গার্মেন্ট শ্রমিক টিইউসি’র শ্রমিক সমাবেশ-প্রয়োজনে সারাদেশে কর্ম বিরতি ও সর্বাত্মক ধর্মঘটের হুশিয়ারি।
শ্রম আইনের শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী সকল ধারা অবিলম্বে সংশোধনের দাবিতে আজ ২ এপ্রিল ২০২১, শুক্রবার বিকেল ৪টায় শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র’র ডাকে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে অবিলম্বে শ্রম আইনের শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী সকল ধারা সংশোধনের দাবি জানানো হয়। বর্তমান শ্রম আইনকে সংবিধান বিরোধী উল্লেখ করে বক্তারা প্রয়োজনে সারাদেশে কর্ম বিরতি ও সর্বাত্মক ধর্মঘটের হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র’র সভাপতি শ্রমিকনেতা মন্টু ঘোষ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শ্রমিক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি জননেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, গার্মেন্ট শ্রমিক টিইউসির কার্যকরি সভাপতি শ্রমিকনেতা কাজী রুহুল আমীন, সাধারণ সম্পাদক শ্রমিকনেতা জলি তালুকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু, সাদেকুর রহমান শামীম, জিয়াউল কবির খোকন, আকলিমা আক্তার ডলি, এমএ শাহীন, মঞ্জুর মঈন, শফিকুল ইসলাম প্রমুখ। সমাবেশটি পরিচালনা করেন সংগঠনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন।
সমাবেশে সিপিবি সভাপতি জননেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, দেশের জনগণের প্রতি ক্ষমতাসীন সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তারা দায়বদ্ধ দেশের লুটেরা ধনিক শ্রেণির কাছে। ফলে সাধারণ কৃষক শ্রমিক জনতার ওপর শোষণ চালিয়ে এই লুটেরাদের সম্পদ বৃদ্ধির ব্যবস্থা করাই তাদের একমাত্র কাজ। তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত দেশের সংবিধান ঘোষণা করেছে জনগণকে সকল প্রকার শোষণ থেকে মুক্তি দেয়াই হবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব। অথচ শোষণের হাতিয়ার হিসেবে সংবিধান বিরোধী একটি শ্রম আইন মালিকদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, শ্রেণীসংগ্রাম তীব্র করার মধ্য দিয়েই এই শোষণ ব্যবস্থার পতন ঘটাতে হবে।
করোনার নতুন ঢেউ প্রসঙ্গে কমরেড সেলিম আরো বলেন, মানুষের দুর্ভোগ দুর্দশাকে পুঁজিতে পরিণত করা হয়েছে। ফলে করোনার অসুখের চেয়ে ভয়ংকর হয়ে দেখা দিয়েছে এর অর্থনৈতিক ও সামাজিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধগতি, দারিদ্র, ছাঁটাই, বেকারত্ব, অনাহার, চিকিৎসা না থাকা ইত্যাদি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আসল অসুখের চেয়ে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। তিনি সরকারের প্রতি হুশিয়ারি উচ্ছারণ করে বলেন, এই অবস্থা আর চলতে দেয়া হবে না।
সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বলেন, শ্রমিকদের দাবি একটি গণতান্ত্রিক শ্রম আইন। যে আইন ন্যায় বিচারের সবার প্রতি সমান; যা শ্রমিককের উপরে শোষণ চালানোর জন্য মালিকের হাতিয়ার হবে না। তারা আরও বলেন, দেশের সংবিধান সংগঠন করার ও সমবেত হওয়ার অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। জবরদস্তিমূলক সকল প্রকার
শ্রমকে নিষিদ্ধ করেছে। কর্মের অধিকার; কর্মের গুণ ও পরিমাণ বিচারে যুক্তিসঙ্গত মজুরির অধিকার; বিশ্রাম, বিনোদন, অবকাশের অধিকার এবং সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার ইত্যাদিকে সংবিধানে জনগণের মৌলিক প্রয়োজন বলা হয়েছে। একইসঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে সংবিধানে এই সকল নিশ্চিত করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সংবিধানের ২৬
অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকারসমূহের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আইন বাতিলের বিধান আছে।
তারা বলেন, প্রচলিত শ্রম আইন শ্রমিকের স্বার্থবিরোধী এবং বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। এই শ্রম আইনকে অবিলম্বে শ্রমিকের স্বার্থের পক্ষে সংশোধন করতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, বিনা নোটিশে শ্রমিককে বরখাস্ত করার ২৩ ধারা, বিনা কারণে শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা ২৬ ধারা, শ্রমিককে ইস্তফাজনিত সুবিধা বঞ্চিত করার ২৭ ধারা, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার হরণ করার ১৭৯ ধারা ও ১৮০ ধারার ১(খ) উপধারা, দৈনিক কর্মঘণ্টা ‘৯ ঘণ্টা’ করার বিধান, স্টাফ নাম দিয়ে পাওনা বঞ্চিত করার ২নং ধারার ৬৫ উপধারা, আন্দোলন দমনের ১৩(ক) ধারা, শ্রমিকের পাওনা চুরির ২৮(ক) ধারা, মাত্র দুই-আড়াই লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ আইনসহ সকল শ্রমিক বিদ্বেষী আইন অবিলম্বে বাতিল না করলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল শাহবাগ থেকে কাঁটাবন হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।