করোনাকালীন সময়ে শ্রমিকদের সুরক্ষা ও “সুষ্ঠু শিল্প সম্পর্ক” বজায় রাখার দাবীতে স্বারকলিপি।

করোনাকালীন সময়ে শ্রমিকদের সুরক্ষা ও “সুষ্ঠু শিল্প সম্পর্ক” বজায় রাখার দাবীতে ৩০ নভেম্বর শ্রম অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক, কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এর মহাপরিদর্শক এবং ইন্ডিস্ট্রিয়াল পুলিশ এর মহাপরিচালক বরাবর স্বারকলিপি প্রদান করে কয়েকটি গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠন। এসময় উপস্থিত ছিলেন টেক্সটাইল-গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন এর সভাপতি শ্রমিকনেতা আবুল হোসাইন, গ্রীন বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইলিয়াস, সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাভার আশুলিয়া আঞ্চলিক সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম, জান্নাতি বেগম, শিমা আক্তার, শাহানাজ আক্তার।

এসময় শ্রমিকনেতারা বলেন,ঘাতকব্যাধী করোনা ভাইরাসের ফলে সমগ্র পৃথিবীর ন্যায় বাংলাদেশকেও বিপর্যয়কর পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। কভিড-১৯ আক্রমণ একদিকে মানুষের মৃত্যর কারণ অপরদিকে সারা বিশ্বের অর্থনীতিকে বিপর্যস্থ করে ফেলেছে। যার নেতিবাচক প্রভাবে সবচেয়ে বেশী শিকার হচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষ। বাংলাদেশে ৬ কোটি ৩৫ লক্ষ শ্রমিক কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে শ্রম দিয়ে এবং প্রবাসী আয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে যে টুকু গতিশীল করতে সক্ষম হয়েছিল তা অনেকটা স্থবির হয়ে গিয়েছে। শ্রমজীবী মেহনতি জনগণ অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর এবং অসহায় অবস্থার মধ্যদিয়ে দিনাতিপাত করছে। অসংখ্য মানুষ কর্মচ্যুত হয়েছে এবং অনেকেই মজুরি ও আইনানুগ প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ক্ষুধা ও দারিদ্রতার চাপে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জীবিকার সন্ধানে ছুটে বেড়িয়ে কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েও অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারেনি। করোনা রেডজোন এলাকায় উৎপাদন ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের ৭০-৭৫ শতাংশ পরিচালিত হওয়া সত্ত্বেও সেখানে সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। সরকার গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন ভাতাদি পরিশোধের জন্য স্বল্পসুদে ৪২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন যা অত্যান্ত প্রশংসনীয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় অনেক কারখানা মালিক শ্রমিকদের এই দুর্যোগকালে অর্ধেক বেতন ও ভাতা দিয়েছে, অন্ততঃ ১২০০ কারখানা মালিক আদৌ শ্রমিকদের বেতন ও ভাতা প্রদান করেননি যা বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। এই দুর্যোগের মুর্হুতেও তৈরী পোশাকের ক্রেতা গুষ্ঠি (ব্রান্ড) শ্রমিকদের পাশে সাহায্যের হাত বাড়ায়নি।

সরকার থেকে এ দুর্যোগ মূহুর্তে শ্রমিক ছাঁটাই না করতে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও অনেক কারখানা মালিক নানা কায়দায় শ্রমিকদের চাকুরিচ্যুত করেছেন। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, শ্রমিকদের জোর করে পূর্ব থেকে লিখিত পদত্যাগপত্রে ও সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে কর্মচ্যুত করা হচ্ছে। বকেয়া পাওয়া পরিশোধ না করার হীন উদ্দেশ্যে শ্রমিকদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার ও হয়রানী করা হচ্ছে। সন্ত্রাসী দিয়ে হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে এবং নারী শ্রমিকদের সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। শিল্পে সুষ্ঠ পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে মামলা-হামলা হয়রানী এবং চাকুরিচ্যুতি বন্ধ করা আবশ্যক।

 

স্বারকলিপিতে নিম্নেবর্নিত ৫ দফা দাবী উত্থান করা হয়।

  • সকল শ্রমিক কর্মচারীদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
  • স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষে শিল্পাঞ্চলসহ দেশব্যাপী কমিউনিটি ক্লিনিকের ন্যায় করোনা প্রতিরোধ সেন্টার গড়ে তুলে করোনা টেস্টিং, কোয়ারাইন্টাইন ও আইসোলেশনে রাখার বিশেষ ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অব্যবহৃত শ্রমিক কল্যাণ কেন্দ্রসহ বিদ্যমান সকল অবকাঠামো সমূহকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
  • কর্মহীন শ্রমিকদের স্ব স্ব কাজে ফিরিয়ে আনতে হবে। কর্মহীনকালীন নগদ আর্থিক সহয়তা নিশ্চিত করতে হবে। রেশনিং এর মাধ্যমে চাল, ডাল, তেল, আটা, শিশু খাদ্য, স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করতে হবে। সে লক্ষে শ্রমিক কল্যাণ তহবিল (সেন্ট্রাল ফান্ড) বৃ্দ্ধি এবং কার্যক্রম পরিচালনায় বিশেষ উদ্যোগ ও মনিটরিং চালু রাখতে হবে। সেন্ট্রাল ফান্ডের ৫০% বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় কাজে লাগাতে হবে।
  • কোনো কারখানা লে-অফ ও শ্রমিক কর্মচারীদের চাকুরিচ্যূত করা যাবেনা।
  • সর্বক্ষেত্রে শ্রম আইনের পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশের সংবিধান, জাতীয় শ্রমনীতি এবং আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ অনুসারে অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করাসহ শ্রম আইন সংশোধন ও কার্‍্যকর করতে হবে এবং অবিলম্বে আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুসমর্থনের কার্‍্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *