দেশের ঐতিহ্যবাহী পাটশিল্পকে রক্ষা ও তার বিকাশের পথ

[শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে গত ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে দেশের ঐতিহ্যবাহী পাটশিল্পকে রক্ষা ও তার বিকাশের পথ সম্পর্কে একটি মৌলিক সংস্কার কর্মসূচি করা হয়েছে। সেটি এখানে তুলে ধরা হলো]

পাট চাষ এবং পাটশিল্পের সাথে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি জড়িত। বাংলার পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ পাটশিল্প। ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলায় আর পাকিস্তান শাসনামলে পূর্ব পাকিস্তানে পাটশিল্পই ছিল একক বৃহত্তম শিল্প। ১৯৫২ সালে নারায়ণগঞ্জে বাওয়া জুট মিল স্থাপনের মাধ্যমে পূর্ব বাংলায় পাটশিল্পের যাত্রা শুরু হয়। পাট চাষের উপযোগী আবহাওয়ার কারণে ও উন্নতমানের পাটের যোগান লাভজনক হওয়ায় এই শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটিয়েছিল। গণঅভ্যুথানসহ বাংলাদেশের আত্মপরিচয়ের সাথে পাটশিল্প অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।

স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে পাটকলের তদারকি পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজেএমসি) গঠিত হয়। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে প্রায় দেড় যুগ ধরে প্রধান রপ্তানি পণ্য ছিল পাট এবং পাটজাত পণ্য। পরবর্তীতে আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংকের ভুল প্রেসক্রিপশন, যথাসময়ে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন না করার কারণে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বাংলাদেশের এতিহ্যবাহী এই শিল্পটি আজ মৃতপ্রায়। বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী প্রতিষ্ঠান বিজেএমসি আজ লোকসানি প্রতিষ্ঠানের অপবাদ নিয়ে ধুকছে। এই শিল্পের সাথে যুক্ত কয়েক লক্ষ পরিবার চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পতিত। অথচ বিশ্ব বাজারে পাটজাত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রায় ৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকার পাট এবং পাটজাত পণ্য রপ্তানি করেছে। রপ্তানির পরিমাণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিজেএমসি’র পরিচালনাধীন কারখানাগুলিতে লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে, বিপরীতে বেসরকারি মালিকানায় নতুন নতুন পাটকল গড়ে উঠছে। এমতাবস্থায় আমরা মনে করি নিম্নে উল্লেখ করা পদক্ষেপসমূহ গ্রহণের মাধ্যমে বিজেএমসি-কে আবার সক্ষম প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব।

বর্তমানে বিজেএমসি পরিচালিত ২২টি কারখানায় হেসিয়ান, সেকিং এবং সিবিসি এই তিন ধরনের মোট ১০৮৩৫টি তাত বিদ্যমান। যার মধ্যে হেসিয়ান তাত ৬২৩২টি, সেকিং তাত ৩৬৯৬ টি এবং সিবিসি তাত ১০০০ টি। আধুনিক স্বয়ংক্রিয় তাঁতের তুলনায় এই তাতসমূহের উৎপাদন ক্ষমতা এমনিতেই কম তার উপর পুরোনো হয়ে যাওয়ায় এগুলির উৎপাদন ক্ষমতা আরও হ্রাস পেয়েছে। হেসিয়ান তাতের পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতা বার্ষিক মাত্র ১৬ মেট্রিক টন, সেকিং তাতের ৩৯ মেট্রিক টন এবং সিবিসি তাতের ১৮ মেট্রিক টন। অথচ চাইনিজ ঞঁহমফধ ঞউ ৭৮৮ গড়ফবষ এবং ঠরপঃড়ৎ ১১০১ ঔঁঃব ৎবঢ়রবৎ খড়ড়স স্বয়ংক্রিয় তাত বার্ষিক ৩৬ মেট্রিক টন উৎপাদন দিতে সক্ষম। আর দক্ষতার সাথে সরবরাহ চুক্তি করতে পারলে স্বয়ংক্রিয় তাত সরবরাহকারী কোম্পানিই প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে শ্রমিকদের দক্ষ করে গড়ে তোলার দায়িত্ব নেবে। অনেকাংশ ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় তাত উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরবরাহ লাইনে প্রয়োজনীয় শ্রমিকের সংখ্যা বাড়বে যা নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। ফলে কারখানার পুনোনো তাতগুলি পরিবর্তন করে তার স্থানে এই নতুন প্রযুক্তির স্বয়ংক্রিয় তাত স্থাপন না করে শুধু পুরোনো তাতগুলি সংস্কারে (বি.এম.আর) অর্থ ব্যয় করলে তা হবে অপচয়ের নামান্তর। কারণ পুরোনো এই যন্ত্রপাতিগুলির পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতাই অনেক কম। তাই বিজেএমসিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হলে কারখানাগুলির পুরোনো যন্ত্রপাতি পরিবর্তন করে আধুনিক তাত স্থাপনের মাধ্যমে উৎপাদনের হার বৃদ্ধি করে মাথাপিছু ব্যয় কমানোর কৌশল গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে শ্রমিকের কাজের সুযোগ অব্যাহত রেখে এই সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের কর্মপরিকল্পনা করতে হবে। যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপনের কাজটি কয়েকটি ধাপে করতে হবে। বিদ্যমান শত বছরের পুরনো স্কটল্যান্ড টেকনোলজি পর্যায়ক্রমে ৩ ধাপে আমূল পরিবর্তন করতে হবে।

