বিরাষ্ট্রীয়করন বন্ধ করে বন্ধ পাটকল-চিনিকলসমূহ চালু ও আধুনিকায়ন কর

বিরাষ্ট্রীয়করন বন্ধ করে বন্ধ পাটকল-চিনিকলসমূহ চালু ও আধুনিকায়ন করা এবং আইন করে মালিকানা নির্বিশেষে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণাসহ স্কপের ৯ দফা বাস্তবায়নের দাবি

স্কপের ৯ দফা দাবির সমার্থনে দেশব্যাপী বিক্ষোভ দিবস পালনের অংশ হিসাবে, বিরাষ্ট্রীয়করণ বন্ধ করে বন্ধ পাটকল-চিনিকলসমূহ রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চালু ও আধুনিকায়ন, আইন করে মালিকানা নির্বিশেষে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা, আই.এল.ও কনভেনশন অনুযায়ী শ্রম আইন ও বিধিমালা প্রণয়নসহ স্কপের ৯ দফা মেনে নেওয়ার দাবিতে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ- স্কপ কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের উদ্যোগে আজ ২৬ ডিসেম্বর২০২০, সকাল ১১টায় ঢাকা জি.পি.ও এর বিপরীতে জাসদ গলিতে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি সহিদুল্লাহ চৌধুরী-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, সাধারণ সম্পাদক নইমুল আহসান জুয়েল, ট্রেড ইউনিয়ন সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম, জাতীয় শ্রমিক জোটের সাধারণ সম্পাদক নূরুল আমীন, বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সাকীল আক্তার চৌধুরী, বাংলাদেশ জাতীয় ফেডারেশনের সভাপতি শামীম আরা, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় শ্রমিক লীগের ট্রেড ইউনিয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ হোসেন, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা আনোয়ার আলী প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন।

নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনাকালে যখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব সকল নাগরিকের সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা, যখন রাষ্ট্র এই দায়িত্ব শিকার করে নিয়ে বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা হিসাবে ভর্তূকি-ঋণ দিচ্ছে, সেই সময়েই রাষ্ট্রীয় পাটকল-চিনিকল বন্ধ করে হাজার হাজার শ্রমিক এবং তাদের উপর নির্ভরশীল লক্ষ লক্ষ মানুষ কে কর্মহীন করে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়ে রাষ্ট্র খুব নগ্নভাবে ধনিদের স্বার্থ রক্ষাকারি যন্ত্র হিসাবে নিজের পরিচয় উম্মোচিত করেছে। টি.আই.বি বলছে সরকার করোনা মোকাবেলায় যে এক লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার ৮০ শতাংশের বেশি টাকা মালিকদের সুবিধাই ব্যবহার হয়েছে। অথচ স্কপের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব অনুসারে মাত্র ১২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পাটকলগুলিকে আধুনিকায়ন করার পরিবর্তে দুর্ণীতিগ্রস্থ আমলাদের পরার্মশে লোকসানের অভিযোগ তুলে তার দায় শ্রমিকদের উপর চাপিয়ে রাষ্ট্রীয় পাটকলসমূহ বন্ধ করে দেয়া হল। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পাটকলসমূহ চালু এবং আধুনিকায়ন করার সুপারিশ করলেও পাটমন্ত্রণালয় পাটকলগুলি ইজারা দেওয়ার জন্য কমিটি গঠন করেছে। পাটকলগুলির পর একইভাবে কয়েকশত কোটি টাকা ঋণ ও লোকসানের অভিযোগ তুলে চিনিকলগুলির মধ্যে ৬টি চিনিকলের উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন, পুরাতন ঋণ ও ঋণের সুদ মওকুফ এবং পরিচালনা প্রক্রিয়ায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর দূর্ণীতি বন্ধ করে চিনিকলসমূহকে লাভজনক করা সম্ভব। রাষ্ট্র এই কয়েকশত কোটি টাকা বরাদ্দ করেনি কিন্তু বেসরকারী শিল্প মালিকদের হাজার-হাজার কোটি টাকার খেলাপী ঋণ অবলোপন বা মওকুফ করেছে।

শুধু উৎপাদন ব্যায় এবং বিক্রয়মূল্যের পার্থক্য দিয়েই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের লাভ-লোকসান হিসাব করা যায়না বরং বাজার ও মজুরি ভারসাম্য রক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা, সিন্ডিকেটেড সরবরাহ ব্যবস্থা মোকাবেলা ইত্যাদি বিষয়ের ভিত্তিতে আয়-ব্যয়ের পরিমাণ হিসাব করতে হয় আর দেশের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন থেকে আজকের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শ্রমিকদের শ্রম-রক্ত-ঘামের বিনিময়ে অর্জিত এই কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, রাষ্ট্রীয় কলকারখানা বিরাষ্ট্রীয়করণের মাধ্যমে ব্যক্তি মালিকদের লুটপাটের সুযোগ করে দেয়া সংবিধানের মূলনীতির পরিপন্থি। মুখে অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানোর কথা বলা হলেও সরকারী কর্মচারীদের প্রায় দশগুণ মজুরি বৈষম্যের ২০ গ্রেডের বেতন স্কেলের মাধ্যমে আর ব্যাক্তিমালিকানাধিন শিল্পের মজুরি নির্ধারণে আইনি কোন মানদন্ড অনুসরণ না করে রাষ্ট্র সমাজের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি করছে। নেতৃবৃন্দ, আইন করে মালিকানা নির্বিশেষে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা, করোনাকালে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও উপার্জনের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, আই.এল.ও কনভেনশন অনুসারে শ্রম আইন ও বিধিমালার সংশোধন করাসহ স্কপের ৯ দফা মেনে নেওয়ার আহবান জানান।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *