আজ ৫ মার্চ ২০২১, শুক্রবার ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ উপলক্ষে সিপিবি’র কেন্দ্রীয় নারীসেল -এর আয়োজনে র্যালী, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল ৩টায় ‘নারীর প্রতি সহিংসতা ও শোষণ -বৈষম্য রুখো, সমাজতন্ত্রের লড়াই অগ্রসর করো’এই শ্লোগানকে সামনে রেখে একটি র্যালী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে সচিবালয় প্রদক্ষিণ করে আবারও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়।
র্যালী শেষে মৈত্রী মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃিতক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। সিপিবি কেন্দ্রীয় নারীসেলের আহবায়ক কমরেড লক্ষী চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
আলোচনা সভায় নারীসেলের নেতৃবৃন্দ নারীর প্রতি বিদ্যমান নানা বৈষম্য ও নীপিড়নের তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন , নারীকে দুইটি বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়- এক হলো বিদ্যমান শোষণ নীপিড়নের বিরুদ্ধে, আরেকটি হলো পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার কিরুদ্ধে। তিনি আরও বলেন-দেশে যখন গণতন্ত্র থাকে না সমাজে তখন শোষণ নিপীড়ন বাড়তেই থাকে এবং এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় নারী সমাজ। যার কারণে আজকে বাংলাদেশে যে কোনো সময়ের চেয়ে নারী নির্যাতন খুন-ধর্ষণ ও শিশু হত্যা ভয়াবহ আকরে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিনই দেশের, কোনো না কোনো প্রান্তে নারী ও শিশুরা খুন-ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
কমরেড লক্ষ্মী চক্রবর্তী বলেন নারী মুক্তির লড়াই একটি রাজনৈতিক মতাদর্শিক লড়াই। সমাজে নারীর অবস্থান কি হবে তা আসলে নির্ভর করে নারীর প্রতি রাষ্ট্রের কি দৃষ্টিভঙ্গী তার উপর। পুঁজিবাদ নারীকে পণ্যে পরিণত করে, মৌলবাদ নারীকে আরও অধীনস্ত করে তুলে। এ দুইই সমানভাবে নারীমুক্তি ও নারীর সমঅধিকারের বিরোধী শক্তি, কাজেই এ দ‘ুয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে যা প্রকারান্তরে সমাজ পরিবর্তনের লড়াই।
বক্তারা বলেন, সারাবিশ্বে সমাজতান্ত্রিকরাই আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সূচনা করে। নারীশ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি-ও ন্যায্য শ্রমঘণ্টা প্রতিষ্ঠার লড়াইই আজ সারা বিশ্বের নারীমুক্তির আন্দোলনের প্রেরণার উৎসে পরিণত হয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, বিদ্যমান আইনী কাঠামোতে নারীর সমঅধিকার চরমভাবে অবিেলত। রাষ্ট্রে বিচারহীনতা ও জবাবদিহীতার অভাব, সর্বোপরি গণতন্ত্রহীনতার কারণে নারী-নির্যাতন-শোষণ ক্রমাগত: বেড়েই চলে। পুঁজিবাদ নারীদিবসের তাৎপর্যকে ভিন্ন ধারায় একটি সাধারণ আনন্দ উদযাপনে করেছে। এ ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। কাজেই নারীমুক্তির লড়াই এবং সমাজ টরিবর্তনের লড়াই সমানভাবেই অগ্রসর করতে হবে।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক জলি তালুকদার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড মাকসুদা আক্তার লাইলী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড লুনা নূর, কৃষক নেত্রী কমরেড লাকী আক্তার, কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক অ্যাড. আইনুন্নাহার লিপি, নারীনেত্রী কমরেড শাহানারা বেগম। এছাড়া প্রতিবাদী সংগীত ও কবিতা আবৃত্তি করেন শিল্পী আক্তার, পুষ্পিতা ও অন্যন্য শিল্পীবৃন্দ। সভা পরিচালনা করেন নারীসেলের সদস্য কমরেড তাহমিনা ইয়াসমিন নীলা। সবশেষে সমবেত কন্ঠে কমিউনিষ্ট ইন্টারন্যাশনাল পরিবেশনার মধ্য দিয়ে সভা সমাপ্ত হয়।