প্রথমধাপ : ৬২৩২ টি হেসিয়ান তাতের পরিবর্তে আধুনিক চাইনিজ ঞঁহমফধ ঞউ ৭৮৮ গড়ফবষ এবং ঠরপঃড়ৎ ১১০১ ঔঁঃব ৎবঢ়রবৎ খড়ড়স আমাদের জন্য অধিক উৎপাদন এবং স্বল্প ব্যয়ে উৎপাদন করা যায় এরূপ একটি মডেল আমাদেরকে বাছাই করতে হবে। ৬২৩২ টি হেসিয়ান তাতের সমপরিমাণ উৎপাদন স্বয়ংক্রিয় আধুনিক চাইনিজ ঞঁহমফধ ঞউ ৭৮৮ গড়ফবষ এবং ঠরপঃড়ৎ ১১০১ ঔঁঃব ৎবঢ়রবৎ খড়ড়স বিভিন্ন মডেলের ৩০০০ তাতেই করা সম্ভব।

দ্বিতীয় ধাপ : প্রথম ধাপের সাফল্যের ওপর নির্ভর করে ৩৬৯৬ টি সেকিং তাতের পরিবর্তে ২০০০টি আধুনিক চাইনিজ ঞঁহমফধ ঞউ ৭৮৮ গড়ফবষ-এর স্বয়ংক্রিয় আধুনিক রিপেয়ার সেকিং তাতে করা সম্ভব হবে। তাই প্রথম ধাপের সাফল্যের উপর দ্বিতীয় ধাপটি নির্ভরশীল।

তৃতীয় ধাপ : উপরোক্ত দুটি ধাপের সাফল্যের ওপর নির্ভর করে মিল সাইট (বেকওয়ার্ড লিংকেজ) স্পিনিং, ড্রইং, প্রিপারিং ও বেচিং বিভাগের যন্ত্রপাতি আধুনিকায়নের মাধ্যমে তৃতীয় ধাপটি সম্পন্ন হবে।

প্রথম ধাপের হেসিয়ান বিভিন্ন মডেলের উল্লিখিত কোম্পানিগুলির ৩০০০ স্বয়ংক্রিয় আধুনিক তাতের সম্ভাব্য মূল্য ৩০০ কোটি টাকা হতে পারে। সেহেতু সেকিং মেশিনারিজ বেচিং হতে কপ-ওয়েভিং পর্যন্ত অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাবে, যেহেতু আধুনিক মেশিন সেলুলার সিস্টেমে চলবে। তাই স্পিনিং থেকে প্রাপ্ত সুতা ওয়ার্প ওয়েন্ডিং করতে হবে। যার স্পোল ৫০ ভাগ প্রি-ভিম হতে ভিমে যাবে এবং ৫০ ভাগ সরাসরি তাতে যাবে। তাই ওয়ার্প ওয়েভিং ডিপার্টমেন্টকে তাত এবং ভিমের প্রয়োজনীয়তা পূরণে চাহিদা অনুযায়ী বৃদ্ধি করতে হবে। আধুনিকায়নের ফলে তাতের করতে হবে। ওয়ার্প ওয়েন্ডিং এবং ভিমের সম্ভাব্য ব্যয় ১৫০ কোটি টাকা হতে পারে।

