পত্র পত্রিকা মাধ্যমে জানতে পারলাম তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর উদ্যোগে পরিচালিত বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্টের (এসিডি) পরিচালক ও অর্থনীতির অধ্যাপক একে এনামুল হক আজ ৬ মার্চ এক জরিপ গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন।
অর্থনীতির অধ্যাপক একে এনামুল হক অসত্য ও বিজিএমইএর শিখানো তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০২০ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের মাসিক আয় ৬৭ দশমিক ১৮ শতাংশ বেড়েছে। প্রতিবছর গড়ে ১০ দশমিক ১ শতাংশ হারে শ্রমিকদের আয় বেড়েছে। “২০২০ সালে শ্রম বিক্রি করে একজন শ্রমিকের গড় আয় দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৪০২ টাকা, যা ২০১৪ সালে ছিল ৬ হাজার ৮২০ টাকা।”
এনামুল হক বলেন, শ্রমিকদের মাসিক ব্যয়ের ধরণ বিশ্লেষণ করলে তাদের জীবনমানের উন্নয়ন বুঝা যায়। ছয় বছরে খাদ্য বা বাসস্থানে তাদের তেমন ব্যয় বাড়েনি। কিন্তু প্রসাধনী কেনায় অথবা ভ্রমণ ব্যয় বেড়েছে।
জরিপের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, গত ছয় বছরে বাড়ি ভাড়া এবং বিদ্যুত্-পানি খাতে শ্রমিকের গড় খরচ ৩ হাজার ৪১০ টাকা থেকে মাত্র ২ শতাংশ বেড়ে ৩ হাজার ৮৭৮ টাকা হয়েছে। একইভাবে খাদ্য খাতে ব্যয় বেড়েছে ৪ শতাংশ। কিন্তু প্রসাধনী ক্রয় খাতে খরচ ১২ শতাংশ এবং ঘোরাঘুরিতে ২৩ শতাংশ বেড়েছে। পোশাক শ্রমিকের মাসিক আয় ২৩ হাজার ৬৯৯ টাকা, আর ব্যয় হয় ১৬ হাজার ৫৯৬ টাকা। বাকি ৭১০৪ টাকা সঞ্চয় করেন।
অথচ প্রতি বছর গড়ে ৭ শতাংশ হারে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে।দেশে মুদ্রাস্ফীতি যে হারে বেড়েছে, সে অনুপাতে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়েনি। ‘২০১৪ সালে মজুরি ছিলো ৬ হাজার ৮২০ টাকা। ২০২০ সালে তা হয়েছে ১১ হাজার ৪২০ টাকা। প্রতি বছর গড়ে ৭ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হলে ছয় বছরে ৫০ শতাংশ হয়। তার ওপর এই কয়েক বছরে চালসহ খাদ্য পণ্যের দাম দ্বিগুন হয়েছে।দেশের সামগ্রিক মুল্যস্ফীতি ও ভোক্তা মুল্য সূচক বিবেচনা করলে, পোশাক শ্রমিকের বেতন খুব একটা বাড়েনি।তাই সঞ্চয়ের সুযোগ খুব একটা বাড়ার কথা নয়। ভবিষ্যতের জন্য টাকা সঞ্চয় করতে গিয়ে, জীবন যাত্রার মান কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। জীবন যাত্রার মান কমিয়ে দেওয়ার কারনে তারা পুষ্টি হীনতায় ভুগছে।
বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী নারী শ্রমিকদের প্রধান্য দেওয়া হচ্ছে। শ্রমিকের কাজের দক্ষতা থাকলেও তাদের ৬ নং গ্রেডে দেওয়া হচ্ছে। যে সব শ্রমিকের বয়স ৩৫ বছর পার হয়ে গিয়েছে তাদের বিভিন্ন কৌসলে চাকুরী চ্যুত করা হচ্ছে, তারা আর কোথাও চাকুরী পাচ্ছেনা, পরিবারের বোঝা হয়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছে। করোনা ভাইরাসের কারনে শ্রমিক সংগঠন গুলোর সাংগঠনিক কার্ষক্রম অনেকটা কমে যাওয়ার কারনে করোনা ভাইরাসের সুযোগ নিয়ে শ্রমিকদের উপর নির্যাতন অনেক বেড়ে গিয়েছে। কিছু কিছু কারখানায় মাতৃত্বকালীন সুবিধা দেওয়া হচ্ছেনা, তিন জন শ্রমিকের কাজ দুই জন শ্রমিককে দিয়ে করানো হচ্ছে, কিছু কিছু কারখানায় শ্রমিকদের উপর শারীরিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন বেড়ে গিয়েছে। শ্রমিকদের কাছ থেকে জোরপূর্বক সাদা কাগজ-রিজাইন পেপারে স্বাক্ষর নিয়ে চাকুরী চ্যুত করা হচ্ছে এবং তাদের পাওয়া দেওয়া হচ্ছেনা।
অধ্যাপক এনামুল হক বলেন, ১৬০টি কারখানার একহাজার ১১৯ জন শ্রমিকের উপর এই জরিপ গবেষণা চালানো হয়। আমি তার কাছে জানতে চাচ্ছি কোন কোন গার্মেন্ট কারখানায় এবং কোন কোন শ্রমিকের উপর এই জরিপ চালোনা হয়েছে। বিজিএমইএর শিখানো এই ধরণের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য তুলে ধরার প্রতীবাদ জানাচ্ছি।
বিজিএমইএর শিখানো এই ধরণের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য জরিপ গবেষণার প্রতিবেদন বাতিল করে গার্মেন্ট শ্রমিকদের প্রকৃত তথ্য তুলে ধরার জন্য অনুরোধ করছি।
লিখেছেনঃ খাইরুল মামুন মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র।