করোনা ভাইরাস রোগটি আমাদের জনজীবনকে মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মধ্য ফেলে দিয়েছে ।বিশ্বব্যাপী এই ভাইরাসের আক্রান্তের হার দিন দিন বেড়েই চলছে । সেই সাথে মৃত্যু মিছিল যেন থামছে না । এখনও পর্যন্ত বিশ্বের কোন দেশ করোনা ভাইরাস প্রতিষেধক ওষুধ উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে সফলতা মুখ দেখতে পারেনি । সংগত কারণে মৃত্যু সংখ্যা বেড়েই চলছে সেই সাথে নতুন আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে । প্রতিটি দেশ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে হিমশিম খাচ্ছে ।
দেশের এমন ক্রান্তিলগ্নে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও উপসর্গ এর লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে এমন ব্যক্তিদের চিকিৎসা পরামর্শ ও ভলেন্টারি সেবা চালু করেছে পাবনার কাশিনাথপুরের প্রয়াস নামে একটি সেবামুলক সংগঠন ।প্রয়াস এর পরিচালনা ও উদ্যোগে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ লক্ষণ দেখা দিলে এমন ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য সেবা পরামর্শ প্রদানে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, কাশিনাথপুর ইউনিয়ন সাব-সেন্টার এর মেডিকেল অফিসার সৈয়দ সুলতান মাহমুদ ও মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিকেল অফিসার ডাঃ ফাহাদ বিন লতিফ । প্রয়াস পাঠাগারের সহযোগিতা হট লাইনের মাধ্যমে এই স্বাস্থ্য সেবা পরামর্শ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ।
কাশিনাথপুর ইউনিয়ন সাব-সেন্টার এর মেডিকেল অফিসার সৈয়দ সুলতান মাহমুদ বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রস্তুতি চলছে পুরো পৃথিবীতে । প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে আমরা প্রচুর খাবারদাবার কিনে রাখছি ঘরে। কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছি, ঘরে জমা করে রাখার ফলে খাবারগুলোর গুণগত মান আদৌ বজায় থাকবে কি না? যে খাবার আমরা কিনে ঘরে জমা করেছি, সেগুলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করার পক্ষে যথেষ্ট কি না? কারণ, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো। কর্তৃপক্ষের দেওয়া স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নির্দেশা বলি সঠিকভাবে পালন করা । কোভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধের প্রথম ধাপ হলো ব্যক্তিগত সচেতনতা গড়ে তোলা এবং প্রত্যেকের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্থাৎ ইমিউন সিস্টেম বাড়িয়ে তোলা। ফলে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের যে মারাত্মক লক্ষ্ণ অর্থাৎ শ্বাসযন্ত্র এবং পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণ, সেগুলো সহজে প্রতিরোধ করা সম্ভব। সহজভাবে বললে যেকোনো ভাইরাস হলো প্রোটিন যুক্ত অণুজীব, যার কারণে মানুষ জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট এমনকি মারাত্মক নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। ফলে ভাইরাস ভয়ংকর প্রাণঘাতী রোগ তৈরি করতে পারে খুব সহজে। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেশি পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে নিয়মিত ।
মেডিকেল অফিসার ডাঃ ফাহাদ বিন লতিফ বলেন কোন ব্যক্তি করোনা উপসর্গ লক্ষণ দেখা দিলে এতে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে মা্নুষিক দূর্বলতা চলে আসে । ফলে তার ইমিউন সিস্টেমের উপর নেতিবাচক ইম্পপ্যাক্ট এসে পরে । এতে করে রোগির অবস্থা খারাপ থেকে আর খারাপের দিকে যেতে থাকে । এ অবস্থায় যেহেতু সে তার পরিবারকেই কাছে পায় না তাই সরকারি বা অন্য কোনো সোর্স থেকে সাহায্য পাওয়া বা আর কেহ পাশে দাঁড়াবে সে আশাও ত্যাগ করে ফলে হয় স্ট্রোক বা নিমুনিয়া কিম্বা অন্য কোনো জটিলটায় মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায় । তিনি আরোও বলেন ইচ্ছা করে কোন ব্যাক্তি এ রোগে আক্রান্ত হয়নি ।আর সামগ্রীক ননকো-অপারেশনের ফলে তার মধ্যে যে সকল মনস্তাত্ত্বিক ও অন্যান্য জটিলতা দেখা দিয়েছিল সে গুলোকে কমিয়ে আনাতে একটু সহানুতির হাত বাড়াতে পারি ।তাহলেই রোগটি হতে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যাবে ।
প্রয়াস পাঠাগারের সভাপতি মফিদুল হোসেন (শাহিন) বলেন, কোন ব্যক্তি করোনা ভাইরাস হোক বা না হোক, সর্দি কিম্বা কাশি হলেই যেন একদম অমার্জনীয় অপরাধে অভিযুক্ত বনে যেতে হয়। এর ফলে কারো যদি প্রকৃত অর্থেই রোগটি হয়, তবে সে তার রোগ গোপন রাখার চেষ্টা করে, যার ফলে রোগ ব্যাপক আকারে ছড়াতে পারে । আবার সঠিক সময়ে চিকিৎসা ও অন্যন্য পদক্ষেপ না নেওয়ার ফলে জটিলতা আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে । আর এমন অবস্থায় পরিবার ও প্রতিবেশিগনের মধ্যে আতঙ্ক ও ভীতিগত অসোহযোগীতা বা দুরে দুরে থাকার প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে । এমন অবস্থা হতে সবাইকে সরে আসতে হবে ও আক্রান্ত হলে তাকে সাহস যোগাতে হবে এবং সহযোগিতা করতে হবে । তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে তার সাথে যোগাযোগ করে তাকে চাঙ্গা ও সাহস যোগাতে পারি । তাই সবার কাছে আহবান যারা বিপদে আছেন কেউ যখন নাই তখন আমরা পাশেই আছি। আর সর্বসাধারণের কাছে আশা এ বিপদে আপনি আমি যে কেউ পরতে পারি। তাই একটু যার মনে যেটুকু চায় অন্তত একজন চরম বিপদগ্রস্থ মানুষকে একটু সাহস যোগানোর মাধ্যমে হলেও পাশে দাঁড়াত হবে । মহান-সৃষ্টিকর্তা সব দেখছেন এ পরীক্ষায় কার কি ভুমিকা তার রেকর্ড আবশ্যই মূল্যায়ীত হবে । মানুষ মানুষের জন্য তাই সেবার মনোভাব নিয়ে আমাদের সবাই নিজেদের সাধ্যমত মানুষের পাশে এসে সহয়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্যে । এছাড়াও তিনি আরোও জানিয়েছেন প্রয়াস অন্যান্য সমমনা ব্যক্তি ও সংগঠনের সর্বজনীন সহযোগীতায় করোনা লক্ষণ যুক্ত মানুষের চিকিৎসাসহ অন্যান্য বিষয়ে সার্বিকভাবে পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন ।
করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের সহযোগিতা করার এমন উদ্দোগের বিষয়ে কাশিনাথপুর এলাকার মোঃ আকবর আলী বলেন, করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের সেবা ও সহযোগিতা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রয়াস এর সকল সদস্যগণ প্রত্যক্ষ্ ও পরোক্ষ যেভাবে ভুমিকা পালন করে যাচ্ছেন এতে এলাকার করোনা আক্রান্ত বিপদগ্রস্থ মানুষগুলো উপকৃত হবে বলে এমন আশা প্রকাশ করেন । এছাড়াও তিনি আরোও বলেন এমন মহৎ কাজের উদ্যোগ নেওয়ায় কাশিনাথপুর প্রয়াস ও অন্যান্য সমমনা সহযোগি সকল সদস্যদেরকে এলাকাবাসীর পক্ষ হতে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি ।
করোনার ফলে জনজীবন বির্পয়ের মুখে পড়েছে এমন অবস্থায় শিক্ষক মোঃ ফজলু মানুষের সেবায় নিজেকে আত্ননিয়োগ করে যাচ্ছেন ,তিনি ক্লান্তিহীনভাবে প্রয়াস সংগঠনের মাধ্যমে আক্রান্ত কিম্বা লক্ষণ দেখা যাচ্ছে এমন মানুষকে সহযোগিতা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষক মোঃ ফজ়লু জানিয়েছেন যে, করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবের ফলে স্কুল বন্ধ রয়েছে তাই এই সময়ে বিপদে পড়া মানুষের পাশে না দাঁড়ালে মানুষ হিসাবে নিজের কাছেই ছোট মনে হয় । তাই বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে থেকে কিছুটা হলেও সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। আমরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ডাক্তারি পরামর্শ প্রদান সহ ভলেন্টারি সেচ্ছাসেবক এর মাধ্যমে করোনা ভাইরাস উপসর্গ ব্যক্তিদের সেবা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এমনটা তিনি জানিয়েছেন ।
দেশের দুর্যোগের এমন সময়ে মহৎ ও সেবামুলক কাজের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত হয়ে আর্তমানবতার সেবায় সহযোগিতায় মানুষের পাশে রয়েছেন, মীর মনজুর এলাহি(কাশিনাথপুর ইউপি-চেয়ারম্যান, কাশিনাথপুর,পাবনা),প্রয়াস পাঠাগার এর সভাপতি মফিদুল হোসেন (শাহিন),কাশিনাথপুর ইউনিয়ন সাব-সেন্টার এর মেডিকেল অফিসার সৈয়দ সুলতান মাহমুদ ও মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর মেডিকেল অফিসার ডাঃ ফাহাদ বিন লতিফ, শিক্ষক মোঃ ফজলু , মোঃ আলাল, মোঃ কবির, সহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সাথে জড়িত অনেক কর্মীগণ ।