উল্লিখিত পরিবর্তনের ফলে বিজেএমসি’র হেসিয়ান তাতের উৎপাদন প্রায় ৮০ হাজার মেট্রিক টন হতে ১ লক্ষ টনে উন্নীত হতে পারে। এই উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য ৬ মাসের পাটের মজুদ গড়ে তুলতে হবে। উক্ত পাট মজুদের জন্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা এবং মেশিনারিজের মেরামত, স্থাপন ও পরিবহন এবং সমগ্র প্রক্রিয়া সমান্তি ঘটাতে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখতে হবে । মেইনটেনেন্সের ক্ষেত্রে যে যন্ত্রাংশ প্রয়োজন হবে তা বিজেএমসির ঘালফা হাবিব ও সামরিক বাহিনী পরিচালিত মেশিন টুলস কারখানা হইতে সংগ্রহ করতে হবে। মেইনটেনেন্সের ক্ষেত্রে মেশিন টুলস কারখানার ইঞ্জিনিয়ারদের সহায়তা নেয়া যেতে পারে। সংস্কার কর্মকাণ্ড চলমান অবস্থায় শ্রমিকদের সাময়িক কর্মহীন থাকার সময় প্রায় চার মাস শ্রমিকদের ৫০ ভাগ মজুরি দিতে হবে, সেজন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখতে হবে। সর্বসাকুল্যে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় বর্তমানে কর্মরত শ্রমিক উদ্বৃত্ত হবে না বরং উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি হওয়ায় কিছু নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। যেখানে শিক্ষিত যুবকদের নিয়োগ করা যেতে পারে।

এই সংস্কারের মধ্য দিয়ে বিজেএমসি ১০ হাজার ৪০০ টি তাতের উৎপাদন শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ আধুনিক স্বয়ংক্রিয় টেকনোলজিতে রূপান্তরিত হবে। এর ফলে বিজেএমসি আত্মনির্ভরশীল কার্যকর এবং সরকারি কোনও আনুকূল্য সাবসিডি ছাড়াই শিল্প ব্যবসায়িক নিয়মে পরিচালিত হতে পারবে। এই উৎপাদিত পণ্যের বিক্রয়মূল্য শুধুমাত্র হেসিয়ান তাত হতেই দাঁড়াবে প্রায় ১৩ শত কোটি টাকা এবং সেকিং ও সিবিসি তাত হতে আরো প্রায় হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত যোগ হবে।

বিজেএমসিকে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক চাহিদা বিবেচনা করে সর্বোচ্চ এক লক্ষ ত্রিশ হাজার মেট্রিক টন যথা হেসিয়ান ৮০ হাজার মেট্রিক টন, সেকিং ৪০ হাজার মেট্রিক টন এবং সিভিসি ১০ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদনের একটি স্থায়ী লক্ষ্যমাত্রা স্থির করতে হবে। যাতে সরকারি কোনও প্রকার ভর্তুকি বা আর্থিক সহায়তা ছাড়া বিজেএমসি স্বয়ংসম্পূর্ণ কার্যকর ও লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। উক্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য মিলসমূহের পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মিল চালু রাখতে হবে।

১। ভারতের পাটশিল্লের উৎপাদন পর্যায়ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে। ২০১৮-১৯ সালে আরো কতিপয় সরকারি ও বেসরকারি পাটকল বন্ধ হয়ে গেছে। উৎপাদন প্রায় ১/৩ হ্রাস পেয়েছে।

২। বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশনের অধীনস্থ মিলগুলি শত বছরের পুরনো যন্ত্রপাতি দিয়ে পরিচালিত হওয়ায় বিপুল লোকসানের সম্মুখীন। শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের মজুরি বেতন ও দায়দেনা পরিশোধের সক্ষমতা নাই। উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে শতকরা ৪০ ভাগ।

৩। বিজেএমসি ও ভারতের পাটশিল্পের উৎপাদন হাস পাওয়ায় এবং ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করতে না পারায় ইতোমধ্যেই বাজারে পাটপণ্যের ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।

৪। শ্রমিকদের কম মজুরিতে পরিচালিত বাংলাদেশ জুট মিল মালিক সমিতির মিলসমূহ এবং বাংলাদেশ জুট মিল ক্ষতিপূরণে কিছুটা সফল হলে এবং প্রাধান্য বিস্তার করতে পারলেও বিজেএমএ ও বিজেএসএ-এর পাটশিল্পের অবনতি ও উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যথাক্রমে তাদের কারখানাগুলিতে শ্রমিক ঘাটতির কারণে ১৩ ভাগ ও ২ ভাগ উৎপাদন হ্রস পায়, যার ফলে তাদের বিক্রয় থাকলেও ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করতে পারে নাই। তাদের শ্রমিকদের মজুরি যুক্তিসঙ্গতভাবে বৃদ্ধি করতে না পারলে শ্রমিক ঘাটতির কারণে তাদের উৎপাদনে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে।

৫। উপরোক্ত তথ্যগুলি এটাই প্রমাণ করে যে, শত বছরের পুরনো স্কটল্যান্ড টেকনোলজি বর্তমানে পাটশিল্পের উৎপাদন ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পাটের মূল্য পরিশোধ এবং শ্রমিকদের মজুরিসহ অন্যান্য ব্যয় বহন করতে পারছে না। তাই পাট ও পাটশিল্পের বিকাশ ও পুনরুজ্জীবনের জন্য শ্রমঘন শিল্পের পরিবর্তন করে পুঁজিঘন আধুনিক স্বয়ংক্রিয় উন্নত টেকনোলজি গ্রহণ করা অতীব জরুরি।

আরো উল্লেখ্য যে, পরিবেশ সহায়ক হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী উন্নতমানের পাটজাত পণ্যের ব্যাগ, চট ও পাটের সুতার চাহিদা প্রচুর বৃদ্ধি পেয়েছে। সে কারণে সেকিং ব্যাগ ও চট এবং সুতার চাহিদা বিপুল পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় আমরা যদি চাইনিজ আধুনিক উন্নত টেকনোলজি গ্রহণ করি তাহলে উন্নত মানের পাটের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। গত দশ বছর যাবত গড়ে ৭৫ লক্ষ বেল পাট উৎপাদিত হচ্ছে। তার মধ্যে ৬১ লক্ষ বেল পাট আমাদের দেশে শিল্প কারখানা ও অন্যান্য খাতে ব্যবহার হয়। ১০-১২ লক্ষ বেল কাঁচা পাট রপ্তানি হয়। আমরা যদি একটি আধুনিক লাভজনক ও কার্যকর পাটশিল্পখাত গড়ে তুলতে চাই তাহলে আমাদের আরো ১০ লক্ষ বেল উন্নতমানের পাট উৎপাদন করতে হবে। এ জন্য পাট অধিদপ্তরকে পরিকল্পিতভাবে দুই লক্ষ হেক্টর পাট চাষের (জাত অঞ্চল) যথা কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুর, টাঙ্গাইল জেলায় যেখানে উন্নতমানের সাদা পাট সেখানে আবাদ বৃদ্ধি করতে হবে। এবং এটা নিশ্চিত করতে হবে যে পাট চাষিরা যেন লাভজনক মূল্য পেতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য অঞ্চলেও যে সকল জায়গায় উন্নতমানের পাট চাষ হয় সেখানেও উপরে উল্লিখিত সুবিধাগুলি প্রযোজ্য হবে। কারণ অন্যান্য কৃষিপণ্যের সাথে পাট চাষ যদি লাভজনক না হয় তাহলে পাট চাষ অব্যাহত থাকবে না। প্রয়োজনে ঘোষিত পাট নীতিকে সময় উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। পাট এবং পাটশিল্পই হলো শতভাগ মূল্য সংযোজনকারী একমাত্র সম্পদ যা দ্বারা আমরা জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারি।

৭৭টি পাটকলকে পরিচালনা করতে গঠিত বিজেএমসির বিদ্যমান কাঠামোকে পরিবর্তন করে ২২টি পাটকলকে দক্ষতার সাথে পরিচালনার সার্বিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। যার পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষতার সাথে আধুনিক কারখানা স্থাপন ও পরিচালনা করে বিশ্ববাজার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এই শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। মিলগুলোতে সংস্কারের সাথে সঙ্গতি রেখে ডেপুটি ম্যানজার ও ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের পদসহ অপ্রয়োজনীয় পদসমূহ বিলুপ্ত করে ব্যয় কমাতে হবে। উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বিকশিত করতে সহকারী উৎপাদন কর্মকর্তার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।

উপরে বর্ণিত তথ্যগুলি (মডেলটি) এটা স্পষ্ট করে যে, ২০১৫ সালে মজুরি কমিশন ঘোষিত বর্ধিত মজুরি বাবদ অতিরিক্ত ব্যয় সমন্বয় করে বিজেএমসি পরিচালিত পাটকলগুলিকে রক্ষা করতে বিদ্যমান যন্ত্রপাতির মেরামত নয় বরং আধুনিক যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে গড় ব্যয় হার কমানোর কৌশল গ্রহণের বিকল্প নেই। এছাড়াও শ্রমিকদের পাওনা বকেয়া মজুরি পরিশোধ করা, শ্রমিকদের কন্ট্রিবিউটরি ফান্ডের সমস্যার সমাধান, ২০১৩ সালের পর থেকে অবসর নেয়া, ছাঁটাই ও অব্যাহতি পাওয়া শ্রমিকদের সকল পাওনা পরিশোধ এবং প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে ২০১৫ সালের মজুরি কমিশনের বকেয়াসমূহ পরিশোধের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করে পাটশিল্পের স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশের সোনালী আঁশ পাটের হারানো গৌরবোজ্জ্বল অতীতকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *