দক্ষিণ এশিয়ার ক্রমবর্ধমান বৈষম্য ও অসমতা দূর করার দাবিতে (স্যাপি) এর মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত ।

সাউথ এশিয়ান অ্যালান্স ফর পভার্টি ইরাডিকেশন (স্যাপি) -বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের ও ফাইট ইন ইকুয়ালিটি অ্যালান্স, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, ইনসিডিন বাংলাদেশ, ভয়েস, জনউদ্যোগ ও অক্সফাম ইন বাংলাদেশ-এর যৌথ উদ্যোগে আজ ২৮জানুয়ারি ২০২১ইং তারিখ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে দক্ষিণ এশিয়ার সকলের ক্রমবর্ধমান বৈষম্য ও অসমতা ঐক্যবদ্ধভাবে দূররিকরণ শীর্ষক এক মানব বন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে ।

বিএনপিএস-এর উপপরিচালক শাহনাজ সুমীর সঞ্চালনায় অনলাইনে বক্তব্য রাখেন সাউথ এশিয়া অ্যালান্স ফর প্রভার্টি ইরাডিকেশন (স্যাপি)-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক ও নারীনেত্রী রোকেয়া কবীর ও ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট আইইডি-র নির্বাহী পরিচালক নূমান আহম্মেদ খান ও ইনসিডিন বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মুসতাক আলী । মানব বন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন ভয়েস-এর নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ,ভয়েস-এর আফতাব খান শাওন, ইনসিডিন-এর প্রতিনিধি শিপন আহম্মেদ, আদিবাসী নেতা হরেন সিং, , সাবেক ছাত্রনেতা মানবেন্দ্র দেব, জনউদ্যোগ নেতা তারিক হোসেন প্রমুখ। এছাড়া আরও অংশ নেন আদীবাসী নেতৃবৃন্দ, কৃষক-শ্রমিক-ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক, সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ।

মানব বন্ধনে রোকেয়া কবীর বলেন দক্ষিণ এশিয়ার জনগোষ্ঠী জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও লিঙ্গ নির্বিশেষে বৈষম্যের শিকার।এই বৈষম্যগুলো সামাজিক, অর্খনৈতিক, রাজনৈতিক কারণেই সৃষ্টি হয়েছে এবং দক্ষিণ এশিয়ার জনগণ ওর্য়াল্ড ইকোনোমিক ফোরামের মত ফোরামগুলো ধনীদেশগুলোর স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে, এই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনায় বিশ্বের ১৯৩টি দেশ অসমতা দূরীকরণের উদ্দেশ্যে সংকল্পবদ্ধ হয় এবং দেশগুলোর এই সংকল্প সত্ত্বেও ধনী দরিদ্রের বৈষম্য প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে, যা করোনা মহামারির এই সময়ে আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। অর্থাৎ, করোনা মহামারি সমাজে প্রচলিত বৈষম্যের চর্চা আরও গভীরভাবে লালন করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে এবং একইসাথে সাধারণ মানুষের জীবনকে ভীষণভাবে বিপর্যস্ত ও দুর্দশাগ্রস্ত করে তুলেছে। এই দুর্দশার সুস্পষ্ট প্রতিফলন ঘটে সাধারণ শ্রমজীবী ও পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে, বিশেষভাবে যারা কাজ হারিয়েছে বা কাজের সাথে জড়িত নেই, নারী, যুবসমাজ, ভিন্নভাবে সক্ষম জনগোষ্ঠী, যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অপেক্ষাকৃত কম এবং যারা দুর্গম জায়গায় বসবাস করছে।করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত এসব জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ প্রণোদনা বাড়ানোসহ কাজের সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।

আইইডি-র নির্বাহী পরিচালক নূমান আহম্মদ খান বলেন এসডিজি ১০-এর আওতায় নিজের দেশ এবং অন্য দেশের মধ্যকার অসমতা দূর করার জন্য প্রত্যেক সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তা সত্ত্বেও অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সরকারসমূহকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায় কম। আমরা মনে করি, আমরা যখন তৃণমূল থেকে একত্রিত হব, শক্তি, চাহিদা, জবাবদিহিতা এবং বৃহত্তর সমতা গড়ে তোলার জন্য সংগঠিত হব, তখনই পরিবর্তন আসবে। জনগণের যৌথ শক্তি দক্ষিণ এশিয়ার সরকারগুলোকে দায়বদ্ধ করবে। অর্থাৎএই বৈষম্য কমাতে সরকার ও জনগণের উভয়েরই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে।

ভয়েস-এর নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ বলেন দক্ষিণ এশিয়ার জনগোষ্ঠী জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও লিঙ্গ নির্বিশেষে বৈষম্যের শিকার। এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালীরা এমন ধরনের অর্থনৈতিক ধ্যানধারণা ও ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, যেখানে বাজার ও অর্থের এক”ছত্র আধিপত্য। মূলত,এই বিষয়গুলোর ফলেই বিগত ৩০ বছর ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় বৈষম্য চরমভাবে বেড়েই চলেছে। ইনসিডিন বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মুসতাক আলী বলেন-ফাইট ইনইকুয়ালিটি অ্যালায়েন্সের সদস্যসহ মানবাধিকার সংগঠন ও ব্যক্তিসমূহ প্রতিবছর জানুয়ারিতে একটি গণজমায়েত করে এবং বিশ্বব্যাপী বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্ছার হবার আহবান জানায়। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সম্মুখযোদ্ধারা ২৩-৩০ জানুয়ারি ২০২১ মেয়াদকালে একত্রিত হয়ে , জনগণের শক্তির জায়গাগুলো বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেন এবং সরব কণ্ঠে উচ্চারণ করেন “ People’s Solutions are better than Davos’’

সাবেক ছাত্রনেতা মানবেন্দ্র দেব বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় লিঙ্গভিত্তিক মজুরির পার্থক্য সবচেয়ে প্রকট এবং এখানে লিঙ্গভিত্তিক শ্রমে নিযুক্তির পরিমাণেও পার্থক্য অনেক বেশি, যা দিন দিন বেড়েই চলছে। আইএলও-রওমেন এট ওয়ার্ক : ট্রেন্ডস ২০১৬ এর প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বব্যাপী শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণের হার ৫২.৪ শতাংশ থেকে ৪৯.৬ শতাংশে কমে এসেছে। বিশ্বব্যাপী নারীরা গড়ে পুরুষদের চেয়ে ২৪ শতাংশ কম মজুরি পেয়ে থাকেন, দক্ষিণ এশিয়ায় সন্তানের মা হয়েছেন এমন নারীরা পুরুষদের চেয়ে ৩৫ শতাংশ কম এবং সন্তানের মা নন এমন নারীরা পুরুষদের চেয়ে ১৪ শতাংশ কম মজুরি পেয়ে থাকেন। স্বল্প সংখ্যক ক্ষমতাবানের হাতে সম্পদ ও ক্ষমতা কুক্ষিগত হওয়ায় এই ধরনের বৈষম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে।

মানব বন্ধনে বক্তারা করোনার টিকা সবার জন্য উন্মুক্ত ও সহজলভ্য করাসহ বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের এবং অন্যান্য বিশ্বের সরকারসমূহকে ধনী এবং দরিদ্রদের মধ্যকার ব্যবধান কমানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, মজুরী বৈষম্য কমানো, নারীর প্রতি বৈষম্য কমানো,দেশীয় কর রাজস্ব সচল করা এবং ধনী ব্যক্তি ও কোম্পানির প্রতি অন্যায্য কর ছাড় বন্ধ করা,ধনী ব্যক্তি ও কোম্পানির ন্যায্য ভাগ পরিশোধ করা; জনস্বাস্থ্য , শিক্ষা, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বিনিয়োগ করা, দায়িত্বশীল রাষ্ট্র গড়ে তোলা এবং সকলের জন্য সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা, নারী ও ক্ষুদ্র কৃষকের ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণ এবং কৃষি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাধান্য খর্ব করাসহ খাদ্যের ভ্যালু চেইনের শোষণ থেকে নারী ও ক্ষুদ্র কৃষককে রক্ষা করা, ক্ষতিগ্রস্ত/আক্রান্ত জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা প্রদানের মাধ্যমে জলবায়ূ বিপর্যয় রোধ করার দাবী জানান।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *