গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার রাখালিয়াচালা গ্রামের ছোট্ট মেয়ে মরিয়ম। নবম শ্রেণীর ছাত্রী। তার পিতার নাম সিদ্দিক আলী এবং মাতার নাম জায়েদা খাতুন। মাত্র ১৫ বছর বয়সি মেয়ে মরিয়ম হাসি খেলায় বান্ধবীদের সাথে মেতে থাকত। এখন তার পুতুল খেলার বয়স, হাসি হুল্লোড়ে দিন কাটানোর সময়, দৃঢ় উদ্যমে লেখাপড়া করার বয়স, মুক্ত আকাশে উরার বয়স।
এমন অবস্থায় তার মা-বাবা তাকে খাচায় বন্দি করতে চায়।মরিয়মের খালাত ভাই মুশাররাফ এর সঙ্গে বিয়ে ঠিক করে।ছেলেটা বেকার।এলাকায় বিয়ে দিতে সমস্যা হতে পারে কারন মেয়ের বিয়ের বয়স হয়নি তাই মেয়েটিকে গোপনে তার নানির বাড়ি তেলিয়াচালা নিয়ে গিয়ে বিয়ের আয়োজন করা হয়।মেয়ের মামা এলাকার প্রভাবশালী।নাম”মুসা হাজি।এলাকায় এক নামে সবাই তাকে চেনে।এলাকায় প্রভাব থাকার কারনে তার বাড়িতে বড় করে বিয়ের আয়োজন করা হয়। আমরা” বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ “এর নারী দের ক্ষমতায়ন প্রসিক্ষনে ২৬ জানুয়ারি ২১ তারিখে ঘটনা জানতে পারি।যে স্কুলে আমরা প্রসিক্ষন দিয়েছি সেই স্কুল এর ছাত্রী মরিয়ম আক্তার।
স্কুলের শিক্ষকদের আমরা বিষয়টি অবগত করলে তাদের কোন সাড়া পাইনি।পরবর্তীতে ঘটনা জানাজানি হলে বৃহস্পতিবার এর বিয়ে বুধবার এক দিন আগেই সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করে মেয়ের পরিবার।
আমরা খবর পেয়ে মেয়ের স্কুলের রেজিষ্ট্রেশন ফর্ম সংগ্রহ করি এবং আজ ২৭ জানুয়ারি ২১ তারিখ এ আমরা কালিয়াকৈর থানার ওসি মনুয়ার হুসেন কে জানাই। তিনি ব্যস্ততা দেখান। অত:পর আমি(সুমাইয়া এবং নেহা) ৯৯৯ এ ফোন করি। তারা মৌচাক পুলিশ ফাড়ির এক কর্মকর্তার নাম্বার দেন। আমরা তার ফোন বন্ধ পাই। আবারও ৯৯৯ এ ইনফর্ম করি। ততক্ষণে বেলা ১টা বাজে প্রায়।
আমরা পুলিশ ফাড়ির অন্য নাম্বারে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। তারা বলে লোকেশন সঠিক না দিলে তারা যাবে না। পরবর্তীতে আবারও ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে তাদেরকে নেহা বলে আমাদের এমারজেন্সি আপনাদের সাহায্য প্রয়োজন। পরে হলে আপনাদের দিয়ে আমাদের কি দরকার। পরবর্তীতে আমি (সুমাইয়া ও নেহা) মৌচাক তেলিচালা যাই। আমাদের রাখা লিয়াচালা সেচ্ছাসেবী সাথি আক্তার আমাদের ঠিকানা যোগাড় করে দেয়। আমরা ঠিকমতো সঠিক সময় সেখানে পৌছাই। আমি এবং নেহা এমনভাবে সেখানে যাই যেন আমাদের কেউ চিন্তে না পারে।
প্রথম এ সঠিক ইনফরমেশন নেওয়ার জন্য একটি কসমেটিক্স এর দোকানে যাই। সেখানে কসমেটিক্স কেনার নানা বাহানা দেখাই এবং ধিরে ধিরে তাকে জিজ্ঞেস করি মামা ঐ বাড়িতে এতো বড় প্যান্ডেল,এতো লোক বিয়ে নাকি?? লোকটি উত্তর দেন হ্যাঁ বিয়ে। মুসা হাজির ফুপাতো বোনের মেয়ের বিয়ে।
পরবর্তীতে আমরা সেখানে থেকে অন্য দোকানে গিয়ে চা খাই। ওখানে একজন ভিক্ষুককে কায়দা করে আমরা বিয়ে বাড়িতে পাঠাই বিয়ে বাড়ির অবস্থা বোঝার জন্য। সে ১০ মিনিট পরে আমাদের কাছে আসে এবং বলে বিয়ে বাড়িতে খাওয়া দাওয়া হচ্ছে। বরযাত্রী এখনো আসেনি।
পুলিশকে তাৎক্ষণাৎ ইনফর্ম করি। এবং কিছুক্ষণ এর মধ্যে মৌচাক ফাড়ির এ এস আই নুরুজ্জামান সাহেব চলে আসেন। তিনি বিয়ে বাড়িতে যান এবং ঘটনার সত্যতা যাচাই করেন। ঘটনা সত্য প্রমাণ হওয়ায় তিনি মৌচাক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন সাহেবকে ইনফর্ম করেন। পরবর্তীতে বিয়ে তারা ভেঙে দেন। এবং আমাদের বিষয়টি জানান। আমি এবং নেহা সেখান থেকে চলে আসি। এবং মৌচাক ফারিতে এসে পুলিশের সঙ্গে দেখা করি এবং তথ্য সংগ্রহ করি। মেয়েটির জীবন রক্ষা পায়।
“যখন একজন কিশোরির প্রাপ্তবয়স্ক না হতেই তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাতে করে বাবা- মা হাল্কা হলেও কিশোরীর সারাজীবন একটি বুঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। তাতে করে বেচে থেকে আযাব ভোগ করার মত। নারী নির্যাতন রুখে দাঁড়াতে হবে। তাই আসুন আমরা সকলে মিলে সচেতন হই। নারিদের স্বাধীনভাবে চলতে সহায়তা করি।।।।।।।
লিখেছেনঃ সুমাইয়া আহম্মেদ, কমিউনিটি অর্গানাইজার, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস)