমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে থাকে।

এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন হলে আওয়ামী লীগের কোনো সমস্যা নেই।

একই রকমের অবস্থানের কথা জানায় সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, সিপিবি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে সরস্বতী পূজার দিনে ভোটগ্রহণ না করতে ইসির প্রতি আহ্বান জানান।

আজ শনিবার নির্বাচন পেছানোর দাবিতে নতুন কর্মসূচি হিসেবে ২০ থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত মানববন্ধন, বিক্ষোভ, গণ-অবস্থান, অবরোধ এবং প্রতীকী অনশনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

এমন প্রেক্ষাপটে শনিবার বিকালে দুই সিটির ভোটগ্রহণের নতুন দিন নির্ধারণে জরুরি বৈঠকে বসে ইসি। সেই বৈঠক শেষেই সরস্বতী পূজার দিনে ভোটগ্রহণ না করার এই সিদ্ধান্তে আসে তারা।